শতাধিক কেন্দ্রে আবার ভোট চান বিএনপির প্রার্থী

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ‘ভোট ডাকাতির’ অভিযোগ এনে একশরও বেশি কেন্দ্রের ফলাফল বাতিল করে নতুন করে ভোট নেয়ার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় খুলনায় দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এই দাবি করেন ধানের শীষের প্রার্থী।

মঞ্জু যখন এই সংবাদ সম্মেলন করছিলেন, তখন ভোটের ফলাফল আসতে শুরু করেছে। আর প্রথম থেকেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেকের চেয়ে পিছিয়ে থাকেন মঞ্জু। যত সময় যেতে থাকে, ততই বাড়ছে ব্যবধান।’

মঞ্জু এর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যে ফলাফল আসছে এটা কাঙ্ক্ষিত ফলাফল না। খু্লনাবাসী ভোট প্রয়োগ করতে চেয়েছিল। কিন্তু সেই সুযোগ ধুলিস্যাৎ হয়ে গেছে আওয়ামী লীগের ভোট ডাকাতির কাছে।’

সকাল আটটা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত নগরীর ২৮৯টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হয়। দিনভর ছয়-সাতটি কেন্দ্রে জালভোটসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এসেছে গণমাধ্যমে। আর প্রতিটিতেই ব্যবস্থা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা হিসেবে কিছু কেন্দ্রে কয়েকটি ভোট স্থগিত করে কিছু ব্যালট বাতিল করা হয়। আর শেষ পর্যন্ত তিনটি কেন্দ্র স্থগিতও করা হয়।

রিটার্নিং কর্মকর্তা ইউনুচ আলী কয়েকটি কেন্দ্রে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া ভোট সুষ্ঠু হয়েছে বলে জানিয়েছেন।

আর আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক বলেছেন, যেসব কেন্দ্রে গোলযোগ হয়েছে সেগুলো না হলে ভালো হতো। কিন্তু অল্প কিছু ঘটনার পরেই নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে।

তবে বিএনপির প্রার্থী মঞ্জু সকাল পৌনে নয়টায় ভোট দিয়েই প্রথমে ২৫টি এবং পরে ৩০টি কেন্দ্রে এজেন্ট বের করে দেয়ার অভিযোগ আনেন। অবশ্য একাধিক কেন্দ্রে গিয়ে জানা গেছে, বিএনপির কোনো এজেন্ট সেখানে যাননি।

আবার ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির মুখপাত্র রুহুল কবির রিজভী আরও একটু বাড়িয়ে ৪০টি কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেয়ার অভিযোগ আনেন।

দুপুরে খুলনায় মঞ্জু দাবি করেন, ভোটের নামে প্রসহন হচ্ছে। এটার দরকার ছিল না। কারচুপি হলে ভোটের ফলাফল খুলনাবাসী মেনে নেবে না বলেও সতর্ক করেন তিনি।

দুপুরের পর ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে রিজভী ২৬টি কেন্দ্রে কারচুপির অভিযোগ আনেন।

তবে ভোট শেষে সন্ধ্যায় আগে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা প্রায় সব কেন্দ্রেই প্রভাব বিস্তার আর দেড়শরও বেশি কেন্দ্রে কারচুপির অভিযোগ আনেন।

পরে মঞ্জু খুলনায় সংবাদ সম্মেলন করে শতাধিক কেন্দ্রের কথা জানান। বলেন, ‘এখন পর্যন্ত প্রায় শতাধিক কেন্দ্রে ভোট ডাকাতি, এজেন্টদের বের দেয়ার সংবাদ পেয়েছি। আমরা বাকি তথ্য সংগ্রহ করছি। সব তথ্য পাওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে বক্তব্য তুলে ধরা হবে।’

‘আমরা দাবি করব এসব কেন্দ্রের ফলাফল বাতিল করে পুনরায় ভোটগ্রহণের।’

মঞ্জু বলেন, ‘আজ যে ভোট ডাকাতির চিত্র খু্লনাবাসী এটা অগ্রহণযোগ্য। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ হয়ে গেছে।’

‘নির্বাচন কমিশন কালো অধ্যায়ের সূচনা করলো। নির্বাচনকে কালিমালিপ্ত করলো ইসি। এর মাধ্যমে অংশগ্রহণমূলক আগামী জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাবনা নষ্ট করল।’

‘আজকে খুলনায় যে ধরনের নির্বাচন হলো তাতে জনগণের ভোট দেয়ার স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে যাবে।’

বিএনপির প্রার্থী বলেন, ‘গণগ্রেপ্তার এবং কারচুপির মধ্য দিয়ে নির্বাচন শেষ হলো। আমাদের ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বাধা দেয়া হয়েছে, পোলিং এজেন্টকে বের করে দিয়েছে।’

‘আমি শুরু থেকে বলে আসছি ভোটের মাঠ ছেড়ে যাব না। কারণ আমরা জাতিকে সরকারি দল এবং নির্বাচন কমিশনের অপকর্মের কথা জানাতে চেয়েছি।’

খুলনাবাসীকে ভোট দেয়ার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে মঞ্জু বলেন, ‘এত ভোট ডাকাতির পরেও তারা যে আমাদের ভোট দিয়েছেন সেজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই।’