সংসদ নির্বাচনে সব শরিক দলকেই আসন দেবে বিএনপি

আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটের সবগুলো শরিক দল থেকেই মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। শরিক দলগুলোর অন্ততপক্ষে দলীয় প্রধানদের নির্বাচনে প্রার্থিতার বিষয়ে ইতিবাচক অবস্থান গ্রহণ করেছে দলটির হাইকমান্ড। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য জানান।খবর বাংলা ট্রিবিউনের।

সূত্র জানায়, নীতিগতভাবে দলের হাইকমান্ড জোটের শরিক দলগুলোর অন্তত শীর্ষনেতাদের মনোনয়নের বিষয়ে আন্তরিক। যদিও এ বিষয়টি নিয়ে স্থায়ী কমিটিতে কোনও আলোচনা হয়নি। তবে জোটের কোনও কোনও শরিকদলের নেতা ইতোমধ্যেই বিএনপির হাইকমান্ডের এই মনোভাব বুঝতে পেরেছেন।

জোটের শরিক একটি দলের চেয়ারম্যান এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন। মঙ্গলবার বিকালে তিনি বলেন, ‘আমাকে ইতিবাচক থাকতে বলা হয়েছে এবং প্রস্তুতিও নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ কারণে, হয়তো এবার শরিক দলগুলোকে আসন দেওয়ার ক্ষেত্রে বিএনপি উদার হবে। আমাকে বলা হয়েছে, আশ্বস্ত থাকুন।’

যদিও আরেকটি শরিক দলের চেয়ারম্যান মনে করেন, ‘মনোনয়ন দেওয়া হোক বা না হোক, সমর্থন জোটগত বা দলীয়; পরিস্থিতি যাই-ই হোক না, নির্বাচনে অংশ নিতেই হবে। নিবন্ধন টিকিয়ে রাখতে হলে নির্বাচনে অংশ নিতে হবে।’

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-(ন্যাপ) চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি বলেন, ‘আসন বণ্টনের বিষয়ে এখনও আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি। আমরা বিএনপি-জোটে আছি। গত ২০১৪ সালের নির্বাচনও বয়কট করেছিলাম জোটবদ্ধভাবেই। আগামী নির্বাচনও জোটবদ্ধ করার আশা করছি। জোটনেত্রী খালেদা জিয়ার ওপর আমাদের আস্থা আছে। তিনি যেভাবে বলবেন, আমরাও সেভাবে দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকবো। আর অবশ্যই প্রার্থীকে যৌক্তিক অবস্থান ধরে রাখতে হবে।’

বিএনপির নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে টার্গেট করে সংসদীয় আসনগুলোতে একটি প্রার্থী তালিকা করা হয়েছিল। ওই তালিকায় জোটের শরিকদলগুলোর নেতাদের নামও ছিল। স্থানীয় প্রভাব এবং ভোটের অংশ হিসেব করে জোটের অনেক নেতাকেই ওই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছিল বিএনপি।

‘নির্বাচনের এখনও অনেক দেরি এবং নির্বাচনের সময় কী ধরনের সরকার থাকবে তা এখনও পরিষ্কার হয়নি। এরপরও আমাদের প্রস্তুতি আছে,’—বলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। তার ভাষ্য, ‘জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনের সম্ভাবনা থাকলে নিশ্চয় শরিক নেতাদের রেখেই প্রার্থী তালিকা করা হবে।’

বিএনপি নেতা দুদু বলেন, ‘এক্ষেত্রে হয়তো ভোটের হিসাব, এলাকায় অবস্থানসহ নানা বিষয় আলোচনায় থাকবে। প্রার্থীর যোগ্যতা ও প্রয়োজনীয়তা বজায় রেখেই তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।’

জানা গেছে, ১৯৯৯ সালের ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগকে সরকার থেকে বিদায় করতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, জামায়াতের তৎকালীন আমির গোলাম আযম এবং ইসলামী ঐক্যজোটের ওই সময়ের চেয়ারম্যান শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হককে সঙ্গে নিয়ে চারদলীয় জোট গঠন করে বিএনপি। এরপর ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল চারদলীয় জোট বেড়ে ১৮ দলীয় জোট হয়। ২০১৫ সালে আরও দুটি দল যুক্ত হলে ২০ দলীয় জোটে রূপান্তরিত হয়।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের বাকি শরিক দলগুলো হচ্ছে, জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিশ, ইসলামী ঐক্যজোট (রকিব), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), কল্যাণ পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), লেবার পার্টি, ইসলামিক পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাপ, ন্যাপ ভাসানী, মুসলিম লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, পিপলস লীগ, ডেমোক্রেটিক লীগ, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ও সাম্যবাদী দল।

এর মধ্যে নিবন্ধিত দলগুলো হচ্ছে, বিএনপি, খেলাফত মজলিশ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), কল্যাণ পার্টি, জাগপা, বাংলাদেশ ন্যাপ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও মুসলিম লীগ। বাকিগুলো অনিবন্ধিত। এর মধ্যে হাইকোর্টের নির্দেশে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন স্থগিত আছে। জামায়াতও স্বতন্ত্র পরিচয়ে প্রার্থিতার বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ গুছিয়ে এনেছে।

জানা গেছে, নির্বাচনি প্রস্তুতি শুরু করেছে জোটের নিবন্ধিত অধিকাংশ শরিক দল। বিএনপি ইতোমধ্যে মাঠপর্যায় থেকে নিজেদের জরিপ তুলে এনেছে। খেলাফত মজলিস সারাদেশে চিঠি দিয়ে প্রার্থীর তথ্য সংগ্রহ করেছে। তবে বিজেপি’র চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ ২০০৮ সালের মতো ধানের শীষ প্রতীকের আশায় আছেন। নির্বাচনে তার দলীয় প্রতীক গরুর গাড়ি নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সম্ভাবনা প্রায় নেই। এ বিষয়ে জানতে চেয়ে ফোন করা হলে তিনি কল ধরেননি।

এদিকে, কল্যাণ পার্টিও অন্তত চারটি আসনকে কেন্দ্র করে প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করেছে। দলটির দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, মনোনয়নের বিষয়ে দলটি চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বীর প্রতীক, অধ্যাপক ইকবাল হাসান মাহমুদ, কাহির মাহমুদ ও মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমানের নাম চূড়ান্ত করেছে। এর মধ্যে আরও দুটো আসনের চাহিদা রয়েছে কল্যাণ পার্টির।

জানতে চাইলে দলটির মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমান বলেন, ‘আসনের বিষয়ে আলোচনা হয়নি। তবে নির্বাচন যদি সহায়ক সরকারের অধীনে হয়, তাহলে অবশ্যই নির্বাচনে যাবে কল্যাণ পার্টি। বিএনপি-জোটের নেতৃত্বেই আমরা নির্বাচনে যাবো। আমাদের প্রার্থী তালিকা বিএনপিকে দেবো, এর মধ্যে জোটনেত্রী খালেদা জিয়া যেভাবে নির্দেশনা দেবেন, আমরা সেটিকেই মানবো।’

অন্যদিকে, ৮টি আসনের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন ইসলামী ঐক্যজোট (রকিব) চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুর রকিব। তিনি বলেন, ‘এখন বিএনপি জোটের প্রধান দল, তারা যেভাবে বলবে, সেভাবেই ঘটবে। তবে জোটনেত্রী খালেদা জিয়ার ওপর আস্থা আছে, তিনি যা ভালো মনে করবেন, তাই হবে।’

জোটের আসন বণ্টনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘জোটের আসন বণ্টনের বিষয়ে তো আলোচনা হয়নি। নির্বাচনের বিষয়টি চূড়ান্ত হলেই এটা বলা যাবে। তবে জোট যেহেতু আছে, কমবেশি আসন তো দিতেই হবে।’

সাবেক এই স্পিকার মনে করেন, ‘বিশেষ করে সভাপতি-সেক্রেটারিদের তো দিতে হবে। এক্ষেত্রে জামায়াতের বিষয়টি আলাদা।’

২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো ২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কট করে, ফলে বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনে গেলে নিশ্চয় আসন দিতে হবে বলেও জোর দেন জমির উদ্দিন সরকার।