সংসদ নির্বাচন : কেন বাদ পড়লেন হেভিওয়েট প্রার্থীরা

ঋণখেলাপি, হলফনামায় ভুল তথ্য, দুর্নীতি মামলায় দণ্ড, বিলখেলাপি, ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরে গরমিল, মামলায় দণ্ড, তথ্যে অসঙ্গতিসহ বিভিন্ন কারণে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ কয়েক ডজন হেভিওয়েট প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।

মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে রোববার সারাদেশে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কার্যালয় থেকে বাদ পড়াদের নাম ঘোষণা করা হয়।

গত ২৮ নভেম্বর মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিনে সারাদেশে ৩ হাজার ৬৫টি মনোনয়নপত্র জমা পড়ে।

আজ যাচাই-বাছাই শেষে ৭৮৬টি মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। ফলে বৈধ প্রার্থী হিসেবে এখনও মনোনয়নের দৌড়ে থাকছেন ২ হাজার ২৭৯ জন।

নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া প্রার্থীরা আগামী ৩, ৪ ও ৫ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনে আপিল করতে পারবেন। আপিলের ওপর শুনানি হবে ৬, ৭ ও ৮ ডিসেম্বর।

এছাড়া যাদের মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা নির্বাচন কমিশনে প্রমাণসহ আপিল করতে পারবেন।

আগামী ৯ ডিসেম্বর প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পরদিন প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিক প্রচারে নামতে পারবেন।

৩০ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

দুই মামলায় ১৭ বছরের সাজা নিয়ে কারাগারে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পক্ষে এবার ফেনী-১, বগুড়া-৬ ও ৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু দুর্নীতি মামলায় দুই বছরের বেশি সাজা হওয়ায় ওই তিন আসনে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করে দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা।

খালেদার অবর্তমানে বগুড়া-৬ আসনে বিএনপির বিকল্প প্রার্থী হিসাবে লড়বেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি ঠাকুরগাঁও-১ আসন থেকেও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

খালেদার বিকল্প হিসাবে ফেনী-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নপত্রের বৈধতা পেয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম মজনু।

তবে বগুড়া-৭ আসনে খালেদার বিকল্প প্রার্থী গাবতলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা মোরশেদ মিল্টনের মনোনয়নপত্রও বাতিল হয়েছে। ফলে এ আসনে ধানের শীষের কোনো প্রার্থী থাকলো না।

এদিকে ঋণখেলাপি হওয়ায় পটুয়াখালী-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।

একই কারণে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেওয়া সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা কাদের সিদ্দিকীর টাঙ্গাইল-৪ ও ৮ আসনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।

টেলিফোন বিল বকেয়া ও ঋণখেলাপি হওয়ায় ঢাকা-৯ আসনে মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।

দুর্নীতি মামলায় ১০ বছর সাজা হওয়ায় ঢাকা-২ আসনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমানের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।

অবশ্য এ আসনে মনোনয়নপত্রের বৈধতা পেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থাকছেন আমানের ছেলে ইরফান ইবনে আমান অমিত।

ত্রুটিপূর্ণ আবেদনের কারণে ঢাকা-১৭ আসনে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।

ঢাকা-২০ আসনে ধামরাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি তমিজ উদ্দিন ও জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহম্মেদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মান্নানের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।

বিএনপি প্রয়াত নেতা নাসিরউদ্দিন পিন্টুর স্ত্রী ঢাকার সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার নাসিমা আক্তার কল্পনা ঢাকা-৭ আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন পেলেও তার প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে খেলাপি ঋণের কারণে।

একই কারণে ঢাকা-৫ আসনে নির্বাচনের দৌড় থেকে বাদ পড়েছেন বিএনপির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া।

আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া ক্রেডিট কার্ডের ঋণ বকেয়া থাকায় হবিগঞ্জ-৩ আসনে গণফোরামের এই প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।

হলফনামায় স্বাক্ষর না থাকায় একই আসনে সংরক্ষিত নারী আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন; সেটাও বাতিল হয়েছে

একই কারণে পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসনে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনির মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।

চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে জমা পড়া ১৮০টি মনোনয়নপত্রের মধ্যে ৪১টি বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। তার মধ্যে ১১টিই বিএনপি নেতাদের।

ঋণখেলাপির কারণে চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে বিএনপির টিকেট পাওয়া যুদ্ধাপরাধের দাযে মৃত্যুদণ্ড হওয়া সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ভাই গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও তার ছেলে সামির কাদের চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।

এছাড়া চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে বিএনপি নেতা মীর মো. নাছির উদ্দিন ও তার ছেলে মীর মো. হেলাল উদ্দিন দুজনেই মনোনয়নপত্র দুর্নীতি মামলায় সাজার কারণে বাতিল হয়েছে।

চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী) আসনে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া সাবেক মন্ত্রী মোরশেদ খান খেলাপি ঋণের কারণে এবং আরেক বিএনপি নেতা এরশাদ উল্লাহ ব্যাংক হিসাব না খোলায় অযোগ্যে ঘোষিত হয়েছেন।

চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড-কাট্টলী) আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর মনোনয়নপত্র ঋণ খেলাপের কারণে বাতিল হয়েছে।

মামলার তথ্য গোপন করায় রাজশাহী-১ আসনে বিএনপির সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হকের এবং ঋণখেলাপি হওয়ায় রাজশাহী-৫ আসনে বিএনপির সাবেক এমপি নাদিম মোস্তফার মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে।

মামলাজনিত কারণে মনোনয়ন বাতিল হয়েছে পার্বত্য খাগড়াছড়ি আসনের আলোচিত দুবারের সংসদ সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী) জেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াদুদ ভূঁইয়ার।

দুটি মামলায় দুই বছরের বেশি সাজা হওয়ার কারণে নাটোর-২ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।

অবশ্য এ আসনে দুলুর স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনের মনোনয়নপত্র বৈধতা পেয়েছে।

ভোটারদের এক শতাংশ সমর্থনে ‘ত্রুটি থাকার’ কারণে কুড়িগ্রাম-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে গণজাগরণ মঞ্চের আহ্বায়ক ইমরান এইচ সরকারের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।

এদিকে, মহাসচিব মির্জা ফখরুলের স্বাক্ষর নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে মানিকগঞ্জের তিনটি আসনে বিএনপির সাত প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করেন জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা।