"এক শিক্ষার্থীর জন্য ছয় শিক্ষক"
রংপুরে আন্ধারকোটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেহাল দশা
দিন দিন মিঠাপুকুরে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার মান নিম্নমুখী হয়ে পড়ছে। এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সঠিক মেধা বিকাশ এবং অভিভাবকরা শিক্ষার মান নিয়ে সংশয়ে পড়েছেন। কোন কোন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকচিক্য আর কোটি টাকার ভবন থাকলেও নেই কোনো শিক্ষার্থী। আবার কোথাও শিক্ষার্থী থাকলেও শিক্ষার মান উন্নয়নে পিছিয়ে আছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এমন বেহাল দশার জন্য জেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, প্রধান শিক্ষকরা বেসরকারি স্কুল, কিন্ডারগার্টেন গুলোকে দায়ী করলেও মূলত তারাও কোনো কার্যকারী পদক্ষেপ নিতে পারেনি বলে দাবি শিক্ষানুরাগীদের।
এরকম একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হচ্ছে রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নের আন্ধারকোটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। চলতি বছরে কয়েকবার বিদ্যালয়টিতে গেলেও একজনের বেশি শিক্ষার্থী চোখে পড়েনি। আর এই একজন শিক্ষার্থীকে পড়াতে সেখানে রয়েছেন প্রধান শিক্ষক সহ ৬ জন। খাতা কলম,রেজিস্ট্রারে শিক্ষার্থী থাকার কথা জানালেও বাস্তবে বিদ্যালয়টিতে কয়েকবার গিয়েও একজনের বেশি শিক্ষার্থী দেখাতে পারেননি প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম। এ প্রতিবেদক ১২ টায় গেলে প্রধাণ শিক্ষক জানাতেন আজ ১১ টায় ছুটি হয়েছে, সকাল ১১ টার সময় গেলে জানাতেন ১০ টায় ছুটি দিয়েছি।
সরেজমিনে আন্ধারকোটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরপর দুদিন গিয়ে দেখা যায়, প্রথম দিনে বিদ্যালয়ে মাত্র একজন শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়েছেন। অথচ ওই বিদ্যালয়েই দেওয়া হয়েছে অর্ধকোটি টাকার একটি ভবন। শিক্ষার্থী মোঃ মোরছালিন হোসেন (চতুর্থ) শ্রেণী ছাত্র তার কাছে জানতে চাইলে সে জানায়, প্রতিদিন একলায় আইসো মুই, আর এক জনকে নিয়া আলছিনু আর আইসে না। সেই শিক্ষার্থীর ক্লাস নিচ্ছিলেন একজন ম্যাডাম আর বাকীরা বসে খোশগল্প করছিলেন।
দ্বিতীয় দিন পূনরায় বিদ্যালয়টিতে গেলে অন্য এক শিশুর দেখা পাওয়া যায়। তবে শিশুটি কোন ক্লাসে পড়েন আর নাম কি, তা জানতে চাওয়া হলেও প্রধাণ শিক্ষক এবং ম্যাডামরা চুপ করে ছিলেন।
জানা গেছে, মিঠাপুকুর উপজেলা সদর থেকে আনুমানিক ১২-১৩ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত আন্ধার কোটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এলাকায় শিক্ষা বিস্তার,শিক্ষিত সমাজ গড়ার লক্ষে এলাকার সচেতন ও গুণী লোকের সহযোগিতায় ১৯৮৮ সালে বিদ্যালয়টি স্থাপন করা হয়। একসময় ভরপুর শিক্ষার্থী ছিল এই বিদ্যালয়ে। কিন্তু ধীরে ধীরে পড়ালেখার নিম্নমান,শিক্ষকদের দায়িত্বহীনতা, বিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকায় বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়তে থাকে কোমল শিক্ষার্থীর সংখ্যা।
করোনাভাইরাসের প্রভাবে কাটিয়ে বিদ্যালয়টি খোলা হলেও প্রধান শিক্ষকের উদাসীনতার কারণে প্রভাব পড়ে বিদ্যালয়টির ওপর। ফলে শিক্ষার্থীরা পার্শ্ববর্তী বিদ্যালয়ে এমনকি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ভর্তি হয়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, আমরা সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাই ভালো শিক্ষা অর্জনের জন্য। কিন্তু ওই বিদ্যালয়ে পড়ালেখা হয় না। যে কারণে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সন্তানরাও অন্য বিদ্যালয়ে পড়ে। আমিও বাধ্য হয়ে আমার সন্তানকে অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দিয়েছি। আরেক অভিভাবক বলেন, বিদ্যালয়ে পড়ালেখার কোনো সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের পড়ায় না। আমরা বারবার পড়ালেখা নিয়ে অভিযোগ করেছি। এমনকি সভাপতিকে বলেও কোনো ফল পাইনি। বাধ্য হয়ে ছেলেকে ভালো পড়ালেখার জন্য অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দিয়েছি।
প্রধান শিক্ষক সেরাজুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করতে শিক্ষকরা সবাই মিলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মা সমাবেশ করে বিদ্যালয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। স্থানীয় কিছু মানুষ নানাভাবে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের ভুল বুঝিয়ে আমাদের বিদ্যালয়ে আসতে দিচ্ছে না। ফলে অভিভাবকরা বিভিন্ন বিদ্যালয়ে সন্তানদের ভর্তি করে দিয়েছেন। বিদ্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর ছবি থাকলেও জাতীর পিতার ছবি টাঙানো নাই কেনো এমন প্রশ্নে! প্রধান শিক্ষক উত্তেজিত হয়ে বলে ওঠেন বিদ্যালয় আমরা গড়েছি কার ছবি রাখবো না রাখবো সেটা আমাদের বিষয়। ছাত্রছাত্রী না থাকলেও আমার কোনো সমস্যা নেই।
মিঠাপুকুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আখতারুল ইসলাম বলেন, এরকম তথ্য আমার জানা নেই এবং আমার কাছে লিখিত কোন অভিযোগ ও আসেনি। তবে এখন বিষয়টি জানতে পারলাম, আমি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন