শিক্ষার্থীকে চাপা দেওয়া সেই সুপ্রভাত বাসের মালিক গ্রেফতার

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র আবরারকে চাপা দেয়া সুপ্রভাত বাসের মালিক ননী গোপাল সরকারকে শুক্রবার (৫ এপ্রিল) ভোরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আবরারের আগে শাহজাদপুরের বাশঁবাড়ি এলাকায় কলেজ ছাত্রী সিনথিয়াকে চাপা দেয়ার পর ননী গোপালের নির্দেশেই বাসটি নিয়ে কন্ডাক্টর ইব্রাহিম পালানোর সময় পিষ্ট করে আবরারকে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, এবার সিনথিয়া হত্যাচেষ্টার ঘটনায় সড়ক পরিবহন আইনের ৩০৪ ধারায় মামলা হবে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে।

১৮ মার্চ সকাল পৌনে সাতটার দিকে শাহজাদপুরের বাশঁবাড়ি এলাকায় ফুটপাতে বাসের অপেক্ষায় ছিলো মিরপুর আইডিয়াল কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সিনথিয়া সুলতানা মুক্তা। হঠাৎ একটি বাসের ধাক্কায় লুটিয়ে পড়ে সিনথিয়া। পথচারীরা বাসায় খবর দিলে স্বজনরা দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যায় তাকে।

সুপ্রভাত পরিবহনের বাসটি একই কোম্পানির আরেকটি বাসকে অতিক্রম করতে গিয়েই চাপা দেয় সিনথিয়াকে। তিন হাসপাতাল ঘুরে এখন তিনি বাসায় শয্যাশায়ী।

সিনথিয়া সুলতানা মুক্তা জানান, আমার কলেজ মিরপুর ১০-এ। আমি ১০ নম্বরে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। তখন হঠাৎ করেই বাসটি আমাকে ধাক্কা দেয়। আমার সবকিছু অন্ধকার হয়ে যায়।

এদিকে পুলিশ বলছে, সিনথিয়াকে চাপা দেয়ার পর ট্রাফিক পুলিশ চালক সিরাজকে আটক করেন। বাসটি সরিয়ে রাস্তার পাশে নেয়ার নির্দেশ দেন কন্ডাক্টর ইব্রাহিমকে।

সে সময় মালিক ননী গোপালের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ইব্রাহিম। ইব্রাহিমকে বাস নিয়ে সরে পড়ার নির্দেশ দেন ননী গোপাল। আর তা করার সময়ই বাসটি চাপা দেয় আবরারকে।

ননী গোপাল জানান, তার চারটি বাস রয়েছে। তবে বাসটির রুট পারমিট ঢাকা-ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হলেও ঢাকা-গাজীপুর রুটে কেন চলছিলো সেই প্রশ্নের উত্তর নেই তার কাছে। সাড়ে আট লাখ টাকায় বাসটি কেনার আড়াই বছর পেরিয়ে গেলেও রেজিস্ট্রেশন কেন করেননি সেটাও এক ধোঁয়াশা।

নদী গোপাল বলেন, যখন বাসটি কিনছি তখন নিয়ম-কানুন এতো কঠোর ছিল না আর বিষয়টা আমি জানতাম না। তাই কাগজপত্র করা হয়নি।

এদিকে পুলিশ বলছে, ননী গোপালের নির্দেশনা মানতে গিয়েই আবরারকে চাপা দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। তাই চালক ও কন্ডাক্টরের পাশাপাশি দায় রয়েছে তারও।

পুলিশের গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, উনি তার ড্রাইভার ও কন্ডাক্টরকে উস্কে দিয়েছেন গাড়িটা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। যাদের রাস্তায় গাড়ি চালানোর পারমিট বা লাইসেন্স কোনোটাই নেই।

তিনি বলেন, পরবর্তীতে যে হত্যাকাণ্ডটা হয়েছে (আবরার) সেটা এই মালিকের প্ররোচনায় হয়েছে। ৩০৪ ধারা, যার শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এই অপরাধে তাতে সেই দায়ভার বহন করতে হবে।

এই ঘটনায় এরই মধ্যে বাসের চালক সিরাজ, কন্ডাক্টর ইব্রাহিম ও হেলপার ইয়াসিন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।