সাতক্ষীরার কালীগঞ্জে গৃহবধুর গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা

সাতক্ষীরার কালীগঞ্জে রনি নামের এক পাষণ্ড, প্রবাসী শশুরসহ পাওনাদারদের টাকা না দেওয়ার ফাঁদে ফেলে, নিজ স্ত্রীকে পরকীয়ার অপবাদে বেধড়ক পিটিয়ে জোরপূর্বক নগ্ন ভিডিও ধারণ করে। এরপর সাদা কাগজে সই নিয়ে আহত অবস্থায় শশুর বাড়ির লোকজনকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।

সেই অপমান সইতে না পেরে অবশেষে এক সন্তানের জননী শারমিন সুলতানা নামে এক গৃহবধূ গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এমনই অভিযোগ নিয়ে এলাকায় নানা গুঞ্জনের সৃষ্টি হয়েছে।

ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) বেলা ২টার সময় সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার তারালী ইউনিয়নের জাফরপুর গ্রামে।

নিহত গৃহবধূ শারমিন সুলতানা(২৭) জাফরপুর গ্রামের শেখ সাহেব আলীর কন্যা এবং আশাশুনি থানার হাজিপুর গ্রামের মফপুর রহমানের পুত্র শাহী হাসান রনির স্ত্রী।

খবর পেয়ে থানার উপ পরিদর্শক বুলবুল হোসেন নিহত গৃহ বধুর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে মর্গে প্রেরণ করেন।

উক্ত ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের হলেও অন্যদিকে নিহত গৃহবধু শারমিন সুলতানার পিতা বাদী হয়ে স্বামী, শ্বশুর, দেবরসহ কথিত বানানো পরকীয়া প্রেমিক নামধারী ব্যক্তিসহ ৬ জনকে আসামি করে থানায় গত মঙ্গলবার একটি পৃথক এজাহার দায়ের করেছেন।

ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার বাদ মাগরিব জাফরপুর গ্রামে তার পিতা শেখ সাহেব আলী পারিবারিক কবরস্থানে জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

থানার এজাহার এবং নিহত গৃহ বধুর পিতা শেখ সাহেব আলী, স্ত্রীলিপি খাতুন, চাচা জালাল শেখ, খলিল, খোকন গাজীসহ একাধিক ব্যক্তি সাংবাদিকদের জানান, জাফরপুর গ্রামের মৃত শেখ শাহাজানের পুত্র শেখ সাহেব আলী ও তার স্ত্রী লিপি খাতুন মালদ্বীপে কাজ করতে যায়। সেখানে থাকা অবস্থায় তার ভাই জালাল উদ্দিন তাদের কন্যা শারমিন সুলতানা কে গত ১০/১১বছর আগে আশাশুনি থানার হাজীপুর গ্রামের মুখফুর রহমানের পুত্র দিনমজুর শাহী হাসান রনির সঙ্গে বিয়ে দেয়। বিয়ের পর তাদের ঘরে তাজমিরা খাতুন নামে ৮ বছরের একটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়।

এদিকে বিয়ের পরে জামাইয়ের অবস্থা খারাপ ভেবে শ্বশুর সাহেব আলী বাড়ি করার জন্য দেড় লক্ষ টাকা প্রদান করে। পরবর্তীতে নিজের কিডনির সমস্যা বলে চিকিৎসার নামে আরো আড়াই লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে বিদেশ যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলে শশুর সাহেব আলী নিজ খরচে জামাইকে মালদ্বীপে নিয়ে যায়।

