রোগীকে দুর্গম পথে কাঁধে বয়ে নিয়ে গেলেন চিকিৎসক
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2017/11/1510812299.gif)
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2025/02/475351977_1256003665483861_2959209934144112011_n.jpg)
ভারতের ওডিশার দানা মাঝির সেই ঘটনার কথা মনে আছে? স্ত্রীর মৃত্যুর পর হাসপাতাল থেকে লাশ বাড়ি নেওয়ার আর্থিক সামর্থ্য তাঁর ছিল না। রোগীকে দুর্গম পথে কাঁধে বয়ে নিয়ে গেলেন চিকিৎসক। অগত্যা হাসপাতাল থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরের নিজ গ্রামে দানা মাঝি স্ত্রীর লাশ কাঁধে করে রওনা দিয়েছিলেন! ঘটনাটি তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল গোটা ভারতে। এবার সেই ওডিশাতেই দেখা দিলেন দানা মাঝির মতোই আরেকজন—এক ডাক্তার, যিনি খাটিয়ায় মরণাপন্ন রোগীকে নিয়ে হাঁটলেন ১০ কিলোমিটার পথ।
ডাক্তার ওমকার হোতা। নবজাতক প্রসবের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে কারণে মরণাপন্ন রোগীকে খাটিয়ায় করে হাসপাতালে নিয়ে বাঁচিয়েছেন জীবন। প্রমাণ করেছেন, পৃথিবীতে এখনো মানবতা টিকে আছে! ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এই ডাক্তারকে তুলনা করেছে উত্তমকুমারের সেই অসাধারণ সিনেমা ‘অগ্নীশ্বর’-এর চরিত্র ডাক্তার অগ্নীশ্বর মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে।
ওডিশার মালকানগিরির সারিগেতা গ্রামে গত ৩১ অক্টোবর শুভমা মার্সে নামের এক আদিবাসী নারীর প্রসববেদনা ওঠায় ডাক পড়ে স্থানীয় জনস্বাস্থ্য সেন্টারের (পিএইসসি) ডাক্তার ওমকারের। হাসপাতাল থেকে সেই গ্রামে যেতে হয় দুর্গম পথ পেরিয়ে। এমন দুরবস্থা যে সে রকম কোনো যানবাহনও চলাচল করে না। ওমকার হোতা যখন সেই রোগীর কাছে পৌঁছালেন, ততক্ষণে অনেকটা রক্তক্ষরণ হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে সেখানেই প্রসূতিকে সন্তান প্রসব করান তিনি। কিন্তু প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় রোগীর জীবন বাঁচাতে হাসপাতালে নেওয়ার বিকল্প ছিল না।
আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, নারীটির সাহায্যে কোনো প্রতিবেশী এগিয়ে আসেনি। কিন্তু আশপাশে ‘অগ্নীশ্বর’-এর মতো ডাক্তার থাকলে চিন্তা কী? নারীটিকে একটা খাটিয়ায় তুলে তাঁর স্বামীকে নিয়ে ওমকার রওনা দেন হাসপাতালের পথে। পরে ‘আউটলুক’ সাময়িকীকে ওমকার জানান, খাটিয়া কাঁধে নিয়ে বনজঙ্গলে ভর্তি দুর্গম পথ এবং নদী পেরিয়ে হাসপাতালে পৌঁছাতে তিন ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে তাঁদের। এখন সদ্যোজাত ও ওই নারীর অবস্থা স্থিতিশীল।
গহিন জঙ্গলের সেই গ্রামে বছর খানেকর মধ্যেই উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন ওমকার। গ্রামটিতে জরুরি চিকিৎসাব্যবস্থা পৌঁছানোও প্রায় অসম্ভব। মাওবাদী এলাকা হওয়ায় একটা নির্দিষ্ট পথের পর অ্যাম্বুলেন্সের যাওয়া ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ। শুধু মালকানগিরি নয়, আশপাশের মুরালিগুদা, কাপাতুতি, সিন্তাগুনাল থেকেও রোগী বহন করে হাসপাতালে এনেছেন ওমকার। ওই অঞ্চলের জনজীবনে চিকিৎসার দায়িত্ব প্রসঙ্গে তাঁর ভাষ্য, ‘এখানে ২৪ ঘণ্টাই কাজ করতে হয়। এভাবে কাউকে না কাউকে তো শুরু করতে হবে।’
মাওবাদী এলাকা হওয়ায় এসব অঞ্চলে ঝুঁকি নিয়ে কেউ ডাক্তারি করতে যেতে চান না। ওমকার জানান, ২০০৮ অথবা ২০১১ সালে এই অঞ্চলে একজন চিকিৎসক এসেছিলেন। দায়িত্ব নেওয়ার এক দিন পরই পালিয়ে যান। ৩১ বছর বয়সী ওমকার চিকিৎসাসেবায় আসার নেপথ্যেও রয়েছে আরেক গল্প। তাঁর ভাষ্য, ‘আমি ডাক্তার হয়েছি শুধু আমার মায়ের জন্য।’ হয়তো এ কারণেই তিনি অন্য রকম।
ওমকারের পরিবার তখন থাকত বালাঞ্জিরে। কৈশোর শেষ করে তিনি তখন সবে তারুণ্যের দরজায়। একদিন ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়লেন তাঁর মা। জন্ডিসে ভুগছেন। ওমকার তাঁর মাকে নিয়ে গেলেন স্থানীয় হাসপাতালে। সেখানে গিয়ে তো মা-ছেলের চক্ষু চড়কগাছ! দেখেছেন চিকিৎসকদের অবহেলা।
মায়ের আদেশে সেদিনের পর থেকে জীবনকে পাল্টে ফেলেছিলেন ওমকার। তাঁর ভাষায়, ‘মা বলেছিলেন, প্রতিজ্ঞা কর ডাক্তার হয়ে আর্তের সেবা করবি।’ মায়ের কাছে দেওয়া সেই ওয়াদা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে ওমকার। আর তাই গত ১৫ আগস্ট জেলা কালেক্টরের কাছ থেকে ওমকার পেয়েছেন ‘সেরা ডাক্তার’-এর পুরস্কার। আর মালকানগিরির সেই দৃষ্টান্তমূলক সেবার জন্য তাঁকে ‘ডেডিকেটেড সার্ভিস ইন হেলথকেয়ার’ সম্মাননা দিয়েছেন ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক।
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2024/12/469719549_122234398946008134_2936380767280646127_n.jpg)
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন