সরকারি দলের জয়লাভকে এগিয়ে রাখা হয়েছে : অলি

২০ দলের অন্যতম শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ বলেছেন, নির্বাচন করতে চাই, নির্বাচনে আছি। কিন্তু বাছাইয়ে জোটের ৮০ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে সরকারি দলের জয়লাভকে এগিয়ে রাখা হয়েছে।

রোববার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ২০ দলের বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ বৈঠক সন্ধ্যা ৬ থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলে।

তিনি বলেন, সরকার তো কাউকে ঘরে থাকতেই দিচ্ছে না। প্রতিদিন বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। নির্বাচনের পরিবেশ মোটেও নেই। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই।

‌‘এভাবে আমাদের পক্ষে শেষপর্যন্ত নির্বাচনে টিকে থাকা হয়তো সম্ভব হবে না।’

নানা অজুহাতে প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে অভিযোগ করে অলি আহমদ বলেন, আমরা জাতির কাছে ওয়াদা করেছিলাম, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। সেই অনুযায়ী ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া হয়েছে।

‘তবে দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার আগে ও পরে জোটের অনেক নেতাকে মিথ্যা মামলায় জেলে নিক্ষেপ করা হয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্য হল যাতে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকে।’

তিনি বলেন, ৮০ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেক ছিল একই ধরনের সমস্যা। যেমন মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে তার রিসিভ কপি মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দেয়া হয়েছে। পদত্যাগ গ্রহণ করবে কী করবে না, এটা সরকারের ব্যাপার।

‘অথচ এ অজুহাত দেখিয়ে অনেকের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। আবার অনেককে বলা হয়েছে, আপনার নামে খেলাপি ঋণ রয়েছে। অথচ তারা কখনও ঋণ নেননি।’

তিনি বলেন, আবার অনেকে সরকারি বিধিবিধান মেনে ঋণ পুনঃতফসিলিকরণ করেছে। অথচ তাদের অনেককে নির্বাচনের অযোগ্য বলে ঘোষণা করা হয়েছে।

‘শুধু তাই নয়, বিএনপির মহাসচিব ছয় শতাধিক দস্তখত করেছেন। দুই-একটা দস্তখত এদিক-ওদিক বাঁকা হতেই পারে। এটা তো সিল মেরে করেননি, হাতেই করতে হয়েছে,’ বললেন এলডিপি সভাপতি অলি।

তিনি জানান, এটা রিটার্নিং অফিসারের উচিত ছিল পাঁচ মিনিট সময় দিয়ে বিএনপির কাছ থেকে সঠিক তথ্যটা নেয়া। অথবা আমরা প্রতিটি দলের পক্ষ থেকে যারা নিজের দলের প্যাডে সিল দিয়ে দস্তখত দিয়ে নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়েছি, সেগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে দেখা।

‘কোনো কিছু না করে একতরফাভাবে ২০ দলীয় জোটকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য ৮০ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।’

নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার সমালোচনা করে অলি বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাছে আমরা ১৩টা পয়েন্ট নিয়ে গিয়েছিলাম। তারা গ্রহণও করেছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো বিষয়ে তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

তার মতে, এ কমিশনের কোনো ক্ষমতা আছে বলে আমরা মনে করি না। তারা বোধহয় পোস্ট অফিসের কাজ করছে। সরকার আদেশ দিচ্ছে, তারা সেটা পালন করছে। জনগণকে ধোঁকা দেয়া হচ্ছে।

সূত্র আরও জানায়, বৈঠকে আসন বণ্টনের প্রসঙ্গেও আলোচনা হয়। এ প্রসঙ্গে প্রধান শরিক বিএনপির নেতারা বলেন, আগামী বুধবারের মধ্যে তারা শরিকদের সঙ্গে বসবেন। এ নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। অলি আহমদের সভাপতিত্বে বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, খেলাফত মজলিশের মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, জামায়াতে ইসলামীর আবদুল হালিম, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের মাওলানা নুর হোসাইন কাশেমী, মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, মুসলিম লীগের এএইচএম কামরুজ্জামান খান, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আবদুল করীম, ন্যাপ-ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, জাগপার মহাসচিব খোন্দকার লুৎফর রহমান, এনপিপির মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, ন্যাপের এমএন শাওন সাদেকী, ডিএলের সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, লেবার পার্টির ফারুক রহমান, ইসলামিক পার্টির আবুল কাশেম, এনডিপির মো. আবু তাহের, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) শফিউদ্দিন ভূঁইয়া প্রমুখ।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা নির্বাচন করতে চাই, নির্বাচনে আছি। নির্বাচন করব ইনশাআল্লাহ।