সেখানে কয়েক বছর ভালোভাবে কাটিয়ে গত কয়েক মাস আগে ছুটিতে বাড়ি আসে বাড়িতে এসে ধার দেনার টাকা পরিশোধের নামে শ্বশুরবাড়িতে এসে জোর পূর্বক সন্ত্রাসী স্টাইলে ২ টি গরু তুলে নিয়ে দেড় লক্ষ টাকায় বিক্রি করে হাতিয়ে নেয়। এরপরে পরকীয়ায় জড়িয়ে নিজ স্ত্রীর সন্তানের উপর পরিবারের সদস্যরা মিলে নির্যাতন চালাতে থাকে। শাহী হাসান রনি জাফরপুরের শ্বশুরবাড়ি আসা যাওয়ার সুযোগে পার্শ্ববর্তী বিশ্বনাথপুর গ্রামের সিদ্দিক কারিগরের পুত্র আনিসুল ইসলামের সঙ্গে বন্ধুত্বের সূত্র ধরে ৪০ হাজার টাকা ধার নেয় রনি। এরমধ্যে শাহী হাসান রনি বাড়িতে আসার খবর জানতে পেরে আনিসুল ইসলাম প্রতিনিয়ত টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় তাগাদা দিয়ে আসছিল।

বিষয়টি নিয়ে স্ত্রী শারমিন সুলতানা কে গত সোমবার (২৯ আগস্ট) চিকিৎসার কথা বলে সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পশ্চিম পাশে পশ্চিম পলাশ পোল বিলে অবস্থিত শাহী হাসান রনির চাচার বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে পাওনাদার বন্ধু আনিসুল ইসলামকে টাকা দেওয়ার নাম করে ফোন করে ডেকে নেয় এবং বলে আগামী বৃহস্পতিবার সে মালদ্বীপে চলে যাবে।

রনির কথায় সরল বিশ্বাসে আনিসুল গত মঙ্গলবার সাতক্ষীরা চলে যায়। সেখানে যাওয়ার সাথে সাথে একটি ঘরে বসতে দিয়ে স্ত্রী শারমিন সুলতানা কে পাশে বসিয়ে বেধড়ক পিটাতে শুরু করে। ওই সময় শাহী হাসান রনি এর ভাই রায়হান সহ তার ভাটিয়া বাহিনী নিয়ে পরকীয়া প্রেমিক এবং অসামাজিক কার্যকলাপের ভুয়া অভিযোগ তুলে বেধড়ক পিটাতে থাকে। ওই সময় তাদেরকে নগ্ন করে একসঙ্গে বসিয়ে ছবি তোলা সহ ভিডিও ধারণ করতে থাকে এবং উল্টো আনিসুলকে আটকে রেখে ৪০ হাজার টাকা দাবি করে। আনিসুল অবস্থা বেগতিক দেখে বাড়িতে ফোন করলে বাড়ি হতে লোক গিয়ে ১৬ হাজার টাকায় ইজ্জত বাঁচাতে দফারফা করে ছাড়িয়ে আনলেও তার ফোনটি ফেরত দেয়নি। এরপর পথের কাঁটা দূর করার জন্য শ্বশুর সাহেব আলীকে খবর দেয়। শশুর সাহেব আলী সেখানে পৌঁছানো মাত্রই বেধড়ক পিটিয়ে সাদা কাগজে সই নিয়ে আহত অবস্থায় নিজের ৮বছরের কন্যাকে আটকে রেখে শ্বশুর এবং স্ত্রীকে তার বাড়ি থেকে তাড়িয়ে বাহির করে দেয়। ওই অবস্থায় বাড়িতে ফিরে নিজের এবং বাবার অপমান সইতে না পেরে মঙ্গলবার বেলা আনুমানিক ২টার সময় বাড়ির পাশে আম গাছে গামছা দিয়ে গলায় ফাঁস লাগে আত্মহত্যা চেষ্টা করে। জানতে পেরে পরিবারের লোকজন উদ্ধার করে প্রথমে কালিগঞ্জ হাসপাতাল পরে সাতক্ষীরা ফয়সাল হার্ট ফাউন্ডেশনে ভর্তি করা হয়।

সেখানে অবস্থার অবনতি হলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে পাটকেলঘাটা নামক স্থানে তার মৃত্যু হয়। এইদিকে টাকা এবং সন্তান হারিয়ে বিচারের দাবিতে ভুক্তভোগী পিতা সাহেব আলী পাগলের মত ঘুরে বেড়াচ্ছে দ্বারে দ্বারে।