সীমান্তে রোহিঙ্গাদের জটলা বাড়ছে, দলে দলে ঢোকার আশঙ্কা

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা ও সরকারি বাহিনীর সংঘর্ষের পরে বাংলাদেশ সীমান্তে জমায়েত হতে শুরু করেছে রোহিঙ্গারা। বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে ছোট ছোট দলে তাদের জটলা করতে দেখা গেছে বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আনওয়ারুল আজিম। তিনি বলেন, ‘আমরা ৫০ থেকে দুইশ লোকের জটলা সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে দেখছি।’

বিজিবির এই ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক বলেন, ‘আমি (শুক্রবার) সারাদিন সীমান্ত অঞ্চলে ছিলাম। আমাদের ধারণা দুই হাজারের মতো রোহিঙ্গা সীমান্তে অবস্থান করছে। তাদের পুশব্যাক করার জন্য আমরা প্রস্তুত। আমাদের বাহিনী ২৪ ঘণ্টা কড়া পাহারা দিচ্ছে যেন রোহিঙ্গারা ঢুকতে না পারে।’

গত বছরের অক্টোবর মাসে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সরকারি বাহিনীর একই ধরনের সংঘর্ষের পর রোহিঙ্গারা দলে দলে বাংলাদেশে ঢুকেছিল। এবারও সেরকম ঘটনা ঘটবে কিনা জানতে চাইলে আনওয়ারুল আজিম বলেন, ‘এটি বলা মুশকিল। সীমান্তের ওপারে সরকারি বাহিনী অত্যাচার না চালালে হয়তো দলে দলে রোহিঙ্গা ঢুকবে না। তবে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হলে এদিকে বেশি পরিমাণে রোহিঙ্গাদের চলে আসার আশঙ্কা আছে।’

রাতের বেলায় রোহিঙ্গারা ঢুকতে চাইলে কিভাবে বাধা দেওয়া হয়, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গারা উগ্র না। তাদের নিষেধ করা হলে তারা কাকুতি-মিনতি করে। আমরা না ঢুকতে দিতে চাইলে তারা রাতটুকু থাকার অনুরোধ করে সকালে চলে যায়।’

কক্সবাজার প্রতিনিধি জানিয়েছেন, শুক্রবার সকালে কক্সবাজারের টেকনাফের নাফ নদীর জলসীমানা অতিক্রম করার সময় ১৪৬ রোহিঙ্গাকে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি। এছাড়া বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের বিভিন্ন স্থান দিয়ে রোহিঙ্গারা ঢুকতে শুরু করেছে। গত দুই দিনে বালুখালী ক্যাম্পে দুই শতাধিক রোহিঙ্গা পরিবার আশ্রয় নিয়েছে বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্পের ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান লালু মাঝি। শুক্রবার দিনের বেলায় কেবল একটি রোহিঙ্গা পরিবারকে আসতে দেখেছেন বলে জানান তিনি। তবে রাতে রোহিঙ্গারা বড় বড় দলে ঢুকতে পারে বলে আশঙ্কার করছেন তিনি।

টেকনাফ ২নং বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর সাইফুল ইসলাম জমাদ্দার বলেন, ‘আরকান রাজ্যের বিদ্রোহীদের সঙ্গে মিয়ানমার পুলিশের সংঘর্ষের পর সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিজিবি। রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতেও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সকালে ১৪৬ জনকে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করার সময় ফেরত পাঠানো হয়েছে।’

এদিকে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা ও সরকারি বাহিনীর সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৭১ জনে দাঁড়িয়েছে। দেশটির নেত্রী অং সান সু চি’র কার্যালয় থেকে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

মিয়ানমার সরকারের দাবি, বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) রোহিঙ্গারা ২৪টি পুলিশ পোস্টে সমন্বিত হামলা চালানোর পাশাপাশি একটি সেনাঘাঁটিতে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করে। এসময় পুলিশের সঙ্গে হামলাকারীদের সংঘর্ষ হয়। নিহতদের মধ্যে রোহিঙ্গা, পুলিশ ও সেনা সদস্যরা রয়েছেন।

সু চি’র দফতর থেকে জানানো হয়, নিরাপত্তা বাহিনীর অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন এই সংঘর্ষে। আর ‘উগ্র বাঙালি সন্ত্রাসী’দের ৫৯টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এমন ভাষায়ই রোহিঙ্গাদের অভিহিত করে থাকে বার্মিজ কর্তৃপক্ষ।