লাবণ্যের মৃত্যু : উবার-কাভার্ডভ্যান দুই চালকই ছিল বেপরোয়া

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ফাহমিদা হক লাবণ্য সড়কে প্রাণ হারানোর পেছনে দায়ী দুই চালক। লাবণ্যকে বহনকারী অ্যাপসভিত্তিক পরিবহন সেবা উবার মোটরসাইকেল এবং কাভার্ডভ্যান উভয়ের চালক ছিলেন বেপরোয়া। তাদের পাল্লাপাল্লির কারণেই সড়কে প্রাণ হারাতে হয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী লাবণ্যকে।

কাভার্ডভ্যান চালক আনিসুর রহমান এবং উবার চালক সুমনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন সড়কে পাল্লাপাল্লির কথা।

রবিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান এই তথ্য।

বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ঘটনার পর থেকে লাবণ্যকে বহনকারী মোটরসাইকেল চালককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তার মোবাইলও বন্ধ ছিল। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে তিনি পালিয়ে যান। গত ২৪ এপ্রিল দিবাগত রাত দেড়টার দিকে মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিংয়ের ২ নম্বর সড়কের ২৫ নম্বর বাসা থেকে সুমনকে আটক করে পুলিশ। কারণ সুমনই ছিল ঘটনার প্রধানতম সাক্ষী।

পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, লাবণ্যের মৃত্যুর পর আমরা প্রথম সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা করি। কিন্তু কোনো একটি ক্যামেরায় কাভার্ডভ্যানটি ক্লিয়ার দেখা যাচ্ছিল না। তবে আমরা তথ্য প্রমাণে নিশ্চিত হয়েছিলাম যে, লাবণ্যকে চাপা দেয়া কাভার্ডভ্যানটি পরিস্থিতি বুঝে রুট পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রের সামনে দিয়ে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় চলে যায়।

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পেছনের একটি সিসি টিভি ক্যামেরায় আমরা ওই কাভার্ডভ্যানটি শনাক্ত করি। রেজিস্ট্রেশন নম্বর নিশ্চিত হতে না পারলেও কাভার্ডভ্যানের পেছনে লেখা ছিল ইনফোর্ট। এরপর আমরা প্রথমে তেজগাঁও ইনফোর্টের সাব অফিসে খোঁজ করি। এরপর মূল হেড অফিস আশুলিয়া বাইশমাইল এলাকায় অভিযান চালিয়ে কাভার্ডভ্যান চালক আনিসুরকে আটক করা হয়। পরে দুই চালককে আলাদা আলাদা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলেন, লাবণ্যের উবারে রিকোয়েস্টের পর চালক সুমন তার শ্যামলীর বাসা থেকে উঠিয়ে গন্তব্যে রওনা দেন। মোটরসাইকেলটি শুরু থেকেই বেপরোয়া গতিতে চালাচ্ছিলেন সুমন। শেরেবাংলা হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সামনে আসার পর পেছন থেকে আসা আরও বেশি বেপরোয়া কাভার্ডভ্যানটি ধাক্কা দিলে লাবণ্য পড়ে যান। লাবণ্যকে চাপা দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায় কাভার্ডভ্যানটি। এরপর পথচারী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

পুলিশের উপকমিশনার বলেন, ওই ঘটনায় করা মামলায় কাভার্ডভ্যান চালক আনিসুরকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হবে। ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা নিশ্চিতে উবার মোটর চালক সুমনকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার ওয়াহিদুল ইসলাম, শিল্পাঞ্চল জোনের অতিরিক্ত উপকমিশান হাফিজ আল ফারুক, শেরেবাংলানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানে আলম মুন্সীসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।