রোহিঙ্গা ফেরাতে চিঠি চালাচালি শুরু ঢাকা-মিয়ানমারের

শুরুতে হোচট খেলেও এখন বেশ তৎপর হয়েছে দুই দেশের চিঠি চালাচালি। বাংলাদেশের দেয়া প্রস্তাবের বিপরীতে নতুন শর্ত দিয়ে চিঠি দিচ্ছে মিয়ানমার। যৌথওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন নিয়ে এই চিঠি চালাচালি হয়েছে বেশ কয়েক দফায়। তবে, বাংলাদেশ আশা করছে শেষ পর্যন্ত কূটনৈতিক সাফল্য ঢাকার পক্ষেই আসবে।

সূত্র মতে, আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর জন্য আগামী ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন এবং এর কার্যপদ্ধতি ও ম্যান্ডেট নির্ধারণ করতে হবে। এজন্য একাধিক প্রস্তাব-পাল্টা প্রস্তাব বিনিময় করেছে ঢাকা ও মিয়ানমার।

বাংলাদেশ গত ২ নভেম্বর যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ সদস্যদের তালিকা হস্তান্তর করে। অপরদিকে মিয়ানমার তার তালিকা দেয় ১ ডিসেম্বর। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা এই কমিটির নেতৃত্ব দেবেন। ওই কর্মকর্তা পররাষ্ট্র সচিব বা অন্য সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা হতে পারবেন। এর উত্তরে মিয়ানমারের পক্ষ থেকেও নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একজন কর্মকর্তাকে প্রধান করে কমিটির সদস্য তালিকা দেওয়া হয়।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, ডিজিএফআই, এনএসআই, বিজিবি, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও মিয়ানমারে বাংলাদেশ মিশনের প্রতিনিধিরা ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্য হিসাবে থাকবেন।

যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের কার্যপদ্ধতি ও ম্যান্ডেট কী হবে সে বিষয়ে বাংলাদেশ ১৪ নভেম্বর প্রস্তাব দেয়। মিয়ানমার পাল্টা প্রস্তাব দেয় ৪ ডিসেম্বর। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১০ ডিসেম্বর এর ফিরতি প্রস্তাব দেওয়া হয়। এ প্রক্রিয়া কবে শেষ হবে জানতে চাইলে সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেন, যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের কার্যপদ্ধতি ও ম্যান্ডেট দ্রুত শেষ করার জন্য দুই দেশের মধ্যে বৈঠকের প্রয়োজন আছে। আমরা চাই এ বৈঠক ঢাকায় হোক।

তিনি আরও বলেন, কয়েকটি জায়গায় আমাদের মতপার্থক্য রয়েছে। এটি কমিয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর জন্য দুই পক্ষই কাজ করছে।

কোন কোন জায়গায় মতপার্থক্য আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত ২৩ নভেম্বর দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত অ্যারেঞ্জমেন্টের যত বেশি সম্ভব কমপোনেন্ট আমরা এই কার্যপদ্ধতি ও ম্যান্ডেটে সংযুক্ত করতে চাই। অন্যদিকে, মিয়ানমার চায় যত কম সম্ভব কমপোনেন্ট যুক্ত করতে।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, প্রত্যাবাসন একটি জটিল প্রক্রিয়া। বিশেষ করে যখন ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী অনেক কষ্ট করে এবং বদনাম কুড়িয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে– এত সহজে ফেরত নেওয়ার জন্য নয়।

গত ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর হামলা ও নির্যাতনের ফলে ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশের পালিয়ে আসে। এর আগে গত বছরের ৯ অক্টোবর রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন শুরু হলে প্রায় ৯০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা পালিয়ে আসে। এর আগে থেকে আরও প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে।

আগে ও পরে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা এখন দাঁড়িয়েছে দশ লাখের বেশি।