সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় দেদারছে চলছে জুয়া! পুলিশের নিরব ভূমিকা
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2022/09/1_20220924_131941_0000-900x450.png)
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2025/02/475351977_1256003665483861_2959209934144112011_n.jpg)
আধ্যাত্মিক রাজধানী খ্যাত সিলেট সকল ধর্ম প্রিয় মানুষদের কাছে অতি-পবিত্র স্থান। এর পবিত্র রক্ষা করা প্রশাসন সহ সকলের জরুরী। এদিকে, আধ্যাত্মিক রাজধানীতে ইসলামের ওলিদের মাজার এলাকাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে জমজমাট জুয়ার আসর।
সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এখানে থাকে জুয়াড়িদের আনাগোনা। ফলে বিনষ্ঠ হচ্ছে মাজার এলাকার পরিবেশ। বলছিলাম, এসএমপির দক্ষিণ সুরমা থানার জিঞ্জির শাহ (র.) এর মাজার এলাকার কথা। শুধু জিঞ্জির শাহর মাজার এলাকায় নয় দক্ষিণ সুরমার আরো একাধিক স্পটে চলছে অসামাজিক কার্যকলাপ।
দক্ষিণ সুরমা থানা ও দক্ষিণ সুরমা পুলিশ ফাঁড়ির আওতাধীন কদমতলী ফেরিঘাট এলাকায় একই স্থানে ৪টি ঘরে চার প্রকারের তীর জুয়া এবং ঝান্ডুমান্ডু নামক জুয়ার আসর চালায় প্রায় ১৪জন লোক। উল্লেখিত এই জুয়ার বোর্ডের মালিক হচ্ছে বহুল আলোচিত ইয়াবা সম্রাট ও প্রখ্যাত জুয়াড়ি জনৈক হারুন। এখানে সকাল থেকে শেষ রাত পর্যন্ত জুয়ার বোর্ড পরিচালনা করা হয়ে থাকে। এ ব্যপারে জানতে চাইলে জনৈক হারুন জানায়, আমরা পুলিশের সকল এজেন্সিকে টাকা দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে জুয়ার বোর্ড পরিচালনা করে আসছি। পুলিশ আমাদের সেল্টার দেয় বলে কখনও কোন অসুবিধা হয় না। আমি এই ব্যবসা করে আমার সন্তানদের মাদ্রাসায় পড়াচ্ছি। এসএমপির মুখপাত্র ও এডিসি আশরাফ উল্লাহ তাহের স্যারের সাথে আমার ভালো সম্পর্ক রয়েছে। তাই এই সব কাজকর্ম করতে গিয়ে আমার কোন অসুবিধা হয় না। উনার মতো কোন অফিসার যদি বদলি হয়ে যায় তবে ঐ জায়গায় যিনি আসেন আমি তাকেও যেকোনো ভাবে ম্যানেজ করে নেই। নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা গেছে, আজ অবদি হারুনের জুয়ার বোর্ডে পুলিশের কোন অভিযান হয়নি। হারুনকে রাখা হয়েছে জামাই আদরে।
ঐতিহাসিক কীন ব্রীজ সিলেট নগরীর অন্যতম প্রবেশদ্বার। এই কীন ব্রীজের নিচে দক্ষিণ অংশে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বসে তীর শিলং, ঝান্ডু মান্ডু, তিন তাস নামক জুয়ার হাট। এর নিয়ন্ত্রণ করেন তাহের, কামাল ও নজরুল নামক জুয়ারীরা । ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত এই চক্রের আরেক জোয়ার হাট বসে রেলওয়ে স্টেশন ও বাস স্টেশনের মধ্যখানে। সকাল বেলা নগরীতে প্রবেশ করা ও বাহির হওয়া লোকদের টার্গেট করে বসানো হয় তিন তাসের বোর্ড। পুলিশ প্রশাসনের নাকের ডগায় উন্মুক্ত এসকল জুয়া এবং তীর শিলং খেলা প্রতিদিন হলেও রহস্যজনক কারণে এসএমপি পুলিশ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
সংশ্লিস্ট সূত্রমতে, দীর্ঘদিন থেকে মাদকসহ এসব অবৈধ ব্যবসা পরিচালিত হয়ে আসলেও পুলিশের কোন ধরণের ভূমিকা নেই বললেই চলে। দক্ষিণ সুরমা থানা ও কদমতলী ফাঁড়ি পুলিশকে ম্যানেজ করে চলছে জুয়ার এমন ব্যবসা। প্রতিদিন সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত চলে জুয়ার আসর। বরইকান্দিসহ আশপাশ এলাকার দিনমজুরসহ সাধারণ মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব অবৈধ কর্মকান্ড বন্ধ করে দেয়ার জন্য স্থানীয়রা পুলিশ প্রশাসনসহ আইনশৃক্সখলা বাহিনীর কাছে একাধিকবার নালিশও করেন। কিন্তু পুলিশের কিছু আসাধু ব্যক্তিকে ম্যানেজ করে টেকনিক্যাল রোড সংলগ্ন রেলওয়ে কলোনীর বাসিন্দা আবুল কাশেমসহ তার সহযোগীরা তীর শিলং, জুয়ার বোর্ডসহ বিভিন্ন ধরণের অবৈধ ব্যবসা পরিচালিত করে আসছে। রাত হলেও এখানে আনাগুনা শুরু হয় মাদক সেবীদের। আর তীর শিলং থেকে প্রাপ্ত অর্থ চলে যাচ্ছে ভারতে।
স্থানীয়রা জানান, মাজার এলাকায় স্থানীয় প্রভাবশালী কাশেম ও জামালের নেতৃত্বে এখানে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী জুয়ার সিন্ডিকেট। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এখানে চলে জমজমাট জুয়ার আসর। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করা হয়। এছাড়াও এখান থেকে স্থানীয় পুলিশ, ডিবি পুলিশ ও কিছু অসাধু সাংবাদিকদের নামে নিয়মিত টাকা আদায় করা হয়। যার ফলে তারা বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে।
সূত্র থেকে জানা যায়, জুয়াড়ী কাশেম ও জামাল কোন কিছুর তোয়াক্কা না করেই মাজার এলাকার পৃথক দুটি স্থানে স্থানীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে চালিয়ে যাচ্ছে তীর, জান্ডুমুন্ডু, তিন তাশ ও কাটাকাটি নামক জুয়ার আসর। প্রকাশ্যে এই জুয়ার আসর বসলেও নিরব ভূমিকা পালন করায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। এর ফলে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। যদিও কোন সময় প্রশাসন অভিযানে যায়, তখন অভিযানের আগেই খবর পৌঁছে যায় জুয়াড়িদের কাছে। আর খবর পেয়েই তারা পলিয়ে যায়। পুলিশ চলে আসার পর আবারো চলে তাদের আসর।
জানা গেছে, দক্ষিণ সুরমার শীর্ষ জুয়াড়ী কাশেম ও জামাল দীর্ঘ দিন থেকে এই স্থানে জুয়ার বোর্ড পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু স্থানীয় কিছু প্রতিবাদীরা এই জুয়ার বোর্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে তার কোন সুফল পাচ্ছেন না। যার ফলে সে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সিলেট নগরীর নগরী অন্যান্য এলাকায় জুয়াড়িকে আটক করেছে পুলিশ। তবে রহস্যজনক কারনে এই এলাকার জুয়ার বোর্ড এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে।
এসব জুয়ার বোর্ড ছাড়াও দক্ষিণ সুরমায় আরো বেশ কয়েকজন তীর শিলংয়ের এজেন্ট রয়েছে। তারা প্রতিদিনই শিলং তীরের টাকা কালেকশন করে ভারতে পাঠাচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সিলেট পুরাতন রেলওয়ে স্টেশনের মেইন রাস্তার পাশে রেলওয়ের পরিত্যাক্ত বাথরুমমে মিন্টুর বোর্ড, কাজিরবাজার ব্রীজের দক্ষিণ পাশে রেলক্রসিং সংলগ্ন ফারুকের বোর্ড, দক্ষিণ সুরমা পুলিশ ফাঁড়ির নামনে শতাব্দী রেষ্টুরেন্টের পাশে আক্তারের বোর্ড, কদমতলী বাসটার্মিনালে একটি টং দোকানে আপেলের বোর্ড, হবিগঞ্জ-সিলেট এ·প্রেস বাস কাউন্টারের সামনে আলমগীরের বোর্ড, কদমতলী ফল মার্কেটের ভিতরে সুরমানের বোর্ড। এসব স্থানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তীর শিলংয়ের জুয়ার বোর্ড থেকে নাম্বার বিক্রি করা হয়। এই নাম্বার বিক্রি থেকে প্রাপ্ত লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতিদিনই ভারতে পাচার হলেও পুলিশের ভূমিকা খুবই রহস্যজনক।
সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশ, এসএমপির গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) এবং দক্ষিণ সুরমা পুলিশ ফাঁড়িকে প্রতিদিন এই জুয়ার আসর থেকে প্রতিদিনই একটি নির্দিষ্ট পরিমানের টাকা এখান থেকে দেয়া হয়। দক্ষিণ সুরমা পুলিশ ফাঁড়ির একজন এএসআই প্রতিদিন নিয়মিত এসব টাকা কালেকশন করেন। ফলে কোথাও সংবাদ প্রকাশিত না হলে এখানে কোন অভিযান পরিচালনা করা হয়না। আর সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর নাম মাত্র চালানো অভিযানে তেমন কোন সাফল্যও আসেনা।
এদিকে, চলতি বছরের জানুয়ারী মাস থেকে এসএমপি এলাকার কোন জুয়ার বোর্ডে ডিবি পুলিশের কোন অভিযান লক্ষ্য করা যায়নি। বিষয়টি অত্যন্ত রহস্যজনক। সচেতম মহল মনে করছেন প্রশাসনের সংশ্লিস্টদের ভাগভাটোয়ারা দিয়েই প্রকাশ্যে চলছে এসব অপকর্ম। এনিয়ে জনমনে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
অন্যদিকে, প্রশাসনের তৎপরতা না থাকায় এই এলাকাটি যেন জুয়াড়িদের অভয়ারণ্য। নেই কোন পুলিশী অভিযান। বিধায় এই জুয়ার আসরে পার্শ্ববর্তী এলাকাসহ দুর-দুরান্ত থেকে জুয়াড়ীরা জুয়া খেলতে আসে। জুয়াড়ীরা কোন প্রকার ভয়ভীতির তোয়াক্কা না করে নির্বিগ্নে প্রকাশ্যে দিনে ও রাতের অন্ধকারে লাইট জালিয়ে জুয়া খেলা চালিয়ে যাচ্ছে। জুয়া খেলার পাশাপাশি বাংলা মদ, ফেন্সিডিল ও গাজার ব্যবস্থা থাকায় উঠতি বয়সের ছেলেরাও এখানে এসে ভীড় জমায়। ফলে এলাকায় চুরি, ছিনতাই বেড়েই চলছে। জুয়া খেলার নিয়ন্ত্রণ ও টাকা ভাগাভাগি নিয়ে প্রায়ই ঘটছে মারামারির ঘটনা।
এসব জুয়ার আসর এলাকার ব্যবসায়ীরা জানান, প্রকাশ্যে দিনদুপুরে এসব জুয়ার আসর বসলেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। জুয়ারীদের আনাগুনাতে আমরা রীতিমত ব্যবসাও করতে পারছিনা। বাঁধা দিয়ে উল্টো পুলিশ দিয়ে হয়রানীর ভয় দেখানো হয়। মাঝে মধ্যে পুলিশের কিছু এএসআই ও ডিবি পুলিশের কিছু সদস্যদের আনাগুনা দেখা যায়। এজন্য আমরা অনেকটা বাধ্য হয়েই জুয়ারীদের উৎপাত সহ্য করে যাচ্ছি।
দক্ষিণ সুরমা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আবুল হোসেন বলেন, জুয়ার বিষয়ে আমাদের অভিযান চলমান আছে। আমরা আরো অভিযান জোরদার করব।
এ ব্যপারে দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি কামরুল হাসান তালুকদার গণমাধ্যমকে জানান, গতকালও অভিযান হয়েছে। আমাদেরকে তথ্য দিন, আমরা অভিযান আরো জোরদার করব।
এসএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) সোহেল রেজা গণমাধ্যমকে জানান, আমরা গত ৩/৪দিন আগে অভিযান চালিয়ে ৪ জনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়েছি। আপনাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকলে আমাদেরকে দিয়ে সহযোগীতা করুন। আমরা অভিযান অব্যাহত রাখব।
এসএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি) তোফায়েল আহমদ গণমাধ্যমকে জানান, ডিবি থেকে নিয়মিত অভিযান হয়। গতকাল রাতেও জুয়ার বিরুদ্ধে অভিযান হয়েছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এসএমপির মুখপাত্র ও এডিসি (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) আশরাফ উল্লাহ তাহের গণমাধ্যমকে জানান, এসএমপি পুলিশ বিভিন্ন সময় এসব জুয়ার স্পটে অভিযান চালায়, বিজ্ঞ আদালতে প্রডিকিউশন দাখিল করে। কিন্তু লক্ষ্য করা যায় আসামিরা শীঘ্রই জামিন নিয়ে বেরিয়ে এসে পুনরায় অবৈধ শিলং, জুয়া খেলা পরিচালনা করে। তীর শিলং খেলার মাধ্যমে আমাদের দেশ হতে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ অর্থ হোয়াটসআপ এবং মেসেজ এর মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশে চলে যাচ্ছে যা হুন্ডি এবং মানি লন্ডারিং এর একটি প্রতিরূপ। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র গতানুগতিক প্রডিকিউশন মামলা দাখিল না করে কঠোর আইনি ব্যবস্থা মানিলন্ডারিং মামলা দায়েরের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় অপরাধীদের আনতে হবে।
দক্ষিণ সুরমা থানা ও দক্ষিণ সুরমা ফাঁড়ি পুলিশ নিয়মিত টহলের মধ্য দিয়ে এ সকল অনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধে আরো পেশাদারী এবং জবাবদিহিতামূলক পুলিশিং করার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিটের ঊর্ধ্বতন অফিসার এবং তাদেরকে অবহিত করা হবে।
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2024/12/469719549_122234398946008134_2936380767280646127_n.jpg)
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন