সরকার ডোবাতে ফেসবুকে ফ্রি প্রশ্ন ফাঁস?
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2018/02/27539980_1778204155537877_1282821468716262105_n-555x290-1.jpg)
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2025/02/475351977_1256003665483861_2959209934144112011_n.jpg)
গত কয়েকবারের তিক্ত অভিজ্ঞতায় এবার এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে ‘সম্ভব সব কিছু’ করা হয়েছিল জানিয়ে এখন পর্যন্ত হওয়া দুটি পরীক্ষাতেই প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সোহরাব হোসাইন।
কেন্দ্রগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীর গুপ্তচরবৃত্তি ঠেকানোই বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সর্বোচ্চ নজরদারিতে সরকারি ছাপাখানা থেকে প্রশ্নফাঁস ঠেকানো গেলেও সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে কেন্দ্রগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীদের গুপ্তচরবৃত্তি ঠেকানোটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ হলেও গুপ্তচরের মতো প্রশ্নের ছবি মোবাইলে ধারণ করে বিশেষ উদ্দেশ্যে অসৎ শিক্ষক-কর্মকর্তারাই পরীক্ষার সকালে প্রশ্নের ছবি বাইরে পাচার করছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব জানান, বিজি প্রেস থেকে প্রশ্নফাঁস হয় এই গুরুতর অভিযোগের পর সরকারি ছাপাখানায় কর্মরত প্রত্যেকের ওপর কঠোর নজরদারি, সক্রিয় গোয়েন্দা তৎপরতার পর এখন নতুন একটি চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে।
প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতিতে কেন্দ্রগুলোতে থাকা ‘সর্ষের ভেতর ভূত’রাই এই চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তিনি বলেন: বিজি প্রেসে এখন প্রশ্নপত্র দেখতে পাওয়া কর্মীর সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে। যারা আছে তাদের ওপরও তীক্ষ্ম নজরদারির ব্যবস্থা হয়েছে। কিন্তু সারাদেশে ২৫’শরও বেশি কেন্দ্রে সব শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নজরদারির আওতায় আনাটা বেশ কঠিন।
‘দুর্গম কেন্দ্র আছে যেখানে রিকশা, নৌকা এমনকি পায়ে হেঁটে যেতে হয়। সব মিলিয়ে কেন্দ্রগুলোতে প্রশ্নপত্র পাঠাতে ১০ হাজারেরও বেশি শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী যুক্ত। প্রত্যেক থানা-ট্রেজারি থেকে প্রশ্নপত্র কেন্দ্রে পৌঁছানোর দায়িত্বে থাকে ৩ জন। এখন এদের কোন একজন যদি মোবাইলফোনে প্রশ্নের ছবি তুলে ছড়িয়ে দেয় তাহলে সেটা সামাল দেয়া সত্যিই কঠিন।’
অন্যান্যবার টাকার বিনিময়ে এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস হলেও এবার ফেসবুকে ফ্রি-তে প্রশ্ন দেয়ার ঘোষণাও দেয়া হচ্ছে।
এরকম ঘোষণা দিয়ে ফ্রিতে প্রশ্নফাঁসের নেপথ্য নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব বলেন: শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সবাই সরকারের ভালো চায় বিষয়টি তো এরকম না। সরকারকে ডোবাতে চাইলে এটা বড় একটা সুযোগ। ফেসবুকে ফ্রিতে প্রশ্ন দেয়ার মাধ্যমে কার্যত সরকারকে প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে অপারগ হিসেবে দেখাতে চাওয়া হতে পারে।
তিনি আরও বলেন: ১০ হাজারেরও বেশি শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর একজনও যদি বিশেষ উদ্দেশ্যে প্রশ্নের ছবি তুলে বাইরে দেয় এবং সেটা গুটি কয়েক মাধ্যম ঘুরে কারও হাতে পৌঁছায় তাহলেও তো আমাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
তাহলে ফেসবুকের মতো যেসব মাধ্যমে প্রশ্ন ছড়াচ্ছে সেসব বিষয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনসহ (বিটিআরসি) সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে সঙ্গে সমন্বিত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা?
এই প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন: আমাদের পক্ষে যা যা করা সম্ভব সেসবের কোন কিছুই বাদ দেইনি।
এরপরও প্রশ্ন ফাঁস না থামায় জড়িতদের সনাক্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নিতে শিক্ষামন্ত্রণালয় আন্তরিক চেষ্টা করছে জানিয়ে তিনি বলেন: যারা আমাদের দেশ, প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নিয় টানাটানি করছে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিতে আমাদের একটুও ছাড় দেয়ার মানসিকতা নাই।
তবে বিটিআরসি জানিয়েছে ফেসবুকে প্রশ্নফাঁসের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য গণমাধ্যমে জানতে পারলেও এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে কোন লিখিত নির্দেশনা-চিঠি আসেনি।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান ড.শাহজাহান মাহমুদ বলেন: প্রথমত ফেসবুকে যারা এসব করছে তারা পরিচয়, আইপি ( ইন্টারনেট প্রোটোকল ) অ্যাড্রেস গোপন করে সুচতুরভাবে এসব অপরাধ করছে। আমরা সক্ষমতা অনুযায়ী এসব নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করবো। তবে এখনো শিক্ষামন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে লিখিতভাবে বিটিআরসির কাছে কোন নিয়ন্ত্রণ আরোপের বা এরকম কোন ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কোন চিঠি আসেনি।
বৃহস্পতিবার থেকে সারাদেশে শুরু হয়েছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। প্রথম দিনই বাংলা প্রথমপত্র প্রশ্নফাঁস হয়। আগের মতো এবারও প্রশ্নফাঁস হয় ফেসবুকে। পরীক্ষা শুরুর ১ থেকে আধ ঘণ্টা আগেই ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়তে থাকে প্রশ্নপত্র।
শনিবার ছিল বাংলা দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষা, অথচ বৃহস্পতিবার প্রথমপত্রের পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর বিকাল থেকেই ফেসবুকে কয়েকটি পেজ ও গ্রুপগুলোতে বাংলা দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ঘোষণা দেয়া হয়। ঘোষণা অনুযায়ী শনিবারের পরীক্ষার প্রশ্নও ছড়িয়ে দেয়া হয় ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে। ফেসবুকে কোন কোন গ্রুপে অল্প টাকার বিনিময়ে মেসেঞ্জারে প্রশ্ন নিতে বলা হয়, আবার কোন কোন ফেসবুক গ্রুপে সরাসরি পোস্ট আকারে প্রশ্নপত্র উন্মুক্তভাবে দেয়ার কথা বলা হয়।
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2024/12/469719549_122234398946008134_2936380767280646127_n.jpg)
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন