সর্বস্তরের মানুষের নিরাপত্তা দিতে হবে

আবদুল হাই ইদ্রিছী : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এখন ঘরের দুয়ারে। এই নির্বাচন নিয়ে জাতির অনেক প্রত্যাশা। এ নির্বাচন নির্বাচন কমিশন ও সরকারের জন্য বড় ধরনের একটি চ্যালেঞ্জ। এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বড় দাবী ছিলো জনগণ যাতে ভোট দিতে পারে এবং রাজনৈতিক দলগুলো যাতে অবাধে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারে তা সুনিশ্চিত করা। কিন্তু জনগণের এদাবীগুলো কি পূরণ হচ্ছে?

এই প্রশ্নের জবাব প্রতিদিন খবরের কাগজে চোখ বুলালেই পাওয়া যায়। পত্রিকার শিরোনামগুলো দেখলে যে কোন মানুষের বুঝতে অসুবিধা হয় না কেমন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনী প্রচারণার প্রথম দিন থেকেই দেশব্যাপি রাজনৈতিক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। নির্বাচন যতই কাছে আসছে ততই হামলা-মামলা, নির্যাতন-নিপীড়ন বেড়েই চলছে। দেশজুড়ে চলছে গণগ্রেফতার। সাধারণ নেতা-কর্মী ছাড়াও নির্বাচনের প্রার্থীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে ঐক্যফ্রন্টের নেতা বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন ও স্বাধীনতার প্রথম পতাকা উত্তোলনকারী আ স ম আবদুর রবসহ বেশ কিছু নেতাকর্মী হামলার শিকার হয়েছেন। তাদের গাড়ি ভাঙচুর ও সাথে থাকা কয়েকজন কর্মীকে রক্তাক্ত করা হয়েছে। স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা ব্যক্তিরা যদি এমন স্থানে হামলা ও লাঞ্ছনার শিকার হন, সারা দেশে দলের নেতাকর্মীরা কোন পরিস্থিতির মধ্যে আছে, তা সহজেই অনুমান করা যায়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে নির্বাচনপূর্ব এমন সহিংস পরিস্থিতি আগে কখনো সৃষ্টি হয়নি। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশ বড় ধরনের অনিশ্চয়তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। শুধু দেশের মানুষই নয়, এই পরিস্থিতি দেখে উদ্বিগ্ন বিদেশী কূটনীতিকেরাও। তাদের মতে এমন অবস্থা চলতে থাকলে নির্বাচনের দিন সাধারণ মানুষ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেবার আস্থা পাবে না। এছাড়াও খবরে প্রকাশ পেয়েছে, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর জাতিসঙ্ঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের চাপ বাড়ছে।

নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার নিজেই বলেছেন, আমি মোটেও মনে করি না নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বলে কিছু আছে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কথাটি এখন অর্থহীন কথায় পর্যবসিত হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করলেই যে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না বলেও মন্তব্য করেছেন এই নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেছেন, সব দল অংশগ্রহণ করলে অংশগ্রহনমূলক নির্বাচন বলা হয়। সুষ্ঠু নির্বাচনের সাথে এর সম্পর্ক নেই। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হওয়া একটি প্রাথমিক প্রাপ্তি। আসল কথা হচ্ছে, নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হচ্ছে কি না এবং বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে কি না? নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য না হলে অংশগ্রহণমূলক হলেও কোনো লাভ নেই। নির্বাচনী মাঠ যখন এমন ভয়াবহ সহিংস রূপ ধারণ করেছে তখন প্রধান নির্বাচন কমিশনার “প্রচারে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরী হয়েছে। প্রচারে কোন বাধা নেই” বলে জনগনের আস্থা হারাচ্ছেন।

অপর দিকে কয়েকটি সহিংস ঘটনায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার অপরাধীদের আইনের আওতায় না এনে মর্মাহত হয়েছেন বলে নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করছেন। এতে প্রমাণ হচ্ছে, বাংলাদেশে দলীয় সরকারের অধীনে কোনোভাবেই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো সম্ভাবনা নেই।

আসন্ন নির্বাচনে এমন অরাজক পরিস্থিতির অবসানে প্রয়োজন নির্বাচন কমিশনের শক্ত অবস্থান। বিশৃঙ্খলা যারাই সৃষ্টি করুক না কেন, অবিলম্বে তাদের আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী যে বা যারাই হোক, ওদের দল কিংবা মার্কা যেটাই হোক, তারা আইনের আওতায় আসতে বাধ্য।

মনে রাখতে হবে মানুষের মনে ক্ষোভ, ভয় কিংবা অস্থিরতা তৈরী করে কখনোই গনতন্ত্র ভিত্তিক দেশ গঠন করা সম্ভব নয়, সুতরাং সর্বত্র শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা খুবই জরুরী। তাই সাধারণ মানুষের মনের ভীতি দূর করতে নিরাপত্তা ব্যবস্থার জোরদার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। দলমত নির্বিশেষে নিরাপত্তা দিতে হবে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের জন্য।

আবদুল হাই ইদ্রিছী: সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক ও কবি। সম্পাদক- মাসিক শব্দচর।


(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। আওয়ার নিউজ বিডি-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)