রংপুরে মরিচের বাম্পার ফলন, তবুও চাষীদের মাথায় হাত!

রংপুরের পীরগঞ্জে এবার কাঁচা মরিচের ফলন ভাল হলেও দাম কম হওয়ায় মরিচ চাষীদের মাথায় হাত পড়েছে। মরিচ উৎপাদন খরচ তো দুরের কথা, ক্ষেত থেকে মরিচ তুলে বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে যে টাকা খরচ হচ্ছে সে টাকাও উঠছেনা। ফলে মরিচ চাষীরা আবাদ করে মহাবিপাকে পড়েছেন। দাম কম হওয়ায় অনেক কৃষক ক্ষেত থেকে মরিচ তোলাই বাদ দিয়েছে। আবার কোন কোন কৃষক মরিচের গাছ তুলে ফেলে ঐ জমিতে বীজ ধান বপন করছেন। মরিচের বর্তমান বাজার দর এ অবস্থায় থাকলে মরিচ চাষীদের মোটা অংকের লোকসান গুণতে হবে।

সরেজমিনে উপজেলার বালুয়া, শানেরহাট, বিশমাইল, টুকুরিয়া, কুমেদপুর, রসুলপুর, মাদারগঞ্জ, ধাপের হাট, খেজমতপুর বাজার, শানেরহাট, বটেরহাট ও খালাশপীর হাট ঘুরে দেখা দেখা গেছে, গত দু’সপ্তাহ ধরে প্রতি মণ কাঁচা মরিচের পাইকারী মূল্য সাড়ে ৩’শ হতে সাড়ে ৪’শ টাকা। অথচ মৌসুমের শুরুতে প্রতি মণ কাঁচা মরিচের দাম ছিল ৮’শ থেকে ১২’শ টাকা। গত মৌসুমে একই মরিচ প্রতি কেজি’র দাম ছিল ২’শ থেকে ২’শ ৫০ টাকা।

বড় আলমপুর ইউনিয়নের রাজারামপুর গ্রামের কৃষক আব্দুস ছালাম মিয়া জানান, গতবার ১ বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করে ভাল টাকা পেয়েছিলাম। সেই আশায় এবার ২ বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছি, ফলনও ভাল হয়েছে কিন্তু দাম না থাকায় সে আশায় গুড়েবালি। রায়পুর ইউনিয়নের মহদিপুর গ্রামের মরিচ চাষী গোলাম মোস্তফা আক্ষেপ করে বলেন, পরিবহণ ও পরিচর্যাসহ উৎপাদন খরচ বাদেই শুধু ক্ষেত থেকে মরিচ তোলাই প্রতি কেজি ৫/৬ টাকা গুণতে হচ্ছে। হাট বাজারে পাইকারী দরে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮/১০ টাকা। চৈত্রকোল ইউনিয়নের অনন্তরামপুর গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, কাঁচা মরিচের দাম নেই, ক্ষেত রেখে লাভ কি? তাই মরিচ গাছ তুলে বীজ ধান লাগাবো। রায়পুর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামে আজিজ মিয়া জানান, কাঁচা মরিচের বর্তমান বাজার মূল্য যা, তাতে মরিচ গাছের পরিচর্যা করে কোনই লাভ নেই। টুকুরিয়া ইউনিয়নের হরিণা গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, কাঁচা মরিচের বর্তমান বাজার দর এ অবস্থায় চলতে থাকলে মরিচ চাষীদের অনেক টাকা লোকসান গুণতে হবে। তিনি মরিচ চাষীদের বাঁচাতে বাজার মনিটরিংসহ কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্ট মহলের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

সোমবার সকালে (১৪ জুন’২১) পীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাদেকুজ্জামানের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, গত মৌসুমে মরিচের দাম ভাল পাওয়াতে এবার মরিচের আবাদ অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ফলনও ভাল হয়েছে। তবে ফলন বেশী হওয়াতে মরিচের দামও কমেছে। চলতি মৌসুমে উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার কৃষক ৫’শ ৫০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষাবাদ করেছেন। গত মৌসুমে উপজেলায় সাড়ে ৩’শ হেক্টর জমিতে মরিচ আবাদ করা হয়েছিল। মরিচ চাষীদের প্রতি কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ হলো, চাষীরা তাদের উৎপাদিত কাঁচা মরিচ বীজ হিসেবে (পাকা) রেখে স্থানীয় কৃষি বিভাগে প্রদান করলে প্রতি মণ ১২’শ হতে ১৫’শ টাকা পাবেন। এ থেকে মরিচ চাষীরা অনেকটাই লোকসান থেকে রেহাই পাবেন।