লতিফ সিদ্দিকীর পথেই ডা. মুরাদ! হারাতে পারেন এমপি পদ
পবিত্র হজসহ ধর্মীয় নানা বিষয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে ২০১৪ সালে প্রথমে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েছিলেন লতিফ সিদ্দিকী। এখন সে পথেই হাটছেন সময়ের আলোচিত তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান।
ইতোমধ্যে প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। আওয়ামী লীগের জামালপুর জেলা কমিটির স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। দলের প্রাথমিক সদস্যপদও হারাতে যাচ্ছেন তিনি। হতে পারেন দল থেকে বহিষ্কার। তাকে দল থেকে বহিষ্কারের বিষয়ে আগামী কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এরপর বাকি থাকে সংসদ সদস্য পদ। আইনি জটিলতা থাকলেও শেষ পর্যন্ত সাংসদ পদও হারাতে পারেন তিনি। এমনটাই বলছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।
আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক গণমাধ্যমকে বলেন, সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা। এ পরিস্থিতিতে দল চাইলে কোনো সাংসদকে ছেঁটে ফেলতে ভাবতে হয় না। ফলে মুরাদ হাসানের প্রাথমিক সদস্যপদ কেড়ে নেওয়ার পর তার সাংসদ পদ থেকেও বাদ পড়া অস্বাভাবিক নয়।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, নারীদের নিয়ে অসম্মানজনক কথা কাম্য নয়। তার কাছ থেকে এ ধরণের বক্তব্য কেউ আশা করেনি। তার কারণে আমরা বিব্রত ও লজ্জিত।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, অন্যায় কাজ করে আওয়ামী লীগ থেকে কেউ ছাড় পাবে না।
দলের প্রাথমিক সদস্যপদ বাতিল কিংবা বহিষ্কৃত হবেন কিনা এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক হলে তখন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
সদস্যপদ বাতিল কিংবা বহিষ্কৃত হলে মুরাদের সংসদ সদস্য পদ থাকবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন স্পিকার।’
দল থেকে বহিষ্কার করলে এমপি পদ যাবে কিনা এ বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে বলা নেই আইনে।
তারপরও আইনজীবীরা বলছেন- বহিষ্কার হলেই পদ হারাতে হবে তাকে। আইনে বিতর্ক থাকলেও সংসদ সদস্য পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন ডা.মুরাদ।
অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান বলেন, উনি আদালত থেকে সাজা পায় নি। তবে কিন্তু তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। দল তার মন্ত্রিত্ব পদ ছিনিয়ে নিয়েছে। তার মানে সবদিক বিবেচনা করে বলা যায়, উনার সংসদ সদস্য থাকা উচিত না।
তবে এই পরিস্থিতিতে ডা. মুরাদ কী করবেন, তা জানা যায়নি। মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) থেকে তার দেখা পাননি সাংবাদিকরা। তিনি কোথায় আছেন, তাও কেউ জানেন না। ফোনেও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না।
তবে ফেসবুকে এক পোস্টে নিজের আচরণের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন মুরাদ হাসান। তিনি লিখেছেন, ‘আমি যদি কোন ভুল করে থাকি অথবা আমার কথায় মা-বোনদের মনে কষ্ট দিয়ে থাকি তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মমতাময়ী মা দেশরত্ন বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সকল সিদ্ধান্ত মেনে নিবো আজীবন।’
প্রসঙ্গত, গত সোমবার (৬ ডিসেম্বর) ফেসবুকসহ বিভিন্ন যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদের সঙ্গে চিত্রনায়িকা মাহির ফোনালাপের একটি অডিও ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে মাহির সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করেন, একই সঙ্গে তাঁকে হুমকিও দেন। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনায় চিত্রনায়ক ইমনকে মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) বিকেলে র্যাব সদর দপ্তরে ডাকা হয়। ইমনের ফোন থেকে মাহি কথা বলেছিলেন মুরাদ হাসানের সঙ্গে। ফাঁস হওয়া অডিও নিয়ে ইমনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন র্যাব কর্মকর্তারা। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা উত্তরার র্যাব সদরে থাকার পর গত রাত ১১টার দিকে তিনি বেরিয়ে আসেন।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে হেয় করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের চরিত্র হননের অভিযোগে মুরাদ হাসানের নামে শাহবাগ থানায় গতকাল মামলার আবেদন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জুলিয়াস সিজার তালুকদার।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন