রাখাইন জ্বলছে, চলছে রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞ : এইচআরডব্লিউ

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নির্মূলে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে সে দেশের নিরাপত্তা বাহিনী। জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে তাদের গ্রাম। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) মঙ্গলবার এই সম্পর্কিত স্যাটেলাইট ছবি প্রকাশ করেছে। সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, ছবিতে রাখাইন রাজ্যের অন্তত ১০টি স্থানে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের গ্রাম পুড়িয়ে দেয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও মানবাধিকার কর্মীরা দাবি করেছেন, সেসব গ্রামে সেনাবাহিনী প্রবেশ করে নিরস্ত্র রোহিঙ্গাদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করছে। বহু ঘরবাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। নারী, পুরুষ ও শিশুদের কেউ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গুলির হাত থেকে বাঁচছেন না।

খোদ মিয়ানমার সরকারই জানিয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনীর উপর আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি আক্রমণের পর শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া জঙ্গি বিরোধী অভিযানে প্রায় ১০০ মানুষ নিহত হয়েছে।

তাদের দাবি, সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের সময় চরমপন্থীরাই রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলোতে আগুন লাগিয়ে দেয়। কিন্তু পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বরাত দিয়ে এইচআরডব্লিউ জানিয়েছে, মূলত সরকারি বাহিনীই সেসব গ্রামে আগুন লাগিয়েছে এবং বিনা বিচারে রোহিঙ্গাদের হত্যা করছে।

অবশ্য এই বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের তরফে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

মঙ্গলবারের বিবৃতিতে এইচআরডব্লিউ দাবি জানিয়ে বলে, মিয়ানমার সরকারের উচিত অবিলম্বে অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও মানবাধিকার লঙ্ঘণের অভিযোগ স্বাধীনভাবে তদন্তের জন্য ওই অঞ্চলে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হোক।

স্যাটেলাইট তথ্যের বরাত দিয়ে এইচআরডব্লিউ জানায়, নতুন করে শুরু হওয়া জঙ্গি বিরোধী অভিযানের নামে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী যে অগ্নিসংযোগ করছে তাতে প্রায় ১০০ কিলোমিটার এলাকা ক্ষতির শিকার হয়েছে। তাদের মতে, ২০১৬ সালের অক্টোবরে হওয়া সেনা অভিযানের চাইতে এবারের আগুনের বিস্তৃতি অনেক বেশি। সেই সময় প্রায় দেড় হাজার বাড়ি ধ্বংস করা হয়।

মানবাধিকার সংস্থাটি সেখানকার বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী ও মিডিয়ার প্রতিবেদনের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে জানায়, এসব আগুন নিরাপত্তা বাহিনী ইচ্ছা করেই লাগিয়েছে। সংস্থাটি জানায়, নতুন স্যাটেলাইট তথ্যে যে পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে তা সত্যিই উদ্বেগজনক। দাতা সংস্থা এবং জাতিসংঘের উচিত রাখাইন রাজ্যের চলমান পরিস্থিতি বন্ধে মিয়ানমার সরকারকে বাধ্য করা।

বিবৃতিতে এইচআরডব্লিউ’র এশিয়া বিষয়ক প্রধান ফিল রবার্টসন জানান, শুধু বিদ্রোহীদের ওপর দায় চাপিয়েই মিয়ানমার সরকারের দায়িত্ব শেষ হয় না। আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা ও মানবাধিকার বিষয়ক আইন মেনে তাদেরও এমন পরিস্থিতি বন্ধের পাশাপাশি অপরাধ তদন্ত করা উচিত।

জাতিসংঘের মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস’র মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক’ও এক বিবৃতিতে বেসামরিক নাগরিক হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন। বিবৃতিতে জাতিসংঘের মহাসচিব প্রাণ বাঁচিয়ে পালিয়ে আসা নারী ও শিশুদের সহযোগিতা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

সোমবার জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা UNHCR জানিয়েছে, শুক্রবার মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংসতা শুরু হওয়ার পর গত ৩ দিনে ৩ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

২০১৬ সালের অক্টোবরে রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান শুরু হওয়ার পর প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। বর্তমানে সবমিলিয়ে বাংলাদেশে প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী অবস্থান করছেন।