সেপ্টেম্বরেই খুলছে তাজমহল, আগ্রা ফোর্ট!

মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘ ছয় মাস বন্ধ থাকার পর অবশেষে খুলতে চলেছে বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম ভারতের দর্শনীয় স্থান ‘তাজমহল’।

আগামী ২১ সেপ্টেম্বর দর্শণার্থীদের জন্য তাজের দরজা খুলে দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। তবে প্রাথমিকভাবে দিনে মাত্র ৫ হাজার পর্যটককে তাজের ভিতরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে।

অন্যদিকে ওই একই দিনে খুলে দেওয়া হবে আগ্রা ফোর্টের প্রবেশদ্বার।
সেখানে প্রতিদিন আড়াই হাজার দর্শক ঢোকার অনুমতি পাবেন।

উল্লেখ্য, সম্রাজ্ঞী মুমতাজের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে মুঘল সম্রাট শাহ জাহান ভারতের আগ্রায় এই অনন্য স্থাপত্যটি তৈরি করেন। মুঘল স্থাপত্যের শ্রেষ্ঠ নমুনা হিসাবে বিবেচিত হয় তাজমহল। ১৯৮৩ সালে একে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসাবে ঘোষণা করে ইউনেস্কো এবং ভারতে অবস্থিত ‘মুসলিম শিল্পের রত্ন’ বলেও একে আখ্যায়িত করা হয়।

শুধু ভারত নয়, বিশ্বের ঐতিহ্যের সর্বজনীনভাবে প্রশংসিত একটি নিদর্শন মার্বেল পাথরের এই তাজমহল। আর তার সৌন্দর্যেই প্রতি বছরই কয়েক লাখ পর্যটক আসেন এই তাজমহলে। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গত ১৭ মার্চ তাজমহল, আগ্রা ফোর্ট, ফতেপুর সিক্রিসহ প্রতিটি দর্শনীয় স্থানেই প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেসময় তাজে প্রতিদিন গড়ে ৮০ হাজার দর্শক প্রবেশের অনুমতি পেতেন, অন্যদিকে আগ্রা ফোর্টে ঢোকার অনুমতি পেতেন দিনে ৩০ হাজার মানুষ।

আগ্রার জেলা প্রশাসক প্রভু এন. সিং জানান, কোভিড-১৯ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার ও উত্তরপ্রদেশ রাজ্য সরকারের জারি করা সমস্ত গাইডলাইন মেনেই আগামী ২১ সেপ্টেম্বর তাজমহলের সাথেই আগ্রা ফোর্টের প্রবেশদ্বারও দর্শকদের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
সেক্ষেত্রে তাজমহলে দৈনিক গড়ে ৫ হাজার দর্শক ও আগ্রা ফোর্টে দৈনিক গড়ে আড়াই হাজার মানুষকে প্রবেশ করতে পারবেন।’

তাজে ঢোকার প্রতিটি গেটেই দর্শকদের শারীরিক তাপমাত্রা পরীক্ষা করে দেখা হবে বলেও জানান তিনি।

তাজমহলের রক্ষাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা ‘আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া’র (এএসআই)-এর প্রত্নতত্ত্ববিদ বসন্ত কুমার স্বর্ণকার জানান, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেবলমাত্র ই-টিকিটের মাধ্যমেই তাজমহলে প্রবেশের সুযোগ থাকছে। তাজের ভিতর সমস্ত টিকিট কাউন্টার বন্ধ রাখা হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, তাজমহলের পুরো চত্ত্বরেই দিনে দুইবার করে স্যানিটাইজ করা হবে। এছাড়াও মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে অর্থাৎ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে, তাজের মার্বেল, দরজা বা রেলিং স্পর্শ না করতে-গোটা তাজ চত্বর জুড়েই ছোট আকারে পোস্টারও টাঙানো হচ্ছে।

করোনার আবহে স্থাপত্য চত্ত্বরে দলবদ্ধভাবে ছবি তোলার ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা থাকছে। প্রত্যেক দর্শকদের কাছে নিজস্ব স্যানিটাইজার ও পানির বোতল রাখার পাশাপাশি তাজমহল দর্শনের জন্য তাদের তিন ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

আগ্রা ট্যুরিস্ট ওয়েলফেয়ার চেম্বার’এর সভাপতি প্রহ্লাদ আগরওয়ালের অভিমত, তাজমহল ও আগ্রা ফোর্ট খোলার আগে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলু ও শহরের ট্রেন সেবা চালু করা দরকার।

আগ্রা ট্যুরিজম গিল্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অরুন দাং জানান, কখনও এত দীর্ঘ সময় তাজমহল বন্ধ ছিল না। এতে আগ্রার পর্যটন শিল্পের যে ক্ষতি হল তা কখনই পূরণ হওয়ার নয়।