লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ভ্যাট আদায়ে পিছিয়ে এনবিআর

অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ভ্যাট খাতে ঘাটতি ৬ হাজার ৭০ কোটি টাকা। এ সময়ে ভ্যাট বাবদ আদায় হয়েছে ৬৪ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা, লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭০ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা। ভ্যাট আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার অন্যতম কারণ মামলা।

এনবিআরের হিসাব অনুযায়ী, কেবল ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স (ভ্যাট) বাবদ আটকে আছে ২৪ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা। এজন্য বিভিন্ন সময়ে মামলা হয়েছে ১০ হাজার ৩০১টি। প্রতি মাসেই বড়সংখ্যক মামলা নিষ্পত্তি হলেও নতুন করে আরও মামলা হচ্ছে। মামলাজট ঠেকাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও তা কাজে আসছে না।

আদালতের নির্ধারিত প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে স্বল্প সময়ে বিরোধ নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া বা এডিআর কিংবা এনবিআরের অধীন কাস্টম ও ভ্যাটসংক্রান্ত আপিলাত ট্রাইব্যুনাল- কোনো কিছুই মামলার জট কমাতে পারছে না। সবচেয়ে বেশি মামলা ভ্যাট সার্টিফিকেট নিষ্পত্তিতে। এ খাতে মামলা ৩ হাজার ৫৫৯টি, যার বিপরীতে সরকারের রাজস্ব আটকা ২৬৪ কোটি টাকার।

এছাড়া, চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত আপিল কমিশনারেটে ২৭ মামলার বিপরীতে আটকে আছে ৮৩ কোটি টাকা, আপিলাত ট্রাইব্যুনালে ২০২ মামলা বিপরীতে আটকে ২৪৮ কোটি টাকা, হাইকোর্ট বিভাগে ৩ হাজার ৪৮৬ মামলার বিপরীতে ১৮ হাজার ৭৮২ কোটি টাকার রাজস্ব আটকে আছে। আপিল বিভাগে ১৩৯ মামলার বিপরীতে ১ হাজার ২৭৯ কোটি টাকা, মূসক ১৪.১-এ ১ হাজার ৫৮২ মামলার বিপরীতে ১ হাজার ৫৩২ কোটি টাকা, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) ৩৫ মামলার বিপরীতে ৩৮৬ কোটি টাকা ও অন্য ১ হাজার ২৭১ মামলার বিপরীতে ২ হাজার ৬৩ কোটি টাকার রাজস্ব আটকে আছে সরকারের। সব মিলিয়ে ১০ হাজার ৩০১ মামলার বিপরীতে আটকে আছে ২৪ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব।

জানা গেছে, নব্বইয়ের দশক থেকে দেশে ভ্যাটের প্রচলন শুরু। ভ্যাট অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত করার মাধ্যমে ১৯৯১ সালের জুলাই মাস থেকে ভ্যাট চালু হয়। মূলত সে সময় থেকে ভ্যাট ফাঁকি, ভ্যাট মামলাও শুরু।

সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভ্যাটের আট খাতে নতুন মামলা হয়েছে ১৭১টি, যাতে আটকে গেছে ২৭৯ কোটি টাকার রাজস্ব। একই মাসে নিষ্পত্তি হয়েছে ১৩৯ মামলা, যেখানে ছাড় হয়েছে (এনবিআর পেয়েছে) সাড়ে ৬৮ কোটি টাকার রাজস্ব। ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ১ হাজার ৫৯০টি, এতে ছাড় হয়েছে ২ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকার রাজস্ব।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভ্যাট আদায় বাড়তে ইলেকট্রনিক ফিসকেল ডিভাইস (ইএফডি) এবং সেলস ডাটা কন্ট্রোলার (এসডিসি) মেশিন বসাতে গুরুত্ব দিচ্ছে এনবিআর। পাঁচ বছরে সারা দেশে ৩ লাখ ইএফডি মেশিন বসানো হবে। এ পরিকল্পনা সফল হলে বাড়বে রাজস্ব আহরণ। এছাড়া ভ্যাট হারের মধ্যে পার্থক্যও কমিয়ে আনা হবে। বর্তমানে খুচরায় ১৫ শতাংশ, ই-কমার্সের ওপর সাড়ে ৭ শতাংশসহ অনেক খাতেই ভিন্ন ভিন্ন ভ্যাট হার রয়েছে, যা কমিয়ে আনা হবে। পাশাপাশি ভ্যাট আদায় বাড়াতে প্রশাসনিক সংস্কারের কথা জানিয়েছে এনবিআর।

চলতি (২০২৩-২৪) অর্থবছর ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর)। তবে প্রথম ছয় মাসে (জুলাই থেকে ডিসেম্বর) রাজস্ব আদায় হয়েছে বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার মাত্র সাড়ে ৩৮ শতাংশ। এ সময়ে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৮৮ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা। আমদানি, ভ্যাট ও আয়কর— এই তিন খাতের মধ্যে কোনোটিই লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি গত ছয় মাসে।