রংপুরের পীরগঞ্জে অসহায় সুখীমাই এর মরার আগে আকুতি

বাবারে! সরকার হামাক কিছুই দিলোনা। না বয়স্ক ভাতা, না বিধবা ভাতা, না বাড়ি-ঘর। হামার কিচ্ছু নাই বাহে! মান্ষের জাগাত ছোট্ট একনা ছাপড়া ঘর করি বেটাবৌ, দুটে নাতিক নিয়া খুব কষ্টে রাত কাটাই। যখন বৃষ্টি আসে তখন সারারাত বসে প্লাস্টিকের বস্তা মাথায় দিয়ে সারা রাত কাটাতে হয়। থাকার জাগা নাই জন্নি বেটাকোনাও বৌ কোনাক ফেলেয়া নিরুদ্দেশ হছি। তোমরাগুলে দেখেন না! মোর খাবার নাই, পরনের কাপড় নাই, থাকার জাগা নাই। অনেক হতাশা আর কষ্টগাঁথা কথাগুলো বলছিলেন বয়সের ভারে ন্যুব্জ সুখীমাই।

তিনি পীরগঞ্জ উপজেলার চৈত্রকোল ইউনিয়নের চককৃষ্ণপুর আদিবাসী পল্লীর জতিন কিস্কুর স্ত্রী।প্রায় এক যুগ পূর্বে স্বামীকে হারান সুখীমাই। স্বামী মারা যাবার পর অদম্য সুখী মাই অন্যের জমিতে কৃষি শ্রম দিয়ে নির্বিঘ্নে ৩/৪ জনের সংসার চালাতন। এখন আর শরীর চলেনা। দেহের হাড় গুলো প্রায় মাংস বিহীন চামড়ার সঙ্গে মিশে গেছে। চোখেও ভালো দেখেন না। কানেও শোনেন কম। লাঠিতে ভর দিয়ে দুমুঠো খাবারের জন্য এ বাড়ি ও বাড়ি ছুটতেন তিনি। কিন্তু ক’মাস ধরে রুগ্ন দেহে আর ছুটতে পারছেন না। তাই চার দেয়াল বেষ্টিত মাটির ঘরের মেঝের এক কোনায় অনাহারে, অনাদরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ষাটোর্ধ্ব সুখী মাই। আর ঐ ছোট্র ঘরেই গাদাগাদী করে মেঝেতে খড় বিছিয়ে বসবাস করেন- সুখীমাইসহ পুত্রবধু জসনি হেমরন, নাতি সাগর কিস্কু (১২) ও সুজন কিস্কু। তিনি দাবি করেন তার বয়স ৬১/৬২ বছর। ভোটার আইডি কার্ডে তার বয়স কমিয়ে দেয়া হয়েছে।

সোমবার (১৬ মে) সকালে সরেজমিনে গিয়ে সুখীমাইয়ের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, বর্তমান তার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন পুত্রবধু জসনি হেমরন। সে কৃষি শ্রম ও অন্যের বাড়িতে কাজ কর্ম করে যা আয় করে তা দিয়েই কোন রকম খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি। শারীরিক কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে যেদিন কাজ কর্ম হয় না, সেদিন সবাইকে উপোস থাকতে হয়। তিনি জানান, জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচন এলে নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনও তার ভাগ্যে জোটেনি কোন সরকারী সাহায্য সহযোগিতা। পুত্রবধূ জসনি হেমরন বলেন, আমি কোনভাবেই কুলিয়ে উঠতে পারছিনা। শ্বাশুড়ী জায়গা-জমি না থাকলেও সরকারীভাবে ঘর-বাড়ী বরাদ্দ পেলে আমার পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া মোট ৬ শতাংশ জমিতে বাড়ি করে দু’ছেলে ও শ্বাশুড়ীসহ থাকতে পারবো।

কথোপকথনের একপর্যায়ে অসহায় সুখীমাইকে কয়েকটি টাকা হাতে গুঁজে দিতেই তিনি হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন। আকুতি ভরা কন্ঠে বলেন, বাবারে! মুই আর কয়দিন বাঁচিম, মরার আগে দু’মুঠো খাবার, এ্যানা থাকার জায়গা আর পরনেে জন্যি মোটা কাপড় ছাড়া কিছুই চাওনা বাবা-