সিরাজগঞ্জে নামাজ আদায় ও মসজিদ দেখতে সাইকেল যোগে বৃদ্ধের ২০৬ কিলোমিটার পাড়ি!
সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার সদ্যনির্মিত দৃষ্টিনন্দন মসজিদে জুম্মার নামাজ ও নিজ চোখে মসজিদটি দেখার জন্য সুদুর বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল খুলনা বিভাগের মাগুরা জেলা থেকে আবুল হোসেন (৮০) নামে এক বৃদ্ধ মুরুব্বি সাইকেল যোগে ২০৬ কিঃ মিঃ পথ অতিক্রম করে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি পৌর এলাকায় অবস্থিত আল-আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদে।
সদ্য নির্মিত দৃষ্টিনন্দন নির্মাণ শৈলীতে ভরপুর আল-আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদ ভবনটি দেখলেই মন ভরে যাবে, মানব সৃষ্টির নির্মাণ শৈলীতে স্রষ্টার এ যেন অপার বন্ধন।
বুধবার (৪ জানুয়ারী) আসরের নামাজের আগে তিনি আল-আমান বাহেলা খাতুন মসজিদে পৌঁছলে ইমাম, মুয়াজ্জিনসহ স্থানীয় মুসল্লিবর্গ তাকে স্বাগত জানান। মসজিদ এলাকা সূত্রে জানা গেছে, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল খুলনা বিভাগের মাগুরা জেলার সদর উপজেলার আঠারখাদা ইউনিয়নের বাসিন্দা।
গত দুই সপ্তাহ পূর্বে দৃষ্টিনন্দন কারুকার্য সম্পন্ন আল-আমান মসজিদের ভিডিও-চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দেখে তিনি সিদ্ধান্ত নেন মসজিদটিতে জুম্মার নামাজ আদায় করবেন এবং নিজ চোখে মসজিদটি এক নজর দেখবেন। সেই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে গত সোমবার (২ জানুয়ারী) গ্রামের মসজিদে ফজরের নামাজ আদায় করে মাগুরা থেকে নিজে বাই সাইকেল চালিয়ে বেলকুচি পৌর এলাকায় অবস্থিত আল-আমান বাহেলা খাতুন মসজিদ স্থলে এসে পৌঁছেন। বৃদ্ধ আবুল হোসেনের চার পুত্র ও পাঁচ কন্যা সন্তানের জনক। তিনি কৃষি কাজ করেন।
আবুল হোসেন জানান, আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মসজিদের ভিডিও দেখি। তারপর এ মসজিদে দুই রাকাত নামাজ আদায় এবং নিজ চোখে দেখার ইচ্ছা জাগে। তাই ইচ্ছে পূরণের লক্ষ্যে গত (২ জানুয়ারী) ফজরের নামাজ আদায় করে বাই সাইকেল চালিয়ে রওনা হই। আল্লাহ আমাকে ভালোভাবে বুধবার আসরের পূর্বেই পৌঁছে দিয়েছেন। আছি সুস্থ আছি, এখানে আসার পর আমাকে সকলেই অনেক সমাদর করেছেন। তিনি শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) জুম্মার নামাজ আদায় পূর্বক বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করবো। বেলকুচি পৌর এলাকার মুকন্দগাঁতী গ্রামের দানবীর শিল্পপতি আলহাজ্ব মোহাম্মদ আলী সরকার ২০১৬ সালে বেলকুচি পৌরসভার দক্ষিণ পার্শ্বে আড়াই বিঘা জমির উপর তার ছেলে আল-আমান ও মা বাহেলা খাতুনের নামে আল-আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তার নিজ অর্থায়নে ৩০ কোটি টাকারও বেশি টাকা ব্যয় করে দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদটি নির্মাণ করতে সময় লেগেছে প্রায় চার বৎসর। রহমত গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার এ মসজিদটি নির্মাণ করেছেন।
তিনি গত বছরের আগষ্টে পরলোকগমন করেন। পরবর্তীতে মসজিদটি তার পরিবারের চেষ্টায় নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়। আল-আমান মসজিদের খাদেম আব্দুল মান্নান জানান, এ মসজিদে বিশালা একটি গম্বুজ রয়েছে। এ ছাড়া মেঝেতে সাদা রঙের ঝকঝকে টাইলস ও পিলারগুলো মার্বেল পাথর জড়ানো হয়েছে। চায়না থেকে আমদানি করা কয়েকটি ঝাড়বাতি লাগানো হয়েছে। দুই পাশে নির্মাণাধীন এগারো তলা সমতুল্য একশত দশ ফিট উচ্চতার মিনার থেকে আজানের ধ্বনি জমিনে ছড়িয়ে পড়ে। মসজিদে প্রায় পাঁচ হাজার মুসল্লি নামাজ একসাথে নামাজ আদায় করতে পারবে। শবে বরাতের রাতে বহু অঞ্চলের মানুষ নামাজ ও মসজিদ দর্শনে আসে।
আল আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদের খতিব মাওঃ গোলাম কিবরিয়া বলেন, আবুল হোসেন ৮০ বছর বয়সে যে ভাবে বাই সাইকেল চালিয়ে সুদূর খুলনা বিভাগের মাগুরা জেলা থেকে এ মসজিদে নামাজ আদায় করতে এসেছেন, আমি মনে করি এটি ইমানি শক্তির জন্যই সম্ভব হয়েছে। ইমান শক্ত না থাকলে এতো পথ শুধু সাইকেল চালিয়ে আসা সম্ভব হতো না। এ ব্যাপারে বেলকুচি পৌর মেয়র সাজ্জাদুল হক রেজা জানায়, মসজিদটি প্রথম দেখাতেই যে কোন লোকের দৃষ্টি কাড়ে। স্থানীয় ও দেশি-বিদেশি পর্যটকের নিকট মসজিদের নির্মাণশৈলী বেশ দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয়। বেলকুচি আঞ্চলিক ব্যস্ততম সড়কে যাতায়াতকারী যে কেউ এক নজর দেখতেই থমকে দাঁড়ান।
পৌর মেয়র আরও জানান, বৃদ্ধ বয়সে খুলনা বিভাগের মাগুরা জেলা থেকে নিজে বাই সাইকেল চালিয়ে বেলকুচি এসেছে, এটা আসলে অন্যরকম বিষয়। তাকে পৌরসভার পক্ষ থেকে সম্মানিত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তার ইচ্ছা শক্তিকে অনেক সম্মান জানাই।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন