সর্বত্র নারীদের জয়জয়কার : পিছিয়ে নেই পুলিশ বাহিনীতেও
বাংলাদেশের সর্বত্র নারীদের জয়জয়কার। পিছিয়ে নেই পুলিশ বাহিনীতেও। ১৯৭৪ সালে মাত্র ১৪ জন কনস্টেবল দিয়ে শুরু হওয়া নারী পুলিশের বর্তমান সংখ্যা ১৩ হাজার ৩২৯ জন। বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তারা বহন করছেন ছোট থেকে ভারী অস্ত্র। তাদের হাতে শোভা পাচ্ছে ওয়্যারলেস সেট। মাথায় হেলমেট দিয়ে অংশ নিচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ অভিযানে।
কাজ করছেন যান চলাচল নিয়ন্ত্রণেও। বর্তমান সরকার পুলিশ বাহিনীতে নারীর অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করতে জাতিসংঘ মিশনেও নারীদের পাঠাচ্ছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে। জাতিসংঘে শান্তিরক্ষায় পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেদের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছে।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। পুলিশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদ স্টাফ কলেজের এডিশনাল আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন একমাত্র নারী এডিশনাল আইজিপি রৌশন আরা। এরপরই আছেন চারজন এডিশনাল ডিআইজি।
তারা হচ্ছেন সিআইডি পুলিশের এডিশনাল ডিআইজি রওশন আরা বেগম, সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম, স্পেশাল ব্রাঞ্চের এডিশনাল ডিআইজি রখফার সুলতানা ও র্যাবের এডিশনাল ডিআইজি আতিকা ইসলাম। পুলিশ সুপার পদে গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার ও রাজবাড়ী জেলা পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে চলেছেন।
এ ব্যাপারে রাজবাড়ী জেলা পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি বলেন, পুরুষের তুলনায় পিছিয়ে থাকার তো কোনো কারণ দেখি না। আমরাও তো সমানভাবে পরীক্ষায় পাস করে এবং প্রশিক্ষণ নিয়ে যোগ্যতার ভিত্তিতেই পুলিশ বাহিনীতে ঢুকেছি। নারী হিসেবে কি আমাদের কোনো রকম ছাড় দেওয়া হয়েছে? অবশ্যই না। সুতরাং পুলিশ সুপার হিসেবে শুধু নয়, বাংলাদেশ পুলিশের যেকোনো ইউনিটে একইভাবে কাজ আগেও করেছি ভবিষ্যতেও পারব।
তিনি বলেন, পুলিশ বাহিনীতে এক সময় হাজারো সমস্যা বিদ্যমান ছিল। বর্তমান সরকার সেগুলো সমাধান করেছে। এখনো কিছু সমস্যা আছে। সীমাবদ্ধ সম্পদের মাঝেও সরকার পর্যায়ক্রমে সেগুলো সমাধানের উদ্যোগ নিচ্ছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার জনবান্ধব এবং পুলিশবান্ধব। সরকারপ্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশ বাহিনীর জন্য অর্থ খরচ করাটাকে ব্যয় মনে না করে ইনভেস্ট মনে করেন। তিনি মনে করেন, পুলিশ বাহিনীর সমস্যা দূর হলে তারা স্বাচ্ছন্দ্যে দায়িত্ব পালন করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো রাখতে পারবে। আর তাতে জনগণ স্বস্তিতে থাকবে, নিরাপদে থাকবে- দেশ স্থিতিশীল থাকবে। এতে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে, সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে দেশ।
পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, পুলিশ সদর দফতর থেকে শুরু করে পুলিশের সব ইউনিটেই এখন নারী সদস্যরা কাজ করছেন। কয়েকটি ইউনিটের নেতৃত্বেও আছেন নারীরা। সারা দেশের ৮টি ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার এবং ডিএমপির উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন পরিচালনা করছেন নারী সদস্যরাই।
জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল টেকার হিসেবে ইতোমধ্যে নিজেদের প্রতিভার পরিচয় দিয়ে আলোচনায় উঠে এসেছেন। এমনকি রাজপথে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণেও নারী সদস্যরা সবার দৃষ্টি আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছেন। তারা নারী ও শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত মামলার তদন্তও করছেন। পুলিশে সার্কেল এসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অনেক নারী সদস্য। এখন কনস্টেবল থেকে এডিশনাল আইজি পর্যন্ত সব জায়গায় নারী পুলিশের সরব উপস্থিতি। পুলিশের নারী সদস্যরা মেধা, যোগ্যতা আর দক্ষতার প্রমাণ দিয়ে দেশ-বিদেশে কাজ করছেন।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নারী সদস্যরা শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বের পুলিশের সঙ্গে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের নারী সদস্যরা এখন নিয়মিত। তারা প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা উপার্জন করে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছেন।
পুলিশ সদর দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে পুলিশ বাহিনীতে ১৪ জন কনস্টেবল নিয়োগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পুলিশে নারী পুলিশের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে এ সংখ্যা ১৩ হাজার ৩২৯ জন। সূত্র জানায়, বর্তমানে নারী পুলিশের এডিশনাল আইজি ১ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি ৪ জন, পুলিশ সুপার ৭২ জন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ১০১ জন, সহকারী পুলিশ সুপার ৯৬ জন, ইন্সপেক্টর ৮৭৯ জন, এসআই ৭৬৭ জন, সার্জেন্ট ৫৫ জন, এএসআই ১ হাজার ২৬ জন, নায়েক ১১ হাজার ২ জন ও কনস্টেবল ১৩ হাজার ৩২৯ জন।
এ ব্যাপারে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, নারী হোক পুরুষ হোক- সবাই পুলিশ বাহিনীর সদস্য। নারী পুলিশ সদস্যকে আমরা পুলিশ সদস্য হিসেবেই ট্রিট করি। তারা পুলিশ সদস্য হিসেবেই বিভিন্ন ইউনিটে দায়িত্ব পালন করে নিজেদের যোগ্যতা ও দক্ষতার স্বাক্ষর রাখছে। অস্ত্র হাতে অভিযান পরিচালনা, সেবামূলক কাজ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, রাজপথে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও নারী সদস্যরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকারপ্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী, নারীশিক্ষা থেকে শুরু করে নারীর অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করতে তিনি নানা পদক্ষেপ নিচ্ছেন। পুলিশ বাহিনীতে যাতে নারীরা স্বাচ্ছন্দ্যে দায়িত্ব পালন করতে পারেন সে লক্ষ্যে তিনি নানা সুযোগ সুবিধা বাড়িয়েছেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন