শীতে জবুথুবু পাবনাবাসী

শীতে কাঁপছে পাবনাবাসী। পদ্মা-যমুনা বেষ্টিত পাবনা জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। কনকনে হাঁড় কাঁপানো বাতাস আর ঘন কুয়াশায় জেঁকে বসেছে শীত। পৌষের শেষভাগে শীতের তীব্রতা ও হিমেল হাওয়ার সঙ্গে ঘন কুয়াশায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। একইসঙ্গে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ।

নতুন বছরের প্রথম থেকেই শীতে জবুথুবু দেশের বিভিন্ন জনপদ। ধীরে ধীরে নামছে তাপমাত্রার পারদ। দেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ডও হয়েছে সোমবার। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ১৯৬৮ সালের পর এটাই বাংলাদেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। ওই বছর তেঁতুলিয়ায় ২ দশমিক ৮ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল।

সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন জীবন-জীবিকার তাগিদে ঘর থেকে বের হওয়া কর্মজীবী মানুষ। কনকনে হিমেল বাতাসে ঠান্ডায় শিশু ও বৃদ্ধরা কাবু হয়ে পড়েছেন।

পাবনার ঈশ্বরদীর আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষক নাজমুল হক জানান, মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় পাবনার ঈশ্বরদীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে মাত্র ৩ ঘণ্টা আগে সকাল ৬ টায় সেখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

মাত্র এই ৩ ঘণ্টার ব্যবধানে তাপমাত্রা কমেছে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই মৃদু শৈত্যপ্রবাহ সপ্তাহ জুড়েই থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান ঈশ্বরদী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের এ পর্যবেক্ষক নাজমুল হক। পাবনা জেলায় তাপমাত্রা আরো কমতে পারে। এ বছর পাবনায় শীত মৌসুমে এটাই ছিল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বলে এ কর্মকর্তা ঊল্লেখ করেন।

শীতের তীব্রতা বাড়ায় গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে বাড়ছে ভিড়। সামর্থ্যবানদের চাহিদা থাকায় বৈদ্যুতিক দোকানগুলোতে গিজার আর ইলেকট্রিক সামগ্রীর বিক্রিও বেড়েছে। তবে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন প্রান্তিক কৃষক, জেলে ও খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। আবহাওয়ার এই বৈরী আচরণে জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা।

নিম্ন আয়ের চরাঞ্চলের মানুষের কষ্টের যেন শেষ নেই। গরম কাপড়ের জন্য হন্য হয়ে শহরে ছুটছে মানুষ। পাবনা শহরের হকার্স মার্কেটে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। ফুটপাত থেকে শুরু করে প্রতি দোকানেই শীতের কাপড় কেনার ধুম পড়ে গেছে। সাধ্যমত গরম কাপড় কিনছে সবাই। এই সুযোগে ব্যবসায়ীরা লুফে নিচ্ছে বাড়তি মুনাফাও।

শহরের বাসিন্দারা জানান, গত শীত কয়েদিনের তুলনায় বাড়েছে। শীত ঠেকানোর মত মোটা গরম কাপড় কিনতে এসেছি কিন্তু দাম অনেক বেশি। দোকানির সাথে দরাদরি করে ৮ শ’ টাকায় দু’টি গরম কাপড় কিনেছেন।

তারা আরো জানায়, পুরাতন গরম কাপড়ের দাম এবার বেশি। সাধ্যের মধ্যে মিলছে না। পুরাতন জামা কাপড়ের দোকানি আবুল হাসেম জানায়, এবার শীতের কাপড় বেশি দাম দিয়ে কেনায় দাম একটু বেশি।

পাবনার বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন প্রতিবারের মত এবার শীত বস্ত্র হাতে তেমন বের হয়নি। ইতোমধ্যে কয়েকটি সংগঠন মানুষের মাঝে যেটুকু শীত বস্ত্র পৌঁছেছে তা চাহিদা তুলনায় খুবই নগণ্য। অসহায় মানুষ চেয়ে আছে গরম কাপড়ের আঁশায়। শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়নোর আহবান জানিয়েছেন পাবনার সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

উপজেলার বাংলাবাজার এলাকার ভ্যানচালক অবদুল আওয়াল জানান, ঘন কুয়াশা আর এমন কনকনে শীত ও ঠান্ডা থাকলে ভ্যান চালানে খুবই কষ্টকর হয়ে যায়। তারপরও জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রচন্ড ঠান্ডার মধ্যেও বের হতে হচ্ছে।

প্রতিদিন তিনশ’ টাকা জমায় ভাড়াতে অটো চালান রিয়াজুল তিনি জানান, অটো নিয়ে রাস্তায় বের হইছি কিন্তু যাত্রী সংখ্যা একে বারে কম। অটো মালিকের জমার টাকা রোজগার করতে পারি নাই। তাই পরিবারের জন্য খাবার কিনতে কষ্ট হবে। শহরের জাকির হোসেন নামক একজন বলেন, আমাদের দেশে অসহায় মানুষের পাশে মানুষের দাড়ানোর রীতি অনেক পূর্বের। শীতার্ত মানুষ অসহায় তাদের পাশে আমাদের দাঁড়ানো দায়িত্ব। সকল সার্মথ্যবানদের উচিত শীতবস্ত্র হাতে এগিয়ে আসা।

পাবনা পৌর মেয়র শরীফ উদ্দিন প্রধান বিত্তবানদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে।

জেনারেল হাসপাতাল পাবনা সূত্রে জানা যায়, শৈত্যপ্রবাহে হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়েছে। গত সপ্তাহের তুলনায় ঠান্ডায় আক্রান্ত শিশু বেড়েছে। পাবনা ডায়াবেটিস হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. অবদুর রাজ্জাক জানান, ঠান্ডাজনিত সমস্যায় শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। অনেক শিশুদের নেবুলাইজার দেয়া হচ্ছে এবং নিউমনিয়ার প্রকোপও বাড়ছে। শীতকালে ঠান্ডা থেকে শিশুদের বাঁচিয়ে রাখতে অভিভাবকদের বাড়তি সর্তকতা নিতে হবে।

স্থানীয় আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র বলছে, শীতের তীব্রতা বেড়ে সোমবার (জানুয়ারি ০৩) থেকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বিরাজ করছে জেলাজুড়ে। এতে ছিন্নমূল মানুষের চরম ভোগান্তি বেড়ে যেতে পারে। তবে শীত মোকাবিলায় সরকারের সকল প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।