লাঞ্ছিত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের পরিবার গৃহবন্দি!লেখাপড়া বন্ধ মেয়েদের
নড়াইলে ১৭ দিন আত্মগোপনে লাঞ্ছিত অধ্যক্ষ: গৃহবন্দি পরিবার লেখাপড়া বন্ধ মেয়েদের।
টিনশেড বাড়ির চারদিক নিস্তব্ধ। বেশ কয়েকবার ‘কেউ আছেন, কেউ আছেন’ বলে উচ্চস্বরে ডাকলেও ভেতর থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। এগিয়ে আসেননি কেউ। কিছুক্ষণ পর একজন বর্ষীয়ান নারী এলেন। আমাদের পরিচয় জানার পর বাড়ির উঠানে বসতে দেন।
এটিই নড়াইল সদরের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের বাড়ি। ৩০ বছর ধরে তিনি ওই কলেজে দর্শন বিষয়ে শিক্ষকতা করেন। যার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে কলেজের ছাত্র ও স্থানীয়রা গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করেছে। এ ঘটনার পর থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সদর উপজেলার সিঙ্গাশোলপুর ইউনিয়নের বড়কুলা গ্রামে তার বাড়িতে পুলিশ পাহারা।
১৮ জুনের ঘটনার পর থেকে আর বাড়িতে ফেরেননি অধ্যক্ষ। তার স্ত্রী জানিয়েছেন, তার স্বামী ও পরিবারের লোকজন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের স্ত্রী সোনালী দাস বলেন, আমার স্বামী ষড়যন্ত্রের শিকার। তিনি ওই কলেজে থাকুক তা অনেকে চান না। ঘটনার সময় কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সদস্যদের জানিয়েছিলেন, আইসিকে (মির্জাপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ) জানিয়েছিলেন এবং কলেজের অন্যান্য শিক্ষক ও স্থানীয় অনেকের সহযোগিতা চেয়েছিলেন আমার স্বামী। এরপরও সবার উপস্থিতিতে এত বড় ঘটনা ঘটল। তাকে আপমান-অপদস্থ করা হলো।
তিনি বলেন, তিনি কোথায় আছেন আমরা জানি না। ঘটনার পর থেকে তিনি আর বাড়ি ফেরেনি। তার সঙ্গে যোগাযোগ নেই, করাও সম্ভব হচ্ছে না। কারণ তার কাছে কোনো মুঠোফোন নেই। অন্যের ফোন দিয়ে কয়েকবার সামান্য কথা হয়েছে। তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। আমাদের নিরাপত্তা নিয়েও ভয়ে আছি। আমার স্বামী এ ঘটনার সঙ্গে আদৌ জড়িত নয়। তাকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে।
মেয়ে শ্যামা রাণী বিশ্বাস বলেন, আমাদের কোনো নিরাপত্তাই নেই বললেই চলে। আমরা খুবই ভয়ে আছি। বাবা এখন কোথায় আছেন, আমরা সঠিক জানি না। আমাদের তিন বোনেরই পড়াশোনায় সমস্যা হচ্ছে। মেজো বোন এসএসসি পরীক্ষার্থী। সে প্রাইভেট পড়তে যেতে পারছে না। ছোটরাও পড়াশোনার সমস্যা হচ্ছে। বাবার সঙ্গে যে অন্যয় হয়েছে, এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি। অন্যায় না করেও তিনি অপমান-অপদস্থ হয়েছেন। এখন নিরাপত্তার অভাবে আমরা ঘরের বাইরে যেতে পারছি না।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের একটি আবেগ ঘন পোস্ট ভেসে বেড়াচ্ছে। এতে তিনি বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, ৩০ বছর ধরে আমি এই কলেজে শিক্ষকতা করি। ছাত্ররা আমার প্রাণ, স্থানীয়রাও আমাকে ভালোবাসত। তবু আমার সঙ্গে যা ঘটে গেল, এরপর এই মুখ নিয়ে কী করে আমি কলেজে যাব। ওই পোস্টে চূড়ান্ত হেনস্তার বর্ণনা দিয়ে স্বপন কুমার বলেন, পুলিশ আমাকে কলেজ কক্ষ থেকে বের করে আনে। তখন দুই পাশে শত শত পুলিশ ছিল।
এর মধ্যেই স্থানীয়রা আমাকে পুলিশের সামনেই জুতার মালা পরিয়ে দিল। আমাকে পুলিশ ভ্যানের কাছে নেওয়ার সময় পেছন থেকে অনেকে আঘাত করেন। আমি মাটিতে পড়ে যাওয়ায় পায়ের কিছু জায়গায় কেটে যায়। তখন অনুভব করি পেছন থেকে কেউ আমার মাথায় আঘাত করছে।
সূত্র জানায়, প্রকৃতপক্ষে মাসখানেক আগে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে পাঁচজন কর্মচারী নিয়োগের চেষ্টা করেছিল কলেজের প্রভাবশালী একটি চক্র। এতে বাধা দেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস। এরপর থেকেই চক্রটির তোপের মুখে আছেন তিনি। নড়াইলে গৃহবন্দি পরিবার লেখাপড়া বন্ধ মেয়েদের যা ঘটে গেল, এরপর এই মুখ নিয়ে কী করে কলেজে যাব-ফেসবুকে অধ্যক্ষ আমার স্বামী ষড়যন্ত্রের শিকার স্ত্রী। বাবার সঙ্গে যে অন্যায় হয়েছে, এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি: মেয়ে। ১৭ দিন আত্মগোপনে লাঞ্ছিত অধ্যক্ষ।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন