স্বাধীনতার ৫০বছর পর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি, মারা গেছেন ২০ বছর আগেই

রেয়াজ উদ্দিন ২ আগস্ট’ ২০২১ এ বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার ৫০ বছর পর পেলেন সম্মানজনক এ স্বীকৃতি।

তিনি লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার পূর্ব সারডুবি গ্রামের মৃত ছানার উদ্দিনের ছেলে।

স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদান রাখা রেয়াজ উদ্দিন আজ থেকে ২০ বছর আগে মারা যান। তিনি একজন রেল শ্রমিক ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ যুদ্ধ শুরু হলে তিনি পাক সরকারের চাকুরি প্রত্যাখান করেন। দেশের জন্য মুজিব নগর সরকারের কর্মচারী হিসেবে যোগ দেন ভারতের কোচবিহার জেলার শীতকুচির মুক্তিযুদ্ধ যুব শিবিরে। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে শিবিরে আশ্রয় নেয়া শরনার্থীদের দেখা শুনার দ্বায়িত্ব পালন করেন। দেশ স্বাধীন হলে তিনি ফিরে আসেন দেশে। কিন্তু দেশ স্বাধীনের পর নাম ওঠেনি মুক্তিযোদ্ধার তালিকায়।

রেয়াজ উদ্দিনের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘ছোট বেলায় বাবার কাছে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের অনেক গল্প শুনেছি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি না পাওযায় সবসময় আফসোস করতেন। অনেক চেষ্টায় বাবার মুক্তিযুদ্ধের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মিললো ঠিকই কিন্তু বাবা বেঁচে নেই।বেঁচে থাকলে তিনি অনেক খুশি হতেন।’

গত ২০১৪ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা রেয়াজ উদ্দিনের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক দোলন বাবার স্বীকৃতির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজসহ অনলাইনে আবেদন করেন। অতপর দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর গত ২ আগষ্ট ২০২১ ইং স্বীকৃতি পান।

বীর মুক্তিযোদ্ধা রেয়াজ উদ্দিন লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়নের পূর্ব সাড়ডুবি গ্রামের ছানার উদ্দিনের ছেলে। তিনি গত ২০০১ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি নিজ বাড়িতে মৃত্যু বরণ করেন। ওনার চার ছেলে ও পাঁচ মেয়ে। তিনি ১৯৩৮ সালের ৫ মে জন্ম গ্রহন করেন।

তার ছেলে আব্দুর রাজ্জাক দোলন বলেন, ‘১৯৬১ সালে তৃতীয় শ্রেনীর কর্মচারী হিসেবে রেলে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ যুদ্ধ শুরু হলে চাকুরি ছেড়ে চলে যান ভারতে। সেখানে যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধ শিবিরে। শিবিরে আশ্রয় নেয়া শরানার্থীদের দেখা-শুনা ইত্যাদির দ্বায়িত্ব পালন করেন। এমনকি শিবিরের যুবকদের পাঠাতেন মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষন ক্যাম্পে। সেখান থেকে ফিরে আসেন বাড়িতে। কিন্তু দেশ স্বাধীনের দীর্ঘ সময় পেড়িয়ে গেলেও বাবার নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় না থাকায় বেশ উদ্বিগ্ন ছিলাম। অতপর স্থানীয় এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতাহার হোসেনসহ বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সাথে যোগাযোগ করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময়ের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন। এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতাহার হোসেনের সহযোগীতায় সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেন। অনেক চেষ্টার চলতি বছরের ২ আগষ্ট মুক্তিযোদ্ধার নাম গেজেট ভুক্ত হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘ছোট বেলায় আব্বার কাছে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের অনেক গল্প শুনেছি। কিন্তু তিনি স্বীকৃতি না পাওয়ায় অনেক হতাশ ছিলেন। আমরা যখন তার এই না পাওয়ার কষ্ট বুঝতে পেরেছি তখন খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। চেষ্টা চালাই স্বীকৃতির জন্য। স্বীকৃতি পেলেও আজ আব্বা বেচে নেই। তিনি থাকলে অনেক খুশি হতেন। অনেক চেষ্টা চালিয়ে স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে পাওয়া এই অর্জনে আমরা সকলে অনেক আনন্দিত। এই জন্য আমরা বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতাহার হোসেনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’

এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধার অন্যতম সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নুরুজ্জামান বলেন, ‘রেয়াজ উদ্দিন মুজিব নগরের কর্মচারী ছিলেন। সে সময় তিনি পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আমাদের সাথে থেকে দেশের জন্য কাজ করেন।’