যশোরের শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রুগীরা দীর্ঘ দিন মানসম্মত খাবার পাচ্ছে না

যশোরের শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভর্তি রুগীরা দীর্ঘ ৯ বছর ধরে মানসম্মত খাবার থেকে বঞ্চিত।
২০১২-২০২২ এতটা সময় পেরিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটি ২৯ শয্যা থেকে বর্তমানে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় কমপ্লেক্সের ভর্তি রুগীদের জন্য খাবারের মানের কোন উন্নতি হয়নি।

ভর্তি রুগীদের কাছ থেকে ৫ টাকার টিকিট অঘোষিত ভাবে ২০ টাকা নেয়া হলেও ভর্তি রুগীদের খাবারের মানের কোন উন্নতি হয়নি দীর্ঘ সময়ের মধ্যে। আদালতে মামলা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে নতুন ভাবে এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জটিলতা সুরাহার জন্য এদিকে কোন নজর দেয়ার সময় নেই।
ফলে ভর্তি রুগীদের খাবারের মান বাজারে সরবরাহকৃত ভোগ্যপণ্যের আর্থিক মানের তুলনায় একেবারে নিম্নমুখী হচ্ছে এমনটি দাবি করেছেন ভর্তি রুগীরা।

২০১২-২০১৩ অর্থ বছরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভর্তি রুগীদের জন্য মানসম্মত ভোগ্যপণ্য সরবরাহের জন্য দরদাতা আহ্বান করে টেন্ডার প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য বিভাগ। সকালের নাস্তায় রুগী প্রতি তৎকালিন একটি পাউরুটি যার মুল্য ছিল ১৪ টাকা ৪০ পয়সা, চিনি যার মুল্য ছিল ২ টাকা ৪০ পয়সা, একটি কলা ও একটি ডিম বরাদ্দ ছিল। দরপত্রের লিখিত তালিকা অনুযায়ী দুইবার (দুপুর ও রাতের) রুগী প্রতি খাবারের বরাদ্দ ছিল ১২ টাকা মুল্যমানের ৩শ’ গ্রাম ওজনের চাউলের ভাত, ১ টাকা ৩০ পয়সা মুল্যমানের ১০ গ্রাম ওজনের ডাল, ৪২ টাকা ৪০ পয়সা মুল্যের ১১৭ দশমিক ৮০ গ্রাম রুই বা কাতলা বা মৃগেল মাছ অথবা ১৩৬ দশমিক ৭৮ গ্রাম মুরগীর মাংস অথবা ৮৮ গ্রাম খাসী ছাগলের মাংস, ১৭০ গ্রাম সব্জি অথবা আলু।
খাবার রান্নার জন্য রুগী প্রতি ১ টাকা ৬০ পয়সা মুল্যের ১০ গ্রাম সোয়াবিন তেল, ৭০ পয়সা মুল্যের ২০ গ্রাম লবন, ৪০ পয়সা মুল্যের ১০ গ্রাম পিয়াজ, ৬০ পয়সা মুল্যের ৫ গ্রাম রসুন, ১ টাকা ৩০ পয়সা মুল্যের ৪ দশমিক ৬৫ গ্রাম ঝাল, ২ টাকা ২০ পয়সা মুল্যের ২ গ্রাম জিরা, ১ টাকা ১৫ পয়সা মুল্যের ৫ গ্রাম হলুদ এবং ১৬ টাকা মুল্যের ২শ’ গ্রাম কাঠ অর্থাৎ সবমিলিয়ে রুগীপ্রতি দুইবারের খরচ মোট ৮৪ টাকা ৬০ পয়সা ।
প্রতি সপ্তাহে সোমবার, বুধবার ও শুক্রবার মুরগীর মাংস অথবা খাসির মাংস এবং অন্যান্য দিন মাছ সরবরাহের নিয়ম থাকলেও দেশী মুরগীর মাংস বা খাসির মাংস আদৌ সরবরাহ হয়না বলে জানা যায়।
কিন্তু বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতিটি ভোগ্যপণ্যের মুল্য দিন দিন উর্ধমুখী হওয়ায় নয় বছর আগের ভোগ্যপণ্যের মুল্যমানে বর্তমান বাজারের ভোগ্যপণ্য ক্রয় করা কতটুকু দুঃসাধ্য তা শুধু ভুক্তভোগীরাই জানেন।
অথচ সরকারি নিয়ম অনুযায়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রুগী ভর্তির জন্য ৫ টাকার স্থলে এখন আদায় করা হচ্ছে ২০ টাকা।
কিন্তু ভর্তি রুগীদের নিম্নমানের খাবারের পরিবর্তনের জন্য কারো কোন দৃষ্টি নেই। চিকিৎসকদের ভাষায় একজন রুগীর জন্য ওষুধের পাশাপাশি ভালো মানের খাবার শরীরের জন্য গুরুত্ব থাকলেও দীর্ঘ ৯ বছরে কেউ কোন দিন চলমান সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামায়নি বলে মনে হয়। এ বিষয়ে শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার ইউসুফ আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন এক ঠিকাদারের আদালতে ঠুকে দেয়া মামলার জের ধরে দীর্ঘ ৯ বছর যাবত ভর্তি রুগীদের খাবারের মানের পরিবর্তন আনা সম্ভব হচ্ছে না। আদালতের মামলা সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কিছুই করার নেই।