ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে ‘ক্ষুব্ধ’ সরকার

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে ক্ষুব্ধ সরকার। মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন পরিষদের সদস্যরা। এছাড়া এ রায়ের অনেক বক্তব্যকে ‘আপত্তিকর’ বলে অভিহিতও করেছেন তারা। এমনকি এসব ‘আপত্তিকর’ বক্তব্য প্রত্যাহার করতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রধান বিচারপতির বরাবর লিখিত আবেদন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সোমবার (৭ আগস্ট) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সভার শেষে এক অনির্ধারিত আলোচনায় মন্ত্রিরা ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। মন্ত্রিপরিষদে উপস্থিত ছিলেন এমন একাধিক সিনিয়র মন্ত্রী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মন্ত্রী বলেন, ‘ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে মন্ত্রিপরিষদের নিয়মিত বৈঠক শেষে প্রায় দুই ঘণ্টা আলোচনা হয়। উপস্থিত সবাই রায়ের বিপক্ষে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এ রায়ে ক্ষুব্ধ মন্ত্রিপরিষদের সবাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘‘ওই অনির্ধারিত বৈঠকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক রায়ের কপি উত্থাপন করেন। তিনি রায়ের বিভিন্ন পয়েন্ট উল্লেখ করে বলেন, ‘ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে অপ্রাসঙ্গিক অনেক কিছু আনা হয়েছে, যা প্রয়োজনীয় ছিল না। যেমন পঞ্চম ও ষষ্ঠ সংশোধনীও টেনে আনা হয়েছে। এ রায়ে সংসদকে ‘ইমম্যাচিউরড’ বলা হয়েছে। এমনকি ২০১৪ সালে যে নির্বাচন হয়েছিল, সেটাকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ বলা হয়েছে। এছাড়াও রায়ে আরও অনেক ‘আপত্তিকর’ বিষয় আনা হয়েছে বলে জানান আইনমন্ত্রী।’’

অপর এক মন্ত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘‘মন্ত্রিপরিষদের ওই অনির্ধারিত সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, সরকারের পক্ষ থেকে এ রায়ে যেসব ‘আপত্তিকর’ বক্তব্য দেওয়া হয়েছে তা এক্সপাঞ্চ করতে প্রধান বিচারপতির কাছে লিখিত আবেদন করা হবে।’’

‘এছাড়া জনগণের অধিকার রক্ষায় প্রয়োজনে নতুন আইন করার বিষয়েও একমত হয়েছেন মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা’, জানান ওই মন্ত্রী।

রয়ের কপিতে যেসব আপত্তিকর বিষয় আছে সেসব বিষয় নিয়ে আইনমন্ত্রী মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করতে পারেন, বলেও জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘‘আলোচনার এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিষ্কার করে বলেন, ‘আগে রায় জেনেছিলাম মাত্র। এবার রায়ের কপি হাতে পেলাম, দেখলাম, পড়লাম ও বুঝলাম। এ রায়ের কোথাও কোথাও সরকার এবং জনগণ সম্পর্কে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য করা হয়েছে। কাজেই আপনারা যেখানেই সুযোগ পাবেন সেখানে এসব বিষয় জনগণকে জানাবেন। কারণ, আমরা জনগণের প্রতিনিধি। জনগণের এসব বিষয় জানার অধিকার আছে।’

এসব বিষয়ে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘‘ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে সভা শেষে আলোচনা হয়েছে। রায়ে বলা হয়েছে, ‘এই সংসদ ‘ইমম্যাচিউরড’ এবং নির্বাচন ‘প্রশ্নবিদ্ধ।’ আমি বলতে চাই, এই সংসদের সদস্যরাই কিন্তু ভোট দিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করেছেন। তাহলে তিনিও তো ‘ইমম্যাচিউরড’ ও তার নিয়োগও ‘প্রশ্নবিদ্ধ’। সেই প্রশ্নবিদ্ধ রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ দিয়েছেন এবং তাকে শপথ বাক্য পাঠ করিয়েছেন। তাহলে প্রধান বিচারপতিও কিভাবে ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ ও ‘ইমম্যাচিউরড’-এর ঊর্ধ্বে থাকেন?’’