সারাদেশে পালিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল আজহা
সারাদেশে পালিত হচ্ছে মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর এই পবিত্র দিনে পশু কোরবানির মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি খুঁজছেন মুসলমানরা।
জাতীয় ঈদগাহে প্রধান ঈদের জামাত সকাল আটটায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদসহ বিশিষ্ট নাগরিকেরা অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমেও অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঈদের পাঁচটি জামাত।
সকাল থেকে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে পশু কোরবানি শুরু হয়েছে। সকাল থেকে আকাশ মেঘলা রয়েছে। আটটার পর থেকে রাজধানীতে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। এতে কিছুটা ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী।
ঈদ উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও ঈদ উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
ঈদুর আজহায় পশু কোরবানি করার এই ঐতিহ্য অনেক প্রাচীন। আল্লাহ তাআলা হজরত ইব্রাহিম (আ.)কে নির্দেশ দিয়েছিলেন তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু কোরবানি দিতে। সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্য ছিল তার নবীর আনুগত্য পরীক্ষা করা। স্নেহের পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.) ছিলেন হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সবচেয়ে প্রিয়। স্নেহমমতায় ভরা জগৎ-সংসারে পিতার পক্ষে আপন পুত্রকে কোরবানি দেয়া অসম্ভব এক অগ্নিপরীক্ষা। কিন্তু আল্লাহর নির্দেশ পেয়ে হজরত ইব্রাহিম (আ.) বিনা দ্বিধায় নিজ পুত্রকে কোরবানি দিতে উদ্যত হয়েই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। মহান আল্লাহর নির্দেশে তার ছুরির নিচে প্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-এর স্থলে কোরবানি হয়ে যায় একটি দুম্বা। প্রতীকী এই ঘটনার অন্তর্নিহিত বাণী স্রষ্টার প্রতি পরিপূর্ণ আনুগত্য ও ত্যাগ স্বীকার।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, কোরবানির মর্ম অনুবাধন করে সমাজে শান্তি ও কল্যাণের পথ রচনা করতে সকলকে সংযম ও ত্যাগের মানসিকতায় উজ্জীবিত হতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত। এখানে সব ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম ও আচার অনুষ্ঠানাদি পালন করে আসছে। এটা বাংলাদেশের সম্প্রীতির এক অনুপম ঐতিহ্য।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেছেন, ঈদ শান্তি, সহমর্মিতা, ত্যাগ ও ভ্রাতৃত্ববোধের শিক্ষা দেয়। আসুন, আমরা সকলে পবিত্র ঈদুল-আজহার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনকল্যাণমুখী কাজে অংশগ্রহণ করি এবং বৈষম্যহীন সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তুলি। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশবাসী ও বিশ্বের সকল মুসলিম জনগোষ্ঠীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী।
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, ত্যাগের মহিমায় মহিমান্বিত প্রতি বছর ঈদুল আজহা আমাদের মাঝে ফিরে আসে। স্বার্থপরতা পরিহার করে মানবতার কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করা কোরবানির প্রধান শিক্ষা। হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-ক্রোধকে পরিহার করে সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় আত্মনিবেদিত হওয়া আমাদের কর্তব্য। কোরবানির যে মূল শিক্ষা তা ব্যক্তিজীবনে প্রতিফলিত করে মানবকল্যাণে ব্রতী হওয়ার মাধ্যমে মহান আল্লাহ রাব্বুল আল-আমিনের সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভ সম্ভব।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত তিন দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
নগরীর লাখ লাখ বাসিন্দা গ্রামের বাড়িতে আপনজন ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে ঈদের খুশি ভাগাভাগি করতে ইতোমধ্যে রাজধানী ছেড়ে গিয়েছেন এবং অনেকে যাচ্ছেন।
উৎসবের আমেজ দিতে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও সড়ক দ্বীপ জাতীয় ও ঈদ মোবারক খচিত পতাকা দিয়ে সুশোভিত করা হয়েছে। এর পাশাপাশি সব সরকারি-বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা ও ঈদ মোবারক খচিত পতাকা উত্তোলন করা হবে। এ ছাড়া নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের সব কারাগার, সরকারি হাসপাতাল, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র, বৃদ্ধাশ্রম, শিশুসদন, ছোটমনি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, সরকারি আশ্রয় কেন্দ্র, সেফ হোমস, দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্র এবং শিশু ও মাতৃসদনে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন