‎রংপুরের পীরগঞ্জে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন, হুমকির মুখে করতোয়া কাঁচদহ ব্রীজ

‎রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার করতোয়া নদী থেকে বালু উত্তোলন চলমান থাকায় হুমকির মুখে পড়েছে বহুল প্রত্যোশিত ‘করতোয়া কাঁচদহ ব্রীজ’সহ কৃষি জমি ও রাস্তা ঘাট। কাঁচদহ ব্রিজ থেকে মাত্র কয়েকগজ দুরে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করছে কতিপয় বালু খেকো ব্যবসায়ী। ফলে ব্রিজের নিচ ও আশপাশের এলাকা থেকে ক্রমান্বয়ে বালু সরে গিয়ে করতোয়া কাঁচদহ ব্রিজ বেশ হুমকির মুখে পড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন অভিজ্ঞ মহল।

‎এদিকে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও পরিবহণের কারণে আবাদি জমি এবং গ্রামীণ কাঁচা পাকা-সড়ক ব্যাপক ক্ষতি সাধন হচ্ছে। উপজেলা করতোয়া নদীর কাঁচদহ ব্রীজ ও তার আশপাশের এলাকায় প্রায় ৫০টি পয়েন্ট থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে দিবারাত্রী বালু উত্তোলনের কাজ চলছে। বালু উত্তোলনের ফলে নদীর গতিপথও বদলাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে তীরবর্তী এলাকার শতশত ঘর-বাড়ি নদীগর্ভে বিলীনের শংকায় ভুক্তভোগীরা।

‎জানা গেছে, করতোয়া নদীর তীর ঘেঁষে টুকুরিয়া, বড় আলমপুর, কাবিলপুর এবং চতরা ইউনিয়নের যেসব পয়েন্ট থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে- টুকুরিয়া ইউনিয়নের পারবোয়ালমারী গ্রামে মমদেল হোসেনের সহোদর ৩ পুত্র আমিনুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন ও মনোয়ার হোসেন পৃথক ৩ টি স্থানে, কাঁচদহ ব্রীজ সংলগ্ন সাজেদুল ইসলাম দিবারাত্র বালু উত্তোলন ও বিক্রি করছে। বড় আলমপুর ইউনিয়নের শিমুলবাড়ি গ্রামে আরিফুল ও ফুল মিয়া, বানুর ঘাটে বিপ্লব মিয়াসহ কয়েকজন, হোসেনপুর গ্রামে নাজমুল ইসলাম, বাঁশপুকুরিয়া গ্রামে জাহিদ মিয়া, শালপাড়ার দক্ষিনে মৃত আব্দুল বারির ছেলে মোসাদ্দেকুল, আফসার আলীর ছেলে মাহবুবর রহমান, আনিছার, চতরা ইউনিয়নের গিলাবাড়ি গ্রামে মনারুল ইসলাম পৃথক পয়েন্টে বালু উত্তোলন করছে।

‎বালু পয়েন্টের আশ-পাশের রাস্তাগুলো এমনই বেহাল অবস্থা যে, বাইসাইকেল, ভ্যান-রিক্সাও চলাচলের একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে সাধারণ পথচারীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিরবতার কারণে অনেকটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বালু খেকো ব্যবসায়ীরা।

‎এ বিষয়ে টুকুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন- আমার বাড়ি হতে পীরগঞ্জ পর্যন্ত রাস্তায় ধুলো আর বালু। এসব রাস্তার ধুলো বালির কারণে সড়কগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এছাড়া রাস্তার দুই পাশের ঘর-বাড়ি গুলোতে ধুলো বালি ঢুকে যেমন পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, তেমনি শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়াসহ নানা রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়তে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক নারী পুরুষরা আশংকায়।

‎বোয়ালমারি গ্রামের ভুক্তভোগী দেলবর হোসেন, দুধিয়াবাড়ি গ্রামের মিজানুর রহমান ও বটপাড়ার তৌহিদুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, বিগত সরকারের আমলে প্রশাসনের ছত্রছায়ায় দলীয় লোকজন বালুর পয়েন্টগুলো নিয়ন্ত্রণ করতো। বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও অভিন্ন অবস্থা। শুধু মুখোশ পরিবর্তন হয়েছে মাত্র। নদী থেকে নির্বিচারে বালু উত্তোলন চলছেই।

‎ এদিকে নদী থেকে উত্তোলিত বালু দিনরাত মাহিন্দ্র ও ট্রলীযোগে উপজেলা সদরের প্রধান সড়ক হয়ে প্রশাসনের নাকের ডগার উপর দিয়ে পরিবহন করা হচ্ছে অবাধে। কিন্তু কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই।

‎এ ব্যাপারে পীরগঞ্জ উপজেলা সহকারী ভূমি কমিশনার তানভির আহমেদ এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, করতোয়া নদী থেকে বালু উত্তোলন সরকারিভাবে নিষেধ রয়েছে। আমাদের কাছে এ ব্যাপারে কোন অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পাওয়া গেলে যারা অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু তুলছে তাদের বিরুদ্ধে অচিরেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।