লোকসানে যশোরের রাজগঞ্জের পাট চাষিরা
যশোরের মনিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জে চলতি মৌসুমে পাটের চাষ করে লোকসানের মুখে পড়েছেন কৃষকরা। বাজারে পাটের যে দর, তাতে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। গত দুই মৌসুমে পাটের ভালো দাম পেলেও, এবার কাংখিত দাম না পেয়ে দুশ্চিন্তায় রাজগঞ্জের চাষিরা। পাট বিক্রি করে খরচের টাকায় উঠে আসছে না।
তাই পাটের দাম বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন চাষিরা। রাজগঞ্জে এলাকার একাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে— পাট চাষে গত বছরের তুলনায় এবার খরচ বেড়েছে। মজুরির ব্যয়, সার, কীটনাশক ও বীজসহ চাষাবাদের খরচ বেড়েছে। সব মিলিয়ে প্রতি বিঘা পাটের উৎপাদন খরচ প্রায় ১৫ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় পাট উৎপাদন হচ্ছে ৫ থেকে ৬ মণ। এক মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকায়। এতে প্রতি বিঘা পাট চাষে লোকসান হচ্ছে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। বাজারে পাটের দাম পড়তির দিকে। গত বছর এ সময় পাট ২ হাজার ৫০০ টাকা প্রতিমণ ছিলো। এক বছরের ব্যবধানে পাটের দাম প্রতিমণে প্রায় এক হাজার টাকা কমেছে। এতে লোকসানে পড়েছেন চাষিরা। হানুয়ার গ্রামের কৃষক সবুজ হোসেন বলেন— আমার এক বিঘা জমিতে পাটের বীজ, সার, কীটনাশক, মজুরির ব্যয়, লিজ খরচ ও পুকুর ভাড়া দিয়ে মোট খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। পাট উৎপাদন হয়েছে ৬ মণ। ১৬০০ টাকা প্রতিমণ দরে ৬ মণ পাট বিক্রি করেছি।
এতে আমার প্রায় ৬ হাজার টাকা লোকসান। গত বছরের তুলনায় পাটের দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। আমার মতো সকল পাট চাষির লোকসান হচ্ছে। পাটের দাম বৃদ্ধির দাবি জানাচ্ছি। তিনি বলেন— যে ফসলে লোকসান, সেই ফসল উৎপাদন বন্ধ করে দিবে কৃষক। একই এলাকার কয়েকজন পাট চাষি বলেন— পাট চাষ করে আমাদের পোষাচ্ছে না। পাটের দাম গত মৌসুমের দামের অর্ধেক। সকল পাট চাষির লোকসান হচ্ছে। বাজারে ১৫০০ থেকে ১৭০০ টাকা প্রতিমণ পাট বিক্রি হচ্ছে। এবার পাটের চাহিদাও কম। ব্যবসায়ীরা পাটের প্রতি তেমন আগ্রহী না। পাট চাষিদের প্রতি সরকার নজর দিক, দাম বৃদ্ধি করে দিক। এভাবে লোকসান হতে থাকলে, আগামীতে চাষিরা পাট চাষ করা বন্ধ করে দিবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজগঞ্জের এক পাট ব্যবসায়ী বলেন— গত বছরে কেনা পাট এখনো গোডাউনে ভরা রয়েছে। অনেক ব্যবসায়ী গত বছরের পাট বিক্রি করতে পারেনি। এজন্য এ বছর ঝুঁকি নিচ্ছে না ব্যবসায়ীরা। পাট চাষি ও ব্যবসায়ীরা উভয়েই বিপাকে পড়েছে। কৃষকদের লোকসান হচ্ছে, খরচের টাকাও তুলতে পারছে না তারা। গত বছর এ সময় পাটের দাম ছিলো প্রতিমণ ২৫০০ টাকা, এ বছর প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।
রাজগঞ্জ এলাকার পাট চাষি মোশাররফ হোসেন বলেন— বর্তমান আবহাওয়া অনুকুলে না থাকার কারনে পাট চাষ করে বিভিন্ন সমস্যার সম্মখিন হচ্ছি। খালে, বিলে পানি না থাকার কারনে পাট সময় মতো পানিতে জাগ দিতে পারিনা। অনেক পাট মাঠেই শুকিয়ে যাচ্ছে। এখনো জাগ দিতে পারেনি চাষিরা। এছাড়াও বিভিন্ন সমস্যা আছে। স্থানীয় উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা ভরিরথ চন্দ্র বলেন— পাট চাষের বিষয়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে নতুন জাতের বীজ, সার, প্রণোদনা ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা করা হচ্ছে। আমরা কৃষকদের পাশে থেকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন