‘সংসদে কে বিরোধী আর কে সরকারি দল, বোঝার উপায় নেই’
সংসদে ‘বিরোধী দল’ কে তা নিয়ে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য এবং জাতীয় পার্টির সদস্যদের মধ্যে বিতর্ক হয়েছে। বিএনপির সদস্যদের প্রশ্নের জবাব জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা দেয়াকে কেন্দ্র করে এই বিতর্ক হয়। এ নিয়ে বিএনপির রুমিন ফারাহানা প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘এমন এক সংসদে রয়েছি কে সরকারি দলের, আর কে বিরোধী দলের, তা বোঝার উপায় নেই।’
সংসদে রোববার ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের মঞ্জুরি দাবির ওপর ছাটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনাকালে এই বিতর্কের অবতারণা হয়। সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পাটির সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু তার ছাটাই প্রস্তাবের আলোচনার সময় ‘আমরা ক্ষমতায় আছি’ বলেও মন্তব্য করেন। এক পর্যায়ে বিরোধী দলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপির রুমিন ফারাহানা।
২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে মঞ্জুরির দাবিতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও ত্রাণ—এই চার মন্ত্রণালয় নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপিদলীয় সদস্য হারুনুর রশীদ অভিযোগ করেন, জেলা হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক নেই। জেলা ও উপজেলায় স্বাস্থ্যসেবা বলতে কিছুই নেই। চিকিৎসা খাত এখন ভারতীয় বাজারে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এখানে উপস্থিত এমপিরা কেউই বাংলাদেশে চিকিৎসা নেন না। সবাই ভারত অথবা সিঙ্গাপুর গিয়ে চিকিৎসা নেন। ডাক্তাররা নিজের পেশার তুলনায় রাজনীতির সঙ্গে বেশি জড়িয়ে গেছেন।’
তার এই বক্তব্যের পরপরই সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী নিজের প্রস্তাবের বিষয়ে কিছুই না বলে হারুনুর রশীদের বক্তব্যের জবাব দিতে শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘সব দোষ ডাক্তারদের দিলে চলবে না। দুয়েকটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে সবাইকে দোষ দেওয়া ঠিক না। টাকা থাকলে মানুষ বিদেশে যায়। অনেকে ইচ্ছা করে যায়, দেশকে অপমান করার জন্য।’
একইভাবে জাপার আরেক সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদও নিজের প্রস্তাবের ওপর বক্তব্য না রেখে তিনি মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে একটি ছবি দেখিয়ে বলেন, ‘চোখ লাগাচ্ছে আজ আমাদের ডাক্তাররা। চিকিৎসা হয় না, এটা ঠিক নয়।’
চিকিৎসকদের দলীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই সংস্কৃতি দেশে চালু করেছে বিএনপি। সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ড্যাব গঠন করে ডাক্তারদের মধ্যে দলীয় রাজনীতি ছড়িয়ে দিয়েছিলেন।’ বিএনপি দলীয়করণ করেছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
এ পর্যায়ে বিএনপির সংরক্ষিত আসনের সদস্য রুমিন ফারহানা তার প্রস্তাবের বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার শুরুতেই জাপার দুই সদস্যের দিকে ইঙ্গিত করে বিরূপ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘এমন পার্লামেন্টে আছি, কোনটা সরকারি দল, আর কোনটা বিরোধী দল কিছুই বুঝি না।’
এরপর জাপার আরেক সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু তার বক্তব্যে বলেন, ‘সরকার ভুলত্রুটি করলে বিরোধী দল ধরিয়ে দেবে। ভালো কাজ করলে প্রশংসা করবে।’ নবম সংসদে বিরোধী দলে থাকা বিএনপির ধারাবাহিক সংসদ বর্জনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘৪০০ দিনে মাত্র ১০ দিন উপস্থিত হওয়া বিরোধী দলের কাছ থেকে জাপাকে বিরোধী দলের আচরণ শিখতে হবে না। জাপা ওই বিরোধী দল হতেও চায় না।’
এর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে মুজিবুল হক চুন্নু একপর্যায়ে বলে ফেলেন, ‘যেহেতু আমরা ক্ষমতায় আছি, তাই কাজটি করা উচিত।’ যদিও জাতীয় পার্টি এই সংসদের প্রধান বিরোধী দল। আগের সংসদে তারা বিরোধী দলের পাশাপাশি মন্ত্রিসভায়ও অংশ নিয়েছিলেন। মুজিবুল হক ওই মন্ত্রিসভায় শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।
গত ২৭ জুন বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদে বিরোধী দলের প্রয়োজনীয়তার কারণেই জাতীয় পার্টি বিরোধী দলের অবস্থানে আছে বলে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যদি বলতেন—আমরা সরকারে থাকবো, আমরা একসঙ্গে নির্বাচন করেছি, সরকারে আমরা থাকতে পারতাম। কিন্তু যেহেতু বিরোধী দলের প্রয়োজন, সেই কারণে আমরা বিরোধী দলে রয়েছি।’
গত ১৭ জুন ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনায় বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেছিলেন, যেভাবেই বিরোধী দল সাজান না কেন, মহাজোটের অংশীদারদের দিয়েও সাজান না কেন, তাতে কোনও লাভ হবে না। আমরাই প্রকৃত বিরোধী দল।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন