সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে অনিয়ম,দুর্নীতির অভিযোগে চেয়ারম্যান সাফিয়ার বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত শুরু
এল,জি এস পি এডিবি সহ ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন উন্নয়ন বরাদ্দের টাকার প্রকল্পে অনিয়ম, দুর্নীতি স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে কালিগঞ্জের কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সাফিয়া পারভীনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের নির্দেশে তদন্ত শুরু হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের নির্দেশে গত বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পক্ষে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওয়াসিম উদ্দিন কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন পরিষদে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন।
তদন্তের সময় কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা সাফিয়া পারভিন সহ ইউপি সদস্যরা ছাড়াও অভিযোগকারী ও ইউনিয়নের শত শত লোক এবং সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
তদন্তের সময় তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রথমে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পের অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ পড়ে শোনান। পরবর্তীতে ২৬ ডিসেম্বর অর্থাৎ আজ সোমবার সকাল ১০ টার মধ্যে অভিযুক্ত বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাগজপত্রাদি জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। জমাকৃত কাগজপত্র নিয়ে সরেজমিনে গিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প তদন্ত করা হবে বলে উপস্থিত জনগণ এবং সাংবাদিকদের জানান।
অভিযোগের সূত্র থেকে জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে উন্নয়ন বাজেটে ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন সহায়তা খাতের আওতায় সাধারণ বরাদ্দ বিবিজি হতে প্রথম কিস্তিতে ৩,৮১,৬০০ টাকা এবং দ্বিতীয় কিস্তিতে ৩,৮৪,৬০০ টাকা মোট ৭,৬৬,২০০ টাকায় ৫টি প্রকল্পের অধীনে বরাদ্দ দেওয়া হয়। উক্ত প্রকল্পগুলোতে চেয়ারম্যান কাউকে না জানিয়ে তার নিজস্ব লোক দিয়ে প্রকল্পের কাগজ তৈরি করে সিংহভাগ ভাগ টাকা লুটপাট করে আত্মসাৎ করে। প্রকল্প গুলোর মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে ৩ লক্ষ টাকায় মুরাল তৈরীর জন্য বরাদ্দ থাকলেও নিজস্ব লোক দিয়ে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকায় নামমাত্র মুরাল তৈরি করে১লক্ষ ৭০ হাজার টাকা লুটপাট করে। দ্বিতীয় প্রকল্পে ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডে জলবদ্ধতা নিরসনের জন্য ৮৪ হাজার ৬০০ টাকার প্রকল্পে ২০ হাজার টাকার কয়েকটি পাইপ দিয়ে বাকি ৬৪ হাজার টাকা লুটপাট করার অভিযোগ ওঠে। তৃতীয় প্রকল্পে ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডে দুস্থ ১৭ জন মহিলাদের জন্য সেলাই মেশিন বিতরণের জন্য ১ লক্ষ ৭৬ হাজার ৬ শত টাকার মধ্য হতে ৪,৭০০ টাকা মূল্যের পুরানো বাটারফ্লাই মেশিন বিতরণ করে সেখান থেকে৮০ হাজার টাকা লুটপাট করে। এবং সরকারি প্রকল্পে জমা দেওয়া ভুয়া কাগজ পত্র প্রতিটি সেলাই মেশিনের মূল্য ধরা হয় ১০,৩৮৮ টাকা। চতুর্থ নং প্রকল্পে কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য কল্যাণ কেন্দ্র হতে মোসলেম শেখের বাড়ির অভিমুখে মটর ক্রয় এবং সুপিয় পানি সংস্কার পাইপ বাবদ ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকার মধ্যে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে কিছু ট্যাব, মটর ক্রয় করে বাকি ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা লুটপাট করেছে বলে এলাকাবাসী লিখিত অভিযোগে জানান। পঞ্চম প্রকল্পে কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের শিশুদের পুষ্টি সহায়তা বাবদ বরাদ্দের ২৫ হাজার টাকার মধ্যে হতে ১০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়াও গত ২০২১- ২২ অর্থবছরে এডিপি খাতে ইউনিয়নে মার্কস ও খেলাধুলা সামগ্রী বিতরণ কথা বলে ১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ নিয়ে লুটপাট করেছে। এছাড়াও ২০২১ -২২ অর্থবছরে ট্যাক্স মেলা করে ট্যাক্সের টাকা তুললেও কোন ইউপি সদস্যদেরকে জানানো হয়নি। চেয়ারম্যানের এই সমস্ত বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ, স্বেচ্ছাচারিতা ও লুটপাটের ঘটনা নিয়ে এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন পত্র পত্রিকা সহ টিভি চ্যানেলে ফোলাও ভাবে প্রকাশিত হলে ক্ষিপ্ত হয়ে স্থানীয় দুইজন সাংবাদিকের নামে কাল্পনিক মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছে। বিষয়টি নিয়ে কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন বাসি গত ১১ সেপ্টেম্বর চেয়ারম্যান দুর্নীতি দমন কমিশন বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। উক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
এ প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। তার এই নির্দেশের প্রেক্ষিতে এ তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তদন্ত শুরু হওয়ার পর থেকে চেয়ারম্যান বিভিন্ন দপ্তরে দৌড়ঝাঁপ ও ধরনা দিতে দেখা গেছে। বিষয়টি সরে জমিনে তদন্ত করলে লুটপাটের থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে বলে কৃষ্ণনগর ইউনিয়নবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা।
এলাকাবাসী আরো জানান, প্রকল্পগুলোর কাজ করার জন্য সরকারের তালিকাভুক্ত ঠিকাদার দিয়ে করাতে হবে এবং একটি তদারকি কমিটি গঠন করতে হবে কিন্তু সমস্ত নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে বাজার থেকে দোকানের ভুয়া ভাউচার এনে এবং তার নিজস্ব লোকের নামে ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে ঠিকাদার সাজিয়ে ক্রস চেক এর মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছে। এইভাবে ইউনিয়ন ব্যাপী যে সমস্ত উন্নয়ন বরাদ্দ আসে সে সমস্ত প্রকল্পে নামমাত্র কাজ করে বাকি টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে এলাকাবাসী জানান।
এছাড়াও ভোটের সময় ভোট ভিক্ষার জন্য ইউনিয়ন জুড়ে অসহায় হতদরিদ্রদের বিধবা, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী, ভিজিডি, ভি জি এফ কার্ড দেওয়ার নাম করে তার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করে আত্মসাতের ঘটনায় ইতিমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্তার নিকট একাধিক অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
তবে এর সব অভিযোগ অস্বীকার করে চেয়ারম্যান সাফিয়া বলেন সবকিছু নিয়মমাফিক হয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন