স্মৃতির পর্দায় গাছবাড়ী মডার্ন একাডেমী

শিশুমন যখন কৈশোরে পদার্পণ করে তখন শুরু হয় হাই স্কুল জীবনের পালা। মনে থাকে অনেক স্বপ্ন, অনেক কল্পনা, অনেক দুরন্তপনা। আমাদের গোয়ালজুর গ্রামে অবস্থিত ঢাকনাইল দক্ষিণ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৮৮ সালে পঞ্চম শ্রেণী পাশ করে পূর্ব সিলেটের ঐতিহ্যবাহী গাছবাড়ী মডার্ণ একাডেমীতে ভর্তি হই। প্রতিদিন গ্রামের মেঠোপথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে মিলিত হতাম আমরা সহপাঠীগণ। এ যেনো শুধুমাত্র বিদ্যালয় নয়, ছিলো প্রাণের মিলন স্হল। তখন একাডেমীতে যাতায়াতের কোনো যানবাহন ছিলো না। কাঁচা সড়কে মাঝে মধ্যে আমি বাই সাইকেল চালিয়ে আসা যাওয়া করতাম। আজ নেই সেই টিনের চালা, বাঁশ বেতের ঘেরা দেয়াল, ঘাসে ভরা মাঠও নেই স্মৃতিময় এ বিদ্যাপীঠে।
আমাদের সময়ে শিক্ষক সংকট ছিলো। লাইব্রেরী, বিজ্ঞানাগার ও সরন্জাম ছিলো না। আসবাবপত্র, শ্রেণীকক্ষ, মিলনায়তন স্বল্পতা থাকার পরও শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষকগণ ক্লাসে আপন সন্তানদের মতো পাঠদান করতেন। আজও আমার মনে চির জাগরুক হয়ে উঠছে, একাডেমীতে অতিবাহিত মধুর স্মৃতি আর কলহাস্যের স্বর্ণালী দিনগুলি যেনো একটি এলব্যামে গাঁথা উজ্জ্বল চিত্র। তখনকার যে সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থী ইহ জীবন ত্যাগ করেছেন। আমি তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
গাছবাড়ী মডার্ণ একাডেমীতে পাঁচ বছর পড়াশোনা করেছি। ঐসময়ে আমরা পেয়েছি শ্রেষ্ঠ গুণ সমৃদ্ধ কয়েক জন প্রধান শিক্ষক। যাঁরা হলেন, শ্রদ্ধেয় মরহুম মহররম আলী স্যার, শ্রদ্ধেয় হিফজুর রহমান স্যার, শ্রদ্ধেয় মতিউর রহমান স্যার ও শ্রদ্ধেয় মাওলানা মুহিবুর রহমান স্যার। আমার সময়কালীন প্রধান শিক্ষকদের দেখেছি কতো প্রখর ব্যাক্তিত্ব সম্পন্নই তাঁরা ছিলেন। যেনো এক উচুঁ পর্বতের মতো সেই ব্যাক্তিত্ব। ভাবতে অবাক লাগছে প্রধান শিক্ষক আর আমাদের মাঝে এতোটুকু দূরত্ব থাকা সত্বেও তাঁরা আমাদের হৃদয়ের কতো কাছাকাছি ছিলেন। কতো আপন করেই না ভালবাসা আর শ্রদ্ধার আসনে ছাত্র/ছাত্রীদের কোমল হৃদয়ে স্হান দখল করে নেন। আমরা প্রিয় স্যারদের নিকট থেকে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছু শিখতে পেরেছি।
সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক বিষয়ে শ্রদ্ধাভাজন স্যারদের কাছ থেকে আমি উৎসাহ উদ্ধীপনা পেয়েছি। পরবর্তীতে সিলেট মদন মোহন কলেজে ভর্তি হয়েই সাংবাদিকতা পেশায় পা রাখতে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। স্যারেরা চেষ্টা করেছেন আমাদের প্রকৃত মানুষ করতে। তাদের ব্যাক্তিত্ব ছিলো খুব বেশী। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত এবাদ স্যার শেখাতেন অংক। পরবর্তীতে আসেন মেছবাহ উদ্দিন খাসনবীস স্যার ও আক্কাস আলী স্যার। অংক বিজ্ঞানে তাঁরা অত্যন্ত সফল শিক্ষক ছিলেন। কিন্তু অংক নিয়ে আমার খুব ভয় ছিল। সে ভয় থেকে অংকের স্যারদেরও ভয় পাওয়া শুরু। এসএসসিতে অংশগ্রহণের পুর্বে আক্কাস স্যারের কাছে কয়েক দিন অংক শিখেছিলাম। গণিতে তিনি ছিলেন যথার্থ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শিক্ষক। হাসিখুশী প্রাণবন্ত এ স্যারের হাতের লেখা ছিলো মুক্তোর মতো সুন্দর। ছাপার লেখা বলে মনে হতো। তিনি অত্যন্ত সহজ, সরলভাবে অংক বুঝিয়ে দিতেন। শেষ পর্যন্ত এসএসসি পাশ করে অংকের সংগে চিরকালের জন্য আমার ছাড়াছাড়ি হয়েছে। অথচ এখন ভাবি, যদি মন দিয়ে অংকটা শিখতে পারতাম!
সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণীতে মতিন স্যারের কাছে ইংরেজী পড়েছিলাম। স্যারের উচ্চারণ ছিলো মনে রাখার মতো। ঐ উচ্চারণ শেখাতে তিনি শাস্তি প্রদানেও কার্পণ্য করতেন না। মতিন স্যার সর্বদা ইংরেজী শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করে আমাদের বলতেন, ভালো করে ইংরেজী না শিখলে জগতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না।
সর্বজন শ্রদ্ধেয় মরহুম মহররম আলী স্যার এলাকার শিক্ষা বিস্তারে অগ্রণী ভুমিকা পালন করেছিলেন। বি.এড কোর্স সম্পন্ন করে তিনি বেশি দিