রংপুরে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়ে ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা
রংপুরের মিঠাপুকুরে তৃতীয় শ্রেণীর এক ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়ে ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছেন। কে এই অনাগত সন্তানের বাবা? আর প্রকৃত অপরাধী কে! তা শনাক্ত হওয়ার পূর্বেই স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার যোগসাজশে রাতারাতি গোপনীয়তা রক্ষা করে মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবকের উপর দায় চাপিয়ে মসজিদের ইমাম দ্বারা বিয়ে পড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ওই এলাকায় জানাজানি হলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, মিঠাপুকুর উপজেলার ০৮ নং চেংমারী ইউনিয়নের ফরমুদের পাড়া গ্রামের মোঃ ওয়াহেদুল ইসলামের কন্যা (১২) স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়তেন। বেশ কয়েকদিন থেকে শিশুটির শারীরিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। শিশুটির শারীরিক পরিবর্তন দেখে পরিবারের লোকজন, শিশুটির সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন,শিশুটি ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। মান সম্মান এবং স্থানীয়দের ভয়ে বিষয়টি গোপন রাখে শিশুটির পরিবার।
ঘটনার দিন, শুক্রবার (১৫-সেপ্টেম্বর) রাত্রি আনুমানিক ৯ ঘটিকার সময় শিশুটির পিতা-ওয়াজেদুল ইসলাম, ৫ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ নুর হক মজনু সহ কয়েকজন একই এলাকার সাজেদুল (রাশেদুল) মিয়ার মানসিক ভারসাম্যহীন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ছেলে সাব্বির হোসেনের উপর উক্ত ঘটনার দায় চাপিয়ে বিচারের নামে তাদের একত্রিত করে ভয়ভীতি দেখিয়ে স্থানীয় একটি মসজিদের ইমামকে ডেকে নাবালিকা শিশুটির সঙ্গে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী সাব্বিরের (১৬) জোরপূর্বক বিয়ে দেন। এরপর থেকে বিষয়টি স্হানীয়রা জানতে পারেন।
শিশুটি ও তার পরিবারের অভিযোগ- ৭/৮ মাস পূর্বে শিশুটির বাবা মা বাড়িতে না থাকায় সাব্বির পাগলা শিশুটির ঘরে প্রবেশ করে এবং শিশুটিকে মুখ চেপে ধরে ধর্ষন করেন। শিশুটি এসময় খুব চিৎকার চেঁচামেচি করলেও ফাঁকা জায়গায় বাড়ি হওয়ায় বিষয়টি কেউ বুঝতে পারেনি। আর শিশুটিও বুঝতে পারেনি, এসবে তার কি হবে, তাই এমনটা হয়েছে। শিশুটির পিতার দাবি, সাব্বির পাগলা সব শিকার করেছে। এর জন্য ওই দায়ি। তাই বিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সাব্বিরের মা দুলালী বেগম জানান, আমার পাগলা ছেলেটা এ কাজ করতে পারেনা। একদিন বের হয়ে গেলে ১৫ দিন বাড়িতে আসেনা৷ তার এসব চাহিদা থাকার কথা নয়৷ নিশ্চয়ই এই ঘটনাটা অন্য কেউ ঘটিয়েছে। সেটার দায় আমার পাগল ছেলেটার উপর চাপিয়ে বিয়ে দিয়েছে। আমাদের ছেলে যেহেতু পাগল, স্বাভাবিকভাবে কেউ হয়তোবা মেয়ে দিতে চাইতোনা। তাই আমরা এ বিষয়ে বাধা দেইনি। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, প্রকৃত অপরাধীকে বাঁচাতে ওয়ার্ড সভাপতি, নুর ইসলাম মজনু, মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলেটার উপর এ দায় চাপলো! প্রকৃত অপরাধীর কাছ থেকে কেউ অনৈতিক সুবিধা নিয়ে এমনটা করে থাকতে পারে। তাদের দাবি, ঐ নেতার ভয়ে ভিকটিমের পরিবার থানায় যেতে পারেনি। আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করলে প্রকৃত অপরাধী সনাক্ত করা সম্ভব হতো।
ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি-নুর ইসলাম মজনু, সাব্বিরের সঙ্গে বিয়ের দেওয়ার কথা অস্বীকার করে জানান, সাব্বির এ ঘটনার জন্য দায়ি। আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবো। পরে যদিও তিনি স্থানীয়দের তোপের মুখে পড়ে বিয়ে দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
এ বিষয়ে মিঠাপুকুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজার রহমান জানান, এখন পর্যন্ত থানায় এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ দেয়নি। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সাব্বির পাগলা বাড়িতে না থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন