সুনামগঞ্জের কুশিয়ারা নদীতে একের পর এক জেগে উঠছে বালুচর

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে কুশিয়ারা নদীতে একের পর এক ৬টি বিশাল আয়তনের বালুচর জেগে উঠছে। অযত্ন অবহেলায় পড়ে আছে কোটি কোটি টাকা মূল্যের প্রাকৃতিক বালু সম্পদ। শুধু রক্ষনা-বেক্ষনের অভাবে এসব বালু যে যেভাবে পারছে নিয়ে যাচ্ছে। বালু মহাল ঘোষণা না হওয়ায় সরকার হারাচ্ছে বিশাল অংকের রাজস্ব। এসব ছোট বালু খুবই উন্নত। বিল্ডিংয়ের ফিনিশিং কাজে ব্যবহার করা হয়। অন্য সাধারণ বালু থেকে এসব বালু অনেক দামি।

সরজমিনে দেখা যায়, জগন্নাথপুর উপজেলার আশারকান্দি ইউনিয়নের দিঘলবাক দক্ষিণ মৌজা স্থিত জেএল নং-২৬২/২৬১ এলাকায় কুশিয়ারা নদীর উত্তর পাড়ে এ বছর নতুন করে জেগেছে বিশাল আয়তনের বালুচর।

এছাড়া পাইলগাঁও ইউনিয়নের একবারপুর মৌজা স্থিত জেএল নং-২৩৭/২৩৯ এলাকায় নদীর দক্ষিণ পাড়ে আরেকটি বালুচর জেগেছে।

এ সময় স্থানীয়দের মধ্যে অনেকে জানান, গত কয়েক মাস ধরে এখানে বালুচর দেখা যাচ্ছে। এসব প্রাকৃতিক বালু সম্পদ রক্ষায় বৈধ ইজারা পাওয়ার জন্য ১৪ মার্চ রোববার জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করেন সাবেক ইউপি সদস্য ও আশারকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সম্পাদক শাহ খায়রুল ইসলাম ও শাহ আবদুল হক।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, কুশিয়ারা নদীতে বালুচর জেগে উঠার খবর পেয়েছি। স্থানীয় ভূমি কর্মকর্তা পরিদর্শন করেছেন। নদীর এ অংশটি নবীগঞ্জের আওতায় পড়েছে। তাই নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে আলাপ হয়েছে। আলোচনাক্রমে বালু সম্পদ রক্ষায় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাবেক ইউপি সদস্য ও আশারকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সম্পাদক খায়রুল ইসলাম বলেন, এসব বালুচর আমাদের জগন্নাথপুর উপজেলার সম্পদ। কাগজ-পত্রে প্রমাণিত আছে। শুধু রক্ষনা-বেক্ষনের অভাবে নবীগঞ্জের একটি মহল অবৈধ ভাবে এসব বালু লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে। এতে সরকার বিশাল অংকের রাজস্ব প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই প্রাকৃতিক সম্পদ বালু রক্ষা করতে ও বৈধ ইজারা প্রদানে তিনি সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান।
এমতাবস্থায় জরুরী ভিত্তিতে বালু লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে বালু সম্পদ রক্ষা করা যাবে না।

এছাড়া গত বছর কুশিয়ারা নদীর পাইলগাঁও ইউনিয়নের ভাঙ্গাবাড়ি, রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের রাণীগঞ্জ বাজার, বালিশ্রী ও টেকইয়া এলাকায় বিশাল আয়তনের বালুচর জেগে উঠে। এসব বালু যে যেভাবে পারছে নিয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে রাণীগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী ধণেশ চন্দ্র রায় বলেন, এসব বালুচর বৈধ ভাবে ইজারা পাওয়ার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন-নিবেদন করা হয়েছে। বালু মহাল ঘোষণা না হওয়ায় ইজারা প্রদান করা হচ্ছে না। এ সুযোগে যে যেভাবে পারছে বালু উত্তোলন করে নিয়ে যাচ্ছে। এতে সরকার বড় অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। জনগণও ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। এসব বালু উত্তোলন করা হলে নদীর গভীরতা বৃদ্ধি পেত। বর্তমানে কুশিয়ারা নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে বিভিন্ন স্থানে চর জেগে উঠেছে। এতে নদীতে অল্প পানি হলেই অকাল বন্যার সৃষ্টি হয়। হুমকির মুখে পড়ে ফসলি জমি ও মানুষের বাড়িঘর। তবে নদীর গভীরতা বাড়লে অকাল বন্যা থেকে অনেকটা রক্ষা পাওয়া যেত।