রাতে গায়েব হয়ে যায় ধানের শীষের পোস্টার-ফেস্টুন
প্রতি রাতেই রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় ধানের শীষের পোস্টার, ফেস্টুন ও ব্যানার গায়েব হয়ে যায়। ভাঙচুর হয় নির্বাচনী ক্যাম্প। নতুন করে প্রচারপত্রে পড়ছে ধারালো অস্ত্রের কোপ। একই জায়গায় নৌকার প্রচারপত্র রয়েছে অক্ষত।
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, গভীর রাতে এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। কোথাও কোথাও দিনেই বেলায় ঘটছে এমন কাণ্ড। অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার না পাওয়ায় আরও বেপরোয়া তারা।
বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর পর থেকে রাজশাহী-২ (সদর), রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর), রাজশাহী-৪ (বাগমারা) ও রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে সব চেয়ে বেশি বাধা পাচ্ছেন ধানের শীষের প্রার্থীরা। এসব এলাকা থেকে প্রতিদিনই গায়েব হয়ে যাচ্ছে ধানের শীষের পোস্টার, ফেস্টুন, ব্যানারসহ বিভিন্ন প্রচার সামগ্রী।
কোথাও কোথাও প্রচারপত্র বিকৃত ও কেটে ফেলা হচ্ছে। প্রতিদিনই এসব এলাকায় ধানের শীষের নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর হচ্ছে। কর্মীদের মারধর এমনকি ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক আচরণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে।
জানা যায়, ১৪ ডিসেম্বর দুপুরে দুর্গাপুরের জয়নগর ইউনিয়ন বিএনপির কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুর চালায় নৌকার সমর্থকরা। এ সময় দুই বিএনপি নেতার দুটি মোটরসাইকেলে আগুন দেয়া হয়। পরদিন পুঠিয়ার জিউপাড়া ইউনিয়নের রাঙামাটি ও হাড়গাথি এলাকায় ধানের শীষের কার্যালয় গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। ১৬ ডিসেম্বর রাতে ওই ইউনিয়নের উজালপুরের নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর হয়। গত এক সপ্তাহে এলাকায় অন্তত ১০টি এমন ঘটনার কথা জানিয়েছেন ধানের শীষের নেতাকর্মীরা।
স্থানীয় বিএনপির অভিযোগ, রাজশাহী-৩ আসনে প্রচারণায় নেমে পদে পদে বাধার শিকার হচ্ছেন ধানের শীষের নেতাকর্মীরা। ১২ ডিসেম্বর রাতে মোহনপুরে ঘাসিগ্রাম ইউনিয়নের আতানারায়ণপুর এলাকায় ধানের শীষের নির্বাচনী কার্যালয় ভেঙে ফেলে নৌকা প্রতীকের কর্মী-সমর্থকরা। গুঁড়িয়ে দেয় ওই উপজেলার মৌগাছি ইউনিয়নে বেড়াবাড়ীর নির্বাচনী কার্যালয়। সেখানে ধানের শীষের কর্মীকে মারধর করে নৌকার কর্মীরা।
ওই রাতে মৌগাছি ইউনিয়নে বিদিরপুরে ধানের শীষের পোস্টার, ফেস্টুন ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে ফেলে নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা। পবার বড়গাছি ইউনিয়নে আনসারের মোড়েও ধানের শীষের সকল পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন কেটে ফেলে তারা। ওই ইউনিয়নের ভাড়াপুরা বাজার, হায়দারহাট, টেকাঠাপাড়া, পীরগঞ্জ ও সূর্যপুর এলাকায় ধানের শীষের ব্যানার, ফেস্টুন নামিয়ে পড়ে দেয় নৌকার নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।
এদিকে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি সত্ত্বেও রাজশাহী নগর এলাকা নিয়ে গঠিত সদর আসনেও থেমে নেই ধানের শীষের প্রচারপত্রের ওপর আগ্রাসন।
বিএনপির অভিযোগ, ১২ ডিসেম্বর রাতে নগরীর হেতেম খাঁ সবজিপাড়া রানার দোকানের সামনের ধানের শীষের ফেস্টুন ধারালো কিছু দিয়ে কেটে ফেলা হয়েছে এবং মরহুম আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব জামান ভুলুর বাড়ির সামনে ধানের শীষ প্রতীকের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে নৌকার কর্মী-সমর্থকরা।
এছাড়া নগরীল সাগরপাড়া থেকে রাণীবাজার রোড এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রাচীরের সামনের ধানের শীষের ব্যানারসমূহ কেটে ফেলে। নগরীর বন্ধগেট এলাকা থেকে রাজিব চত্বর এলাকা পর্যন্ত ধানের শীষের ব্যানার, ফেস্টুন খুলে নিয়ে গেছে নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা। ২৪নং ওয়ার্ড বাশার রোড নিশি ছাত্রাবাসের সামনে পোস্টার, ফেস্টুন কেটে ফেলে। এসব কর্মকাণ্ড চলেছে মধ্যরাতে।
রাতেই নয়, দিনেও নৌকার সমর্থকরা সরিয়ে ফেলছে ধানের শীষের প্রচারপত্র। ১৫ ডিসেম্বর সকাল ৯টার দিকে নগরীর ব্যবস্ততম নিউমার্কেট থেকে গণকপাড়া সড়ক এবং তালাইমারী মোড় এলাকা থেকে ধানের শীষের ব্যানার-ফেস্টুন খুলে নিয়ে যায়। ওই সময় কিছু ছিঁড়ে ফেলে এবং কিছু ব্যানার, ফেস্টুন টাঙানো অবস্থায় বিকৃত করে দেয় নৌকা প্রতীকের লোকজন।
১৫ ডিসেম্বর মধ্যরাতে ধানের শীষের কর্মী নগরীর চকপাড়া এলাকার আবদুল জলিলের ছেলে সাজ্জাদ হোসেনকে গ্রেফতার করে চন্দ্রিমা থানা পুলিশ। বিনা পরোয়ানায় তাকে গ্রেফতারের অভিযোগ করেছে বিএনপি।
এ বিষয়ে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুলাহ আল মাহমুদ বিএনপির বিভিন্ন কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে সেজন্য আমি তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি।
রাজশাহী-৩ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন অভিযোগ করেন, প্রতিরাতে রাজশাহীর বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকা থেকে ধানের শীষের পোস্টার, ফেস্টুন, ব্যানার সরিয়ে দিচ্ছে নৌকার কর্মীরা। নতুন করে তারা ধানের শীষের প্রচারপত্র কেটে দিচ্ছে। প্রতিনিয়ত ধানের শীষের নির্বাচনী কার্যালয় গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। নেতাকর্মীদের মারধর ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।
সোমবার রাজশাহী-২ (সদর) আসনে বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছেন ধানের শীষের প্রার্থী মিজানুর রহমান মিনু। তার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ওয়ালিউর রহমান রানা বলেন, আমাদের নির্বাচনী এলাকায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। সব গায়ের জোরে চলছে।
রাজশাহী-২ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী মিজানুর রহমান মিনু বলেন, প্রতিনিয়ত সরকার সমর্থকরা বিএনপিকে সংঘাতে জড়ানোর উসকানি দিচ্ছে। কিন্তু সহিংসতার রাজনীতি করে না বিএনপি। দলের চেয়ারপারসনের মুক্তি, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জনগণের ভোটের অধিকার আদায়ের আন্দোলন হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি আমরা। সরকারের পাতা ফাঁদে বিএনপি পা দেবে না। ব্যালটের মাধ্যমে জনগণ ক্ষমতাশীনদের এমন কর্মকাণ্ডের জবাব দেবে।
অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে রাজশাহীর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক ও নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা পারভেজ রায়হান বলেন, অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত করছে নির্বাচন কমিশন। প্রচারণায় বিধিভঙ্গের বিষয়টি দেখভালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া নির্বাচনী তদন্ত কমিটিও কাজ করছে। এখনো বড় ধরনের বিধিভঙ্গের অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন