সোমালি দস্যুদের কবলে বাংলাদেশি জাহাজ, ২৩ নাবিক জিম্মি

ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়েছে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’। সাধারণ পণ্যবাহী জাহাজটি আফ্রিকার মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাত যাওয়ার পথে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে। গতকাল দুপুর দেড়টায় জাহাজটি জলদস্যুদের কবলে পড়ার বিষয়টি জানতে পারে মালিক কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্পগোষ্ঠী কবির গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। জাহাজের ২৩ নাবিকের সবাই নিরাপদে রয়েছেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জলদস্যুরা কোনো মুক্তিপণ দাবি করেনি।

কবির গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘জাহাজটি মোজাম্বিক থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত যাওয়ার পথে জলদস্যুর কবলে পড়ে। দেড়টার দিকে আমরা জলদস্যুর কবলে পড়ার খবর পাই। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জাহাজের নাবিকরা নিরাপদে রয়েছেন। জলদস্যুরা এখনো কোনো ধরনের মুক্তিপণ দাবি করেনি। আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

জানা যায়, মোজাম্বিকের মাপুতো থেকে কয়লা নিয়ে জাহাজটি আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরের দিকে যাচ্ছিল। সোমালিয়া থেকে প্রায় ৪৫০ নটিক্যাল মাইল দূরে গালফ অব ইডেনে জাহাজটিতে হামলা করে সোমালিয়ান জলদস্যুরা।

প্রায় ৫০ জলদস্যুর প্রত্যেকেরই হাতে ছিল ভারী অস্ত্র। তারা হামলার পর জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নেয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জাহাজটি সোমালিয়ান উপকূলে জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জাহাজটিতে জিম্মি নাবিকদের মধ্যে রয়েছেন ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার মোহাম্মদ আতিকুল্লাহ খান, দ্বিতীয় কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী, তৃতীয় কর্মকর্তা মো. তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট মো. সাব্বির হোসেন, প্রধান প্রকৌশলী এ এস এম সাইদুজ্জামান, দ্বিতীয় প্রকৌশলী মো. তৌফিকুল ইসলাম, তৃতীয় প্রকৌশলী মো. রোকন উদ্দিন, চতুর্থ প্রকৌশলী তানভীর আহমদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহিম খলিল উল্লাহ, এবি মো. আনোয়ারুল হক, এবি মো. আসিফুর রহমান, এবি সাজ্জাদ হোসেন, ওএস জয় মাহমুদ, ওএস মো. নাজমুল হক, ওএস আইনুল হক, অয়েলার মোহাম্মদ শামসউদ্দিন, মো. আলী হোসেন, ফায়ারম্যান মোশারফ হোসেন শাকিল, চিফ কুক মো. শফিকুল ইসলাম, জিএস মো. নূর উদ্দিন ও ফিটার মো. সালেহ আহমেদ।

তাঁদের মধ্যে ১১ জনের বাড়ি চট্টগ্রামের বলে জানা গেছে। বৈশ্বিক জাহাজের অবস্থান নির্ণয়কারী সাইট ভেসেল ফাইন্ডারের তথ্য অনুযায়ী, এমভি আবদুল্লাহ একটি কার্গো ভেসেল। মোজাম্বিক থেকে মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাচ্ছিল এটি। এমভি আবদুল্লাহ ৪ মার্চ মোজাম্বিক থেকে রওনা দেয়। বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম বলেন, ‘জিম্মিদের মধ্যে এক নাবিকের একটি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ পেয়েছি। মেসেজে তিনি বলেছেন জলদস্যুরা জাহাজটির দখল নিয়েছে। নাবিকদের কেবিনের মধ্যে আটকে রাখা হয়েছে। তাদের কাছে ভারী অস্ত্র ও গোলাবারুদ রয়েছে।’ জলদস্যুদের কবলে পড়া জাহাজটির আগের নাম ‘গোল্ডেল হক’।

এসআর শিপিং লাইনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ক্যাপ্টেন মেহরুল করিম বলেন, ‘ঘটনাটি সোমালিয়ান উপকূলের প্রায় ৫০০ নটিক্যাল মাইল দূরে ঘটেছে। প্রথমে জাহাজের ক্যাপ্টেন আমাদের জলদস্যুদের আক্রমণের কথা জানান। আমরা তাকে যেকোনো মূল্যে তাদের ঠেকানোর নির্দেশ দেই। ১৫ মিনিট পর ক্যাপ্টেন একটি ইমেইল পাঠান, যেখানে তিনি জানান যে জলদস্যুরা জাহাজের দখল নিয়েছে।’

জাহাজটি ৫৮ হাজার মেট্রিক টন কয়লা বহন করছিল বলেও জানান তিনি। ২০১৬ সালে তৈরি ১৯০ মিটার লম্বা জাহাজটি গত বছর কবির গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিং করপোরেশনের বহরে যুক্ত হওয়ার পর নামকরণ হয় এমভি আবদুল্লাহ। এর পর থেকে জাহাজটি সাধারণ পণ্য পরিবহন করে আসছিল। ২০০৪ সালে এসআর শিপিং প্রথম জাহাজ কেনে। এমভি ফাতেমা জাহান ছিল তাদের প্রথম জাহাজ। কবির গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের বহরে বর্তমানে জাহাজের সংখ্যা ২৩।

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের মার্চে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়ে এসআর শিপিং করপোরেশনের আরেকটি জাহাজ ‘এমভি জাহান মণি’। ওই সময় ২৬ নাবিক ছিলেন বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজটিতে। তিন মাস পর মুক্ত হয়ে জাহাজটি সোমালিয়া থেকে ওমানের সালালা বন্দরে যায়। একটি ছোট উড়োজাহাজে করে সোমালিয়ার জলদস্যুদের মুক্তিপণের টাকা পৌঁছে দেওয়া হয়।

ফেসবুক থেকে : জাহাজের নাবিক আসিফুর রহমান সন্ধ্যায় ফেসবুকে পোস্ট করেন, ‘আমরা সবাই সুস্থ ও নিরাপদে আছি। আমাদের প্রার্থনায় রাখুন।’ জাহাজের ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘কারও সঙ্গে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। পাইরেটসরা আমাদের মোবাইলসহ সব যোগাযোগমাধ্যম নিয়ে যাচ্ছে।’