মেসেঞ্জার কথোপকথন
স্বেচ্ছা নির্বাসন || নাজমীন নর্তুজা
এই যে তখ্খন থেকে দেখছি সবুজ বাতি জ্বলছে
অথচ হাই কিংবা হুই কিচ্ছু বলছো না যে…..
আশ্চর্য তো! সবুজ বাত্তি জ্বলছে মানেই কি আমি বসে ইনবক্স চষে বেড়াচ্ছি বুঝি!
শোন .. শোন … ক্ষেপে গেলে তো হেরে গেলে বুঝলে।
আজ তুমুল ঝড় হচ্ছে .. ভূম.. ভূম করে বজ্রপাত।
যেন মেঘের নিভৃত -আবেগের উন্মোচন,
নিজেকে নিজের ভীষণ আদর আদর লাগছে জানো!
সেকি! মনিভূষণ তুমি তো দেখি বড্ড মাখো মাখো আজকে… তোমার কথা শুনে কি মনে হলো জানো…?
জ্যাকপট ভেঙ্গে যে – রাখাল যাচ্ছিলো
হঠাৎ মৌচাক ভেঙ্গে তার সমস্ত মুধু গড়িয়ে পড়লো ।
তা যা বলেছো … ! জানো তো এখন নি:স্ব হাতে রাখাল ফিরে যাচ্ছে কাশবনের ভিতর দিয়ে .. মাথার উপরে শুধু ধবল কিরিট একটা মেঘ।
সাবধানে যেও … লোক চক্ষু সামন্তরিক হয়ে তোমার দিকে তাকিয়ে আছে। হ্যান্ডি সব কিছু এখন স্থলে, জলে, সব ঐ ইন্টারনেটের কল্যানে
সে দেখলে দেখুক গে.. আমার বয়েই গেছে তাতে! পাড় ভেঙ্গে গেছে জলে। ভেঙ্গে পড়ছে গর্জমান ঢেউ, শূন্য হৃদয় বোঝে, বোঝে না তো অন্য আর কেউ
জল আমি চিরকাল ভয় পাই, তাই মাছের সঙ্গে আমার ভাব হয় না। মাছ আমার চিরকালের শত্রু।
বাহ .. দারুন বল্লে তো! মাছ আমারো ভাল্লাগে না, আসলে মাছের সাথে আমারো যায় না!
মাছ চিরকালের বিশ্বাস ঘাতক.. মাছের সাথে মানুষের বন্ধন হয় না। বেশ হয়েছে মাছ তোমার শত্রু হয়ে।
জানো মনি আমার একান্ত আকাশে আমি তাকিয়ে আছি অপলক ….
ছোট্ট জানালাটা দিয়ে.. মনে হচ্ছে তোমার দিকে তাকিয়ে আছি .. তুমি যা কিছু করছো .. তোমাকে পরিণত চৌকো টুকরো করছে মেঘের কিরিট। আমি তাকিয়ে মেঘের চৌকো টুকরো গুণছি।
কি একটু আবেগে …আ- বো হবো .. তা না .. মাছ – মাছে কেমন যেন মেছো মেছো লাগছে । বেড়াল আর মাছ
আহা! তোমার নিজস্ব আকাশে চৌকো টুকরো হচ্ছি ..
বেশ .. বেশ!
মনে রেখো ভেঙ্গে পড়ছে উপমহাদেশ,
চারিদিকে গভীর জ্বরের মাস ..শরীরটা কেমন ভাঙ্গা ভাঙ্গা লাগছে ..
জানিনা কি হবে .. উড়ে না যায় পাখি শেষমেশ।
এই .. ভালো হবে না মোটেও বলে দিচ্ছি … কি সব অলুক্ষণে কথা …
রোমান্টিক ছিলে বেশ তো লাগছিলো .. ! আড় মোড়া ভাঙ্গা মেজাজে .. দিলে তো সব ভিজিয়ে .. এমন বল্লে চোখ সইবে না কিন্তু .. বাঁধ ছেড়ে দেবো ….
এক্সকিউজ মি! আমি কাউকে কাঁদতে বলি না … যত্তসব ছিচ কাঁদুনে স্বভাব … পুরাই ত্যানা – ন্যাকড়া টানাটানি ..
এই যে ..
এইস্বভাব ছাড়ো বলছি। তা না হলে কান্না তোমার নাম পাবে সাউকারি!
তোমাকে আর কি বলবো .. ? তুমি কি আমার ভাষা কখনো বুঝবে?
বুঝবে না …তুমি তো থাকো নিছক যন্ত্রের খেয়ালি খপ্পরে।
আমার চোখের জলের কথা বলছো .. খুব খিস্তি হচ্ছে না .. ত্যানা – ন্যাকড়া
এই যে মনিভূষণ .. জীবনের চারপাশে অনেক গুলো আড়াল। একটা আড়ালের মধ্যে আমি চোখ জল লুকিয়ে রাখি .. কেউ দেখে না .. তুমি দেখো শুধু কিন্তু নিছক খেলো করে দাও আমার কান্না
আমার ঘাট হয়েছে! আর যদি কখনো বলছি এমন কথা .. দিব্বি দিচ্ছি আমার ছাদ বাগানের চন্দ্রমল্লিকার। যে গাছটাকে আমি তোমার নামে ডাকি ওটার। আমি সত্যি মাঝে মাঝে বড্ড ছেডা ছেড়া কথা বলি তাই না!
এই যে নাও আমার মুন্ডু মটকে দাও…
হয়েছে হয়েছে কথা পটু, ফন্দি কারিগর। পারোও বটে! এখানে সন্ধ্যা.. আমি চায়ে চুমুক দেবো .. তুমি গান গাও .. আমি চা খেতে খেতে শুনি! কতদিন গান শুনি না তোমার ডাহুক কন্ঠের।
আচ্ছা মুনিয়া .. বলেছিলে তোমার বাড়ির নাম সন্ধ্যা তারা? আচ্ছা উঠান আছে? দখিনের বারান্দা আছে? তোমার বসার ঘরে ফায়ার প্লেস আছে? তুমি কি লম্বা গাউন পরে চা হাতে দোল চেয়ারে দুলছো? তোমার খোলা চুলের ঘ্রাণে বুঝি ঘর ভেসে যাচ্ছে? তোমার জানালার ফাঁক দিয়ে স্নিগ্ধ হাওয়া তোমার নির্ভার চোখের পাপড়িঁতে আগুনের আলোমুগ্ধতার ঝিলিক দিচ্ছে ..?
কল্পনায় এই মুহুর্তে সবুজে ছড়ানো মেঘ আর রাত্রির পটভূমি জুড়ে গাঢ় রক্তের মতো রেখা জেগে উঠছে তোমার গ্রীবায়?
খুব ছুঁয়ে দেখতে মন চাচ্ছে।
তোমার গরম চায়ের কাপে চুমুক দিতে।
আমার ভেনাস .. সীমন দ্যা ব্যুভোয়া আমার।
না আমি মোটেও আয়েসি টাইপ নই .. দু-দন্ড বসে টিভি দেখবার সময় পাই না, অমার ল্যাপিটা কত দিন ধরিনি জানো? .. ভাগ্যিস স্মার্ট ফোন এসেছে। জয় বাবা আমার .. আধ খাওয়া অ্যাপল।
শোন মনিভূষণ .. এমনি কি আর এই নামে ডাকি তোমায় … জানি এই নাম তোমার দুই কানের বিষ .. আমার কিন্তু জব্বর লাগে ডাকতে .. আরো যদি গেঁয়ো সুরে ডাকি কিছুটা মোড়লিয়ানায় .. কি হে মনিভূষণ তুমি তো ফাটিয়ে দিলে অন্তর আমার .. ! তোমার তো দেখছি কল্পনা শক্তি চরম মার্গিয় । একদম যেখানে – সেখানে ছুটে চলে। তারপর ধাড়াম করে ধাক্কা মেরে থামে। তোমার কল্পনায় দ্যুলোক- ভূলোক- গোলক একাকার …প্রেমো তোমাকে সেলাম!
মুনিয়া বহু খোঁচা দিয়ে রক্ত বের করছো .. মেলা বলছো প্লিজ ক্ষমা করো .. একটুও কাব্যি করবো না … আর
শোন সোনা …
তোমার নিবেদনে আমি হারমোনিয়ামের ধুলো পরিস্কার করলাম … এখন বলো কোন গানটা শুনবে? আর প্লিজ বলো না মান্না দে গাইতে … বরং তোমার জন্য একটা আধুনিক গাই কি বলো মন মুনিয়া, জানাও ওয়েট করছি ।
যাক আমি ধন্য হয়েছি ওগো ধন্য তোমারই নিবেদন শোনার জন্য। এই শোন না .. আমি একটা টিকটক ন্যাকা করতে চাই .. যদিও আমি তেমন পাকি নাই, ভিডিও করার ব্যপারে … মাঝে মাঝে টাল খেলেও চাল বিগডাবে না।
আয়েস করে বসলাম .. গাও খান কতক গান .. যা গাইতে মন চায়।
অপেক্ষা অপেক্ষা …. আমি ভিডিও কল দেই? জানাও ত্বর সইছে না। এসে বসো আমার গানের পাখি জিওল গাছের ভাঙ্গা ডালে।
মুনিয়া ক্যামরা অন করো, আমি তাকাবো না তোমার দিকে। আমার কন্ঠ জড়িয়ে যায় তোমার ডাগর চোখে চোখ পড়লে।
আহা .. আহা … কি শোনালে .. জিয়া বেকারার হ্যায় ..তোমার নিবেদন তো নয় যেন নবাবের উপুর করা পকেট।
তুমি সন্ধ্যা আকাশে তারার মতো আমার মনে জ্বলবে … কি গাইলে বলো … জাস্ট পাগল পাগল লাগছে। বহুদিন পর মন ভিজে গেলো …।
আমানত …. তোমার জন্য মাঝে মাঝে আমার খুব পাগল হয়ে ছুটে গিয়ে বুকের চাতালে নাক ঘষতে ইচ্ছা করে .. খুব বেশী এলোমেলো।
পাগল …পাগল …পাগল .. আমার মন মুনিয়া … তোমার যে একটা সুন্দর নদীর নামে নাম আছে আমি ভুলেই যাই … যখন ছাদে যাই তখন তোমার নামে গাছটাকে জড়িয়ে আদর করি .. মাতালের মতো ফুলগুলোর ঘ্রাণ নেই। সুরমা .. সুরমা বলে। তোমাকে ভালোবেসে ফতুর হতে ইচ্ছা করে .. পাগল হয়ে পথে পথে ঘুরতে ইচ্ছা করে।
হয়েছে … মেলা পাগল হয়েছো .. আর না .. ইসস কি বজ্রপাতের আওয়াজ …
শোন গান বাদ .. চলো গল্প করি । আজ তুমুল আবেগ আমার!
মেসেজ করো এমন দিনে ফোনে কথা বলা উচিত নয়।
ওরে ….ওরে …ওরে … আমার আবেগেশ্বরী!
আমার গা কাঁপছে .. অন্য কোন কারণে না .. জ্বর এলো মনে হয় .. আমি বরং শুয়েই পড়ি আর কথা বলি । ইদানিং আমার সমস্ত শরীর কেঁপে ওঠে হঠাৎ হঠাৎ।
যা অত্যাচার করো তুমি .. কোন দিন তুমি এভাবে ….
বড্ড ইচ্ছে করে তোমাকে এমন সময় গুলোতে যত্ন করি .. শতবার বলি বিয়ে করো যত্ন করার মানুষ আসুক।
কি সব ফোচকামো করছো শুনি ! বিয়ে আমি করবো না জীবনে । আমি বিয়ে করলে শ্রাবণ গোধুলির মৃদু আলোয়, কেউ কি তোমাকে ডাকবে এমনি করে মুনিয়া বলে ইনবক্সে বাজার দাবাতে দাবাতে।
আমি সারাটা জীবন হাওয়ায় ঘুরে ঘুরে তোমার চারপাশে ঘুর ঘুর ওড়াবো শুধু ইমন -কল্যাণ ।
বাগানের কোণে রাত্রি ঘন হচ্ছে এখানে .. আমার হাতের তালুতে অনুভবে ধরে আছি একফোঁটা বৃষ্টির জল ।
কত দেশ পেরিয়ে একটা স্নিগ্ধ ভেজা হাওয়া উড়ে আসছে এখানে। ওপারে তুমি এপারে আমি আর কেউ নেই, শ্রাবণ গোধুলির অলীক আলোর নীচে। আমি ভিজতে ভিজতে তোমার বুকে কুড়িমুড়ি হয়ে, আগুনশিখার নীচে পুড়তে পুড়তে মিশে যাচ্ছি সবুজ অন্ধকারে।
ইসস মুনিয়া! কি করে পারো তুমি। যেন সন্ধ্যার আকাশে একটি নির্জন পাখির ডানা ঝাপটানোর শব্দ পেলাম
প্লিজ আমার মৃত্যুর পরেও তাকে উড়িয়ে এনো।
মৃত্যুর কথা কেন সময়ে অসময়ে বাজাও বলো তো .. তুমি তো বলো আমাদের জীবন কত সুন্দর! সারাজীবন আমরা শুধু জলের জন্য অপেক্ষা করি। গাছ লাগাই, ফুল ফোটাই। তোমার এই কথাগুলো গোপনে আমাকে সুখি করে।
মুনিয়া তোমার কল্পনার মজা ও আমার গোপন অসুখের মজা – এই দুরের মধ্যে কোন মিল আছে কিনা জানি না, তবু একই সঙ্গে এই দুই মজা আমাকে তীব্র টানে। লিখতে পারছি না যে .. একটু কল করবে?
বেশ তো চলো কথা বলি .. তোমার বেশী খারাপ লাগলে থাক না .. ঝড় জলের দিন একটু না হয় চোখ বন্ধ করে রেষ্ট নাও । যদি সিগারেট পিপাসা পায় তবে তুমি খেতে পারো, চোখটা বুজে চেয়ারে হেলান দিয়ে ধিরে ধিরে টানতে থাকো ।
পাগল নাকি! খুব দূর্বল আর অবসন্ন লাগছে ঠিক, চোখটা বুজলেই টান টান হয়ে শুয়ে থাকতে ইচ্ছা হচ্ছে । কিন্তু তোমাকে ছাড়বার কথা আসলেই আমি তো ভীষণ একা হয়ে যাই। খুব স্বার্থপরের মতো তোমার সময় তাড়িয়ে তাড়িয়ে ব্যয় করতে ভালোবাসি। কল করছি ধরো … যদিও নেটের অবস্থা যা বাজে … ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে … ইদানিং বজ্রপাতের উৎপাত খুব; যদি শুনতে সমস্যা হয় তবে কেটে দিও।
🌜 হ্যালো …. হ্যালো বলো! ই মা! কি শব্দ … মেঘের গর্জন মনে হচ্ছে তোমার মাথায় পড়বে। উফ! হ্যালো হ্যালো মনি হ্যালো … ইস কি শব্দ কান ফেটে গেল, লাইন কেটে গেল।
মেসেজ করি ….মনি বিকট শব্দ বুঝলাম না লাইনটা কেটে গেল …
তোমার মেসেজ সিন হচ্ছে না কেন…?
তবে কি তুমি অনলাইনে নেই? কি হলো?
আমার এমন অস্থির লাগছে কেন
যাই আমি একটু চা বানিয়ে আসছি
তুমি লিখো আমি আসছি।
একি তুমি কিছুই লিখো নি ব্যাপার কি?
আমি তোমার বন্ধুকে নক করছি।
অস্থির লাগছে মনি কি হলো .. চুপচাপ কেন? এত্তো শব্দ হলো যেন আমার কান ফেটে গেল।
– মনি কেন এমনি করে কেন নিভিয়ে দিয়ে গেলে তোমার আমার শিখা অর্নিবান । বজ্রপাতে ফোনের ওপারে তোমাকে নিয়ে গেল, আমাকে কেন নিলো না। তুমি একলা কান্নার ইনবক্সে রেখে গেলে মনি । আমি আর কোন দিন ফেসবুক সাইন ইন হবো না।
কোনদিন তোমার দেশে ফিরবো না। এ আমার সেচ্ছা নির্বাসন।
বড্ড একা করে গেলে … আমার গানের পাখি জানালার পাশে জিওল ডালে রোজ সন্ধ্যায় এসে বসো। আমি দখিনের বারান্দায় দোল চেয়ারে বসে তোমার জন্য অপেক্ষা করবো অনন্তকাল।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন