সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে যমুনার ভাঙনে বিলীন ৪ প্রাথমিক বিদ্যালয়
সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙন শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) সকাল থেকে তীব্র স্রোতের কারণে ৮০ নম্বর চাঁদপুর ও রেহাই মৌসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
বুধবার (১৯ অক্টোবর) মিটুয়ানী ও চর মুরাদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বিলীন হয়। এই বিদ্যালয়গুলোর প্রায় ৯০০ শিক্ষার্থীর পড়াশোনা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এদিকে, চৌহালীতে চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের কিছু অংশ মঙ্গলবার দাঁড়িয়ে থাকলেও পরে স্রোতের কারণে সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, চৌহালীর সদিয়া চাঁদপুর ইউনিয়নের পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে ভাঙন চলছে। এছাড়া নদীতে পানি বৃদ্ধি ও কমার সময় তীব্র স্রোতের কারণে দেওয়ানতলা, সংকরহাটি, গাবেরপাড়, মাঝগ্রাম সদিয়া ও চাঁদপুর গ্রামে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে এলাকায় শিক্ষা বিস্তারে স্থানীয়দের প্রচেষ্টায় ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি পাকা ভবন মঙ্গলবার নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
এ বিষয়ে চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাকিম জানান, বিদ্যালয় ভবন আমাদের চোখের সামনে বিলীন হলেও করার কিছু নেই। পাউবোসহ সংশ্লিষ্টদের বারবার বলেও স্কুলটি রক্ষা হলো না। যদি এখানে স্থায়ী তীর সংরক্ষণ কাজ করে দিতো তাহলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। শিক্ষার্থী রেখা খাতুন ও জাকির হোসেন জানান, স্কুলঘর নদীতে চলে গেল। এখন আমরা পড়াশোনা করব কোথায়। আমরা একটা ঘর চাই। আবার স্কুলে যেতে চাই।
এ বিষয়ে সদিয়া চাঁদপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম জাহিদ জানান, ভাঙন রোধে শুনেছি একটি প্রকল্প অনুমোদন হলেও কাজ শুরু না হওয়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ চারটি গ্রামের অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে। ভাঙন তদারকির দায়িত্বে থাকা সিরাজগঞ্জ পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মিল্টন হোসেন জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোন মন্তব্য করতে পারব না। এ বিষয়ে চৌহালী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর ফিরোজ বলেন, গত পাঁচ দিনে উপজেলার চারটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যমুনাগর্ভে বিলীন হয়েছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তবে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে আশপাশের উঁচু স্থানে টিন দিয়ে ঘর তুলে পাঠদানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, দুর্গম চরাঞ্চলে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর আমাদের মতামত না নিয়ে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেন। তবে ভাঙন রোধের ব্যাপারে তিনি কোন মন্তব্য করেননি। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পাবনার বেড়া কৈতলা নির্মাণ বিভাগের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী শাহীন রেজা জানান, বন্যা এবং নদী তীর ক্ষয়ের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার বিনিয়োগ কর্মসূচি (এফ.আর.ই.আর.এম.আই.পি) প্রকল্প-২ এর আওতায় ৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে চৌহালীর সদিয়া চাঁদপুর ইউনিয়নের মেহেরনগর থেকে এনায়েতপুর বাঁধ পর্যন্ত প্রায় সাত কিলোমিটার এলাকায় আন্ডার ওয়াটার ওয়েব প্রটেকশনের কাজ করা হবে। এজন্য জিও ব্যাগ ফেলার কাজ করা হবে। তবে বর্তমানে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চূড়ান্তের কার্যক্রম চলছে। ভাঙনের এ বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন