রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২জন চিকিৎসকসহ শতাধিক পদ শুন্য থাকায় চিকিৎসা সেবা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। প্রত্যহ দুর দুরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসা অধিকাংশ রোগীরাই বিনা চিকিৎসায় ফেরত যাচ্ছেন। যে ক’জন চিকিৎসক রয়েছেন, তারাও রোজ বিলম্বে এসে দুপুর গড়লেই ফিরে যাচ্ছেন।

কনসালটেন্টরা ১১ টায় এসে ১২ টার পরপরই চলে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। ফলে পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ সেবা ব্যবস্থাপনা একেবারেই হযবরল অবস্থা। যা দেখার কেউ নেই।

‎জানা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ২০১১ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। আসবাবপত্রসহ আনুষাঙ্গিক যন্ত্রপাতিও সরবরাহ করা হয়। তখন নিয়োগ দেয়া হয় একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। অথচ বর্তমানে চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ১১ জন। এক সময় এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জরুরি প্রসূতি সেবা (ইওসি) কার্যক্রমের আওতাভুক্ত হলেও এখন তা নেই। ফলে ঝুঁকি নিয়ে ৪৮ কিলোমিটার দুরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে হয় প্রসুতিদের।

‎কাগজে-কলমে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসকের ১৬টি পদের বিপরীতে দশ জন থাকলেও পীরগঞ্জে কর্মরত সাত জন। স্বাস্থ্য কর্মকর্তার জুনিয়র কনসালট্যান্ট মেডিসিন, গাইনি, শিশু, অথোর্পেডিক, কার্ডিওলজি বিশেষজ্ঞসহ ইএমও, আইএমও, এক সহকারি সার্জন ও দু’জন মেডিকেল অফিসার আছেন। তবে আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও)।

জুনিয়র কনসালট্যান্ট (সাজার্রি), অ্যানেস্থেশিয়া, ফিজিক্যাল মেডিসিন, চক্ষু, ইএনটি ও চর্ম ও যৌন বিশেষজ্ঞসহ এক সহকারি সার্জন, এ্যানেসথেটিষ্ট, এক মেডিকেল অফিসার, ডেন্টাল সার্জন, মেডিকেল অফিসার ইউনানিসহ চিকিৎসক নেই।এছাড়াও ১৬টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ৯টি মেডিকেল অফিসার পদে আছেন ৪জন ও ৭টি সহকারি সার্জনের পদে আছেন ৩জন।

‎সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, ইউনিয়ন পর্যায়ের প্রতিটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসক না থাকায় হাসপাতালে রোগীদের ভীড় বাড়ছে। আরএমও না থাকায় রায়পুর উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের সহকারি সার্জন ডাঃ তারিকুল ইসলাম মন্ডলকে এখানে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকতার্, দায়িত্বরত আরএমওসহ চারজন ছাড়া বাকি সকলে রংপুর ও বগুড়া জেলা সদর থেকে যাতায়াত করেন। পদ শুন্য থাকায় ইউনিয়ন সেবা কেন্দ্রগুলোয় চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত গ্রামের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ।

‎৫৫টি কমিউনিটি ক্লিনিকে ৫৪ জন সিএইচসিপি থাকলেও কাঙ্খিত সেবা মিলছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। ৩টি ওয়ার্ড বয়ের পদ থাকলেও আছেন ২জন। ৫জন এমএলএসএসের স্থলে কর্মরত আছেন ৩জন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মাসুদ রানা জানান, চিকিৎসক সংকটে রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।

তিনি সদ্য যোগদান করেছেন। তিনি জানান, মাঠ পযার্য়ে স্বাস্থ্য সহকারি ৫৫ পদের ৩৩টি শুন্য থাকায় রুটিন ইপিআই কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। অ্যাসিষ্ট্যান্ট মেডিকেল অফিসার ১০টি, মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট ২টি, ফামার্সিষ্ট ২টি, সহ-স্বাস্থ্য পরিদর্শক ৭টি, স্বাস্থ্য পরিদর্শক ৩টি, অফিস সহায়ক ৮টি, পরিছন্নতাকর্মী ৩টি, নিরাপত্তা প্রহরী ২টি, বাবুর্চি ২টি, আয়া ১টি, জুনিয়ার মেকানিকসহ ৯৮জনের পদ শুন্য রয়েছে।

গাইনী চিকিৎসক থাকলেও অ্যানেস্থেশিয়া না থাকায় সিজার করা যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি। অবশ্য চিকিৎসকদের কর্মস্থলে না থাকার বিষয়ে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।

‎ভূক্তভোগীরা জানান, বর্তমানে চিকিৎসক সংকট ও তুলনামুলক বেশী রোগী আসায় তাদের চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে।