সাতক্ষীরার কলরোয়ায় শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলা: ৭ আসামির জামিন স্থগিত
সাতক্ষীরার কলারোয়ায় ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার রায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত সাত আসামির জামিন স্থগিত করেছেন চেম্বার আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (২৭ মে) জামিন স্থগিতের আদেশ দেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৭ মে) রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত এই আদেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করছেন চেম্বার আদালতের বিচারক হাসান ফয়েজ ছিদ্দিক।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর।
এর আগে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করা হয়েছিল।
এর আগে মঙ্গলবার (২৫ মে) ওই মামলায় নিম্ন আদালতে সাজাপ্রাপ্ত সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তারসহ সাতজনকে চার মাসের জামিন দেন হাইকোর্ট। এ সময়ের মধ্যে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আসামিদের করা আপিল নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে।
জামিন পাওয়া আসামিরা হলেন- গোলাম রসুল, আব্দুস সামাদ, আব্দুস সাত্তার, জহুরুল ইসলাম, রাকিব, শাহাবুদ্দিন ও মনিরুল ইসলাম।
বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দিয়েছিলেন। আদালত বাকি ১১ আসামির জামিন বিষয়ে আদেশের জন্য রোববার (৩০ মে) দিন ধার্য করেছেন।
প্রসঙ্গত, ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের হিজলদি গ্রামের এক মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষিতা স্ত্রীকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে দেখে যশোরে ফেরার পথে কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে রাস্তার উপর একটি যাত্রীবাহী বাস আড় করে দিয়ে তার গাড়ি বহরে হামলার অভিযোগ ওঠে। শেখ হাসিনা অক্ষত থাকলেও তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমানসহ কয়েকজন আহত হন।
ওই ঘটনায় থানা মামলা না নেওয়ায় ওই বছরের ২ সেপ্টেম্বর তৎকালীন উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক (বর্তমানে প্রয়াত) মোসলেম উদ্দিন বাদী হয়ে যুবদল নেতা আশরাফ হোসেন, আব্দুল কাদের বাচ্চুসহ ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৭০/৭৫ জনকে আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের করেন। বিভিন্ন আদালত ঘুরে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর মামলাটি এজাহার হিসেবে গণ্য করা হয়। পরবর্তীতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক শফিকুর রহমান ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
সাতক্ষীরা মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে বিচারাধীন পেনাল কোর্টের মামলাটি কয়েকজন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের পর এবং সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ-২য় আদালতে বিচারাধীন অস্ত্র আইনে ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা দুটির কার্যক্রম যথাক্রমে ২০১৭ সালের ৯ ও ২৩ আগস্ট আসামিপক্ষ হাইকোর্টে স্থগিত করেন। গত বছর ৮ অক্টোবর ওই রুল খারিজ করে রায় দেন আদালত। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন রাকিবুর। এর পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ তিন মাসের মধ্যে নিম্ন আদালতে বিচার সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন।
এরপর বিচার শেষে সাতক্ষীরার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি এ মামলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৩জনের সর্বোচ্চ ১০ বছর করে এবং বাকি ৪৭ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়ে রায় দেন। পরবর্তীতে সাতক্ষীরা কারাগারে থাকা সাজাপ্রাপ্ত কয়েকজন আসামি হাইকোর্টে জামিন আবেদন করলে ৭জনকে ৪মাসের জামিন দেয়া হয়েছিলো। আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের জামিন স্থগিতের আদেশে তাদের কারামুক্ত হওয়ার পথ ফের রুদ্ধ হয়ে গেলো।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন