লন্ডনে কেন ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তরাজ্য সফরের প্রতিবাদে লন্ডনে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করছেন। ট্রাম্প ব্রাসেলসে ন্যাটোর সম্মেলন শেষে তিন দিনের এক সফরে বৃহস্পতিবার লন্ডনে এসে পৌঁছেছেন। ট্রাম্পের এই সফর সূচি চূড়ান্ত হওয়ার পরপরই এই প্রতিবাদ বিক্ষোভের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল।
সকাল থেকেই রাস্তায় রাস্তায় এই প্রস্তুতি চোখে পড়ে, যেখানে বিক্ষোভকারীরা ব্যানার ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিভিন্ন স্থানে জড়ো হতে শুরু করেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মুসলিম ও অভিবাসনবিরোধী নীতিসহ আরো কিছু সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এই বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়। ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে বর্ণবাদী আচরণেরও। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের আটক করার পর তাদের পরিবার থেকে শিশুদেরকে বিচ্ছিন্ন করে রাখারও তীব্র সমালোচনা হচ্ছে।
বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই প্রতিবাদ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে লন্ডনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এ জন্য লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশকে সারা দেশ থেকে পুলিশ পাঠিয়ে সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ বলছে, শহরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চার হাজারেরও বেশি পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এ জন্য খরচ হবে প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ ডলার।
এই বিক্ষোভের ব্যাপারে সচেতন আছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেও। বলেছেন, এ নিয়ে তিনি মোটেও উদ্বিগ্ন নন।
ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য সানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, ‘প্রতিবাদ হবে কারণ প্রতিবাদ তো সব সময়ই হয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘কিন্তু আমার বিশ্বাস যুক্তরাজ্য, স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডের জনগণ তাকে খুব পছন্দ করেন। কারণ অভিবাসন বিষয়ে তারা আমার সাথে একমত পোষণ করেন।’
ট্রাম্প ব্রিটিশ সরকারের ‘ব্রেক্সিট পরিকল্পনার’ সমালোচনা করেছেন। বলেছেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে ব্রিটেন যদি এ ধরনের চুক্তি করে তাহলে সেটা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চুক্তির সম্ভাবনাকে নষ্ট করে দিতে পারে।
‘আমি এটা অন্যভাবে করতাম। আমি আসলে থেরেসা মে-কে বলেছিলাম, কীভাবে কী করতে হবে, কিন্তু তিনি তো আমার কথা শোনেননি।’
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই মন্তব্যের পর ডাউনিং স্ট্রিট থেকে কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে-র সাথে তার সম্পর্ক ‘খুবই জোরালো’।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প লন্ডনের মেয়র সাদিক খানেরও সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, সন্ত্রাস ও অপরাধ দমনে খান ‘জঘন্য কাজ’ (টেরিবেল জব) করছেন।
তিনি বলেছেন, ‘ভয়াবহ সবকিছু হচ্ছে। নিয়ে আসা হয়েছে অপরাধও।’
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই মন্তব্যের জবাবে সাদিক খান বলেছেন, অপরাধের জন্য অভিবাসীদের দায়ী করা অযৌক্তিক। সাদিক খান বলেন, ‘এটা খুব মজার ব্যাপার যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অন্যান্য শহরের মেয়রদের সমালোচনা করেন না।’
পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মেয়র সাদিক খানের সাথে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরোধ শুরু থেকেই। যুক্তরাষ্ট্রে কয়েকটি মুসলিম দেশের নাগরিকদের প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির পর খান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কড়া সমালোচনা করেছিলেন। তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট মেয়র সাদিক খানকে আক্রমণ করেছিলেন।
ট্রাম্পবিরোধী এই প্রতিবাদে সায় আছে সাদিক খানেরও। তবে তিনি প্রতিবাদকারীদের শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিক্ষোভ করার আহবান জানিয়েছেন।
প্রতিবাদের অংশ হিসেবে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কাছে ট্রাম্পের মতো দেখতে সাত মিটার লম্বা একটি বেলুন উড়ানো হয়েছে। ট্রাম্পের মুখের আদলে ক্রন্দনরত শিশুর আকৃতিতে এই বেলুনটি তৈরি করা হয়েছে।
এই বেলুন উড়াতে অনুমতি দেওয়ায় অনেকে সাদিক খানেরও সমালোচনা করেছেন। জবাবে খান বলেছেন, সবারই মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে।
লন্ডনের বাইরে ডেভন, এডিনবরা, বেলফাস্ট, ম্যানচেস্টার, লিডস, বেলফাস্টসহ আরো কয়েকটি শহরেও ট্রাম্পবিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ হওয়ার কথা রয়েছে।
তবে এই সফরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প লন্ডনে খুব বেশি সময় কাটাবেন না। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ও রানী এলিজাবেথের সাথে সাক্ষাৎ শেষে তার স্কটল্যান্ডে চলে যাওয়ার কথা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সেখানেও তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীরা বিক্ষোভ করতে পারেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন