সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে চোরাকারবারী ও চাঁদাবাজদের গ্রেফতারে নেই অভিযান: শ্রমিকের মৃত্যু
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2025/02/1-Sunamgonj-1-Madar-Pic-13.02.25-800x450.jpg)
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2025/02/475351977_1256003665483861_2959209934144112011_n.jpg)
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা সীমান্তে দীর্ঘদিন যাবত চোরাকারবারী ও চাঁদাবাজদের চলছে রামরাজত্ব। একাধিক মামলার আসামী ও চিহ্নিত চোরাকারবারীরা নিজেদের সোর্স পরিচয় দিয়ে বিজিবি, পুলিশ ও সাংবাদিকদের নাম ভাংগিয়ে চাঁদা উত্তোলন করে প্রতিদিন ভারত থেকে পাচাঁর করছে কোটিকোটি টাকার বিভিন্ন মালামাল।
এর ফলে একদিকে লাখলাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার, অন্যদিকে চোরাচালানের কারণে নানান দূর্ঘটনাসহ বেড়েই চলেছে মৃত্যুর মিছিল। তারপরও সোর্স পরিচয়ধারী ও চিহ্নিত চোরাকারবারীদের গ্রেফতারের জন্য আজ পর্যন্ত নেওয়া হয়নি জোড়ালো কোন পদক্ষেপ।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- জেলার তাহিরপুর উপজেলার বালিয়াঘাট ও টেকেরঘাট সীমান্তের লাকমা এলাকা দিয়ে ভারত থেকে অবৈধ ভাবে কয়লা পাচাঁর করতে গিয়ে আবারো গুহায় পড়ে রজব আলী (৪০) নামের এক শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বুধবার (১২ ফেব্রæয়ারী) সন্ধ্যায় পুলিশ ওই শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।
এই দুই সীমান্তে কয়লা পাচাঁর করতে গিয়ে ভারতের ভিতরে তৈরি করা শতাধিক চোরাই কয়লার গুহায় মাটি চাপা পড়ে এপর্যন্ত অর্ধশতাধিক শিশু, কিশোর, যুবক ও বৃদ্ধের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। তারপরও সোর্স পরিচয়ধারী ও তাদের গডফাদার গ্রেফতার হয়নি।
জানা গেছে- লালঘাট, লাকমা, টেকেরঘাট পুলিশ ফাঁড়ি ও হাইস্কুলের পিছন দিয়েসহ নীলাদ্রী লেকপাড়, বুরুঙ্গা ছড়া, রজনী লাইন এলাকা দিয়ে প্রতিদিন ভোর থেকে কয়লা ও মাদক পাচাঁর শুরু হয়, চলে মধ্যরাত পর্যন্ত।
পাচাঁরকৃত শতশত মেঃটন কয়লা বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন নীলাদ্রী লেকপাড়, কয়লার ঘাট ও জয়বাংলা বাজারের পাশে অবস্থিত ২০-৩০টি ডিপুতে ওপেন মজুত করার পর, পাচাঁরকৃত প্রতি বস্তা কয়লা থেকে পুলিশের নাম ভাংগিয়ে ৫০টাকা, বিজিবির নামে ১শ টাকা, সোর্স বাবদ ৫০টাকাসহ স্থানীয় সংবাদকর্মীদের নামে ৫০টাকা করে চাঁদা উত্তোলন করে সোর্স পরিচয়ধারীরা।
একই ভাবে চাঁদা নিয়ে পাশের চাঁনপুর সীমান্তের নয়াছড়া ও গারো ছড়া দিয়ে কয়লা পাচাঁর করা হয়।
চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য খ্যাত এই চাঁনপুর সীমান্তের রাজাই, কড়ইগড়াসহ বারেকটিলার আনন্দপুর ও ১২০৩পিলার সংলগ্ন বিজিবি পোস্টের সামনে দিয়ে ও কাঠাল বাগান দিয়ে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয় এবং রাতভর ভারত থেকে পাচাঁর করা হয় কোটি টাকার ফুছকা, চিনি, নাসিরউদ্দিন বিড়ি, কম্বল, জিরা, ঘোড়া ও মদসহ অস্ত্র।
সম্প্রতি র্যাব বারেকটিলা থেকে অস্ত্র উদ্ধার করাসহ একাধিক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতারের পর এই সীমান্তে চোরাচালান ও চাঁদাবাজি বেড়ে যায়। পাচাঁরকৃত প্রতিবস্তা ফুছকা থেকে বিজিবির নাম ভাংগিয়ে ১৫০টাকা, পুলিশের নাম ভাংগিয়ে ১শ টাকা, চিনি প্রতিবস্তা বিজিবি ১শ টাকা, পুলিশ ৫০টাকা, প্রতি খাঁচা নাসিরউদ্দিন বিড়ি বিজিবি ১হাজার ৫শ টাকা, পুলিশ ১হাজার টাকাসহ অন্যান্য মালামাল থেকে চুক্তি ভিত্তিক চাঁদা নেয় সোর্স পরিচয়ধারীরা।
এই সীমান্তে কয়লা পাচাঁর করতে গিয়ে ও ভাগভাটোয়ারা নিয়ে সংঘর্ষে এপর্যন্ত ৮জনের মৃত্যু হয়েছে। তারপরও সোর্স ও চোরাকারবারীদের গ্রেফতারের কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়না।
আরো জানা গেছে- চোরাচালানের নিরাপদ রোড খ্যাত লাউড়গড় সীমান্তের জাদুকাটা নদী ও সাহিদাবাদ বিজিবি পোস্টের সামনে দিয়ে ভারত থেকে প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে কয়লা ও পাথরসহ উন্মুক্ত বালি পাচাঁর। শতশত ঠেলাগাড়ি বোঝাই করে পাচাঁরকৃত পাথর ও মোটর সাইকেল দিয়ে কয়লাসহ পিকআপ ও মাহিন্দ্র গাড়ি বোঝাই করে বালি বিজিবি ক্যাম্পের সামনের রাস্তা দিয়ে ওপেন পরিবহণ করা হলেও রহস্যজনক কারণে কোন পদক্ষেপ নেয়না বিজিবি।
আওয়ামীলীগ সরকারের আমল থেকে এই সীমান্তে আওয়ামীলীগের স্থানীয় চোরাকারবারীরা সিন্ডিকেডে তৈরি করে ওপেন বাণিজ্য করছে। তাদের নেতৃত্বে সীমান্ত চোরাচালান করতে গিয়ে ভারতীয় নাগরিকদের হাতে ও বিএসএফের তাড়া খেয়ে জাদুকাটা নদীতে ডুবে ও গুলিতে এপর্যন্ত শতাধিক লোকের মৃত্যু হয়েছে। তারপরও চিহ্নিত চোরাকারবারী ও সোর্সদের গ্রেফতার করাসহ তাদের কোটিকোটি টাকার অবৈধ অর্থ-সম্পদ উদ্ধারের জন্য নেই কোন পদক্ষেপ।
একই ভাবে চারাগাঁও সীমান্তের লালঘাট, বাঁশতলা, এলসি পয়েন্ট, জংগলবাড়ি ও কলাগাঁও এলাকা দিয়ে একাধিক মামলার আসামী ও আওয়ামীলীগ নেতারা নিজেদেরকে বিজিবি ও পুলিশের সোর্স পরিচয় দিয়ে সাংবাদিক ও প্রশাসনের নাম ভাংগিয়ে চাঁদা উত্তোলন করে গত ১৫বছর যাবত কোটিকোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ওপেন কয়লা ও চুনাপাথরসহ মাদকদ্রব্য পাচাঁর করে কোটিপতি হয়ে গেলেও তাদের বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
অথচ ওই সব সোর্স পরিচয়ধারীদের কারণে চারাগাঁও সীমান্তে কয়লা পাচাঁর করতে গিয়ে গুহায় মাটি চাপা পড়ে ও চোরাচালান নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় এপর্যন্ত ১৫ জনের মৃত্যু হচ্ছে। একই ভাবে বীরেন্দ্রনগর সীমান্তের লামাকাটা, সুন্দরবন ও কচুয়াছড়া এলাকা দিয়ে সোর্স পরিচয়ধারীরা মাদকদ্রব্য, চিনি, সুপারী, ফুছকা, গরু ও মাছসহ কসমেটিকস পাচাঁর করছে বলে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে।
এব্যাপারে সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল জাকারিয়া কাদির বলেন- সীমান্ত সুরক্ষা ও চোরাচালান প্রতিরোধ করার জন্য বিজিবির অভিযান অব্যাহত আছে।
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2024/12/469719549_122234398946008134_2936380767280646127_n.jpg)
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন