লোকসানের মুখে অ্যামাজন-উবার-নেটফ্লিক্সের মতো প্রতিষ্ঠান
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘স্ন্যাপে’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী ইভান স্পিগেল একটি চিঠিতে লিখেছিলেন- প্রতিষ্ঠানটি ২০২২ সালের নতুন অর্থনৈতিক বাস্তবতার কাছে অসহায় অনুভব করছে। তিনি হয়তো ওই চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের সমগ্র প্রযুক্তিখাতের বিপর্যস্ত অবস্থার কথা ইঙ্গিত করেছিলেন।
অনেকের মতে, বহু বছর পৃথিবীজুড়ে একচেটিয়া কর্তৃত্ব ধরে রাখার পর মার্কিন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো বর্তমানে লোকসান, ব্যাপক কাটছাঁট ও সংশোধনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পরিসংখ্যান প্রদানকারী সংস্থা ন্যাসদাক বলছে, গত এক বছরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৩০ শতাংশ ইন্টারনেটনির্ভর সেবা প্রতিষ্ঠান বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। ডৌ জনস এভারেজের তথ্য অনুযায়ী, তুলনামূলক দুর্বল প্রাযুক্তিক শক্তি নিয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার দাম ১০ শতাংশেরও নিচে নেমে এসেছে।
এদিকে, ক্রাঞ্চবেজের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো এ বছর ৪৫ হাজারেরও বেশি কর্মীকে ছাঁটাই করেছে। এমন অবস্থার পেছনের কারণ হিসেবে বৈশ্বিক অর্থনীতির টালমাটাল পরিস্থিতিকে দায়ী করা হচ্ছে।
বলা হচ্ছে, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির কারণে অধিকাংশ মানুষই এখন হিসাব করে খরচ করছেন। অন্যদিকে, অধিকাংশ ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও সীমাবদ্ধ সেবা দিচ্ছে। এতেই সামগ্রিকভাবে কমেছে প্রযুক্তির ব্যবহার ও লম্বা সময়ের জন্য ইন্টারনেটভিত্তিক সেবা নেওয়ার প্রবণতা।
অনেকের মতে, বিশ্বের বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় তুলনামূলক অনেক হলেও, বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের হাত তারা ছাড় পাচ্ছে না। গত এক বছরে অ্যালফাবেট, আমাজন, অ্যাপল ও মাইক্রোসটের মতো টেক জায়ান্টরা একত্রে ২ ট্রিলিয়ন ডলার হারিয়েছে।
২০০১ সালের যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে প্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশাল উত্থানের পর তিন ধরনের ব্যবসায়িক মডেল গড়ে ওঠে। প্রথমত, অ্যাপসভিত্তিক পরিবহন সেবা। দ্বিতীয়ত, অনলাইনভিত্তিক বিনোদন ব্যবস্থা। তৃতীয়ত, ব্যবহারকারীদের মাধ্যমে নিজেদের লক্ষ্যযুক্ত বিজ্ঞাপন প্রচার করা।
গত কয়ক বছরে উবার ও ডোরক্যাশ, নেটফ্লিক্স ও স্পটিফাই এবং স্ন্যাপ ও মেটার প্রতিষ্ঠানগুলো ওই ব্যবসায়িক মডেলগুলোর ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কয়েক বছরে ভালো ব্যবসা করলেও, গত এক বছরে তারা তাদের বাজার মূলধনের দুই-তৃতীয়াংশ হারিয়েছে।
আশঙ্কা করা হচ্ছে, পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। রাইডশেয়ারিংয়ে বিশ্বব্যাপী শীর্ষস্থানীয় হওয়া সত্ত্বেও, উবার তার মূল নগদ প্রবাহ থেকে আরও এক চতুর্থাংশ হারাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি ১৩ বছরে ২৫০ কোটি ডলার হারিয়েছে, যা এটির বর্তমান বাজারমূল্যের প্রায় অর্ধেকের সমান।
খাদ্য সরবরাহে শীর্ষে থাকা ডোরড্যাশও লোকসানকারীদের তালিকায় রয়েছে। অন্যদিকে, স্বাভাবিকভাবে আয় বাড়লেও স্পটিফাই ও স্ন্যাপও এ তালিকায় রয়েছে।
১৯৯০ সালে স্বল্প পরিসরে যাত্রা শুরু করলেও ২০০৭ সাল থেকে অনলাইন বিনোদন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যাপক প্রসার লাভ করে নেটফ্লিক্স। গত ১০ বছরের মধ্যে নেটফ্লিক্স লাভের চেয়ে বেশি গ্রাহক হারিয়েছে। এর ফলে তাদের শেয়ারও ২০ শতাংশ কমেছে। অন্যদিকে, মেটার বার্ষিক আয় পরপর দুই প্রান্তিকে কমেছে।
আপাত দৃষ্টিতে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যেমন বিস্তর তফাৎ রয়েছে, তেমনি তাদের সমস্যাগুলোও স্বতন্ত্র। কিন্তু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানগুলো নেটওয়ার্ক প্রভাবে ভুল বিশ্বাস, ব্যবসায় প্রবেশের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত অর্থপূর্ণ বাধা না থাকা ও অন্য কোনো প্ল্যাটফর্মের ওপর নির্ভরশীল থাকা- এ তিন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
ব্যবসায় প্রবেশের ক্ষেত্রে অর্থপূর্ণ বাধা থাকলে উবারের মতো পরিবহন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো করবে। নেটওয়ার্ক প্রভাব শক্তিশালী হলে অনলাইন বিনোদন মাধ্যমগুলোর ব্যবসা ভালো হবে।
তাছাড়া টিকে থাকতে হলে অ্যাপসভিত্তিক এসব প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট কোনো মোবাইল ফোন কোম্পানি বা অন্য কোনো অ্যাপসের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে, না হলে ওই তিনটির যেকোনো একটি কারণে তাদের পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। সূত্র: দ্য ইকোনমিস্
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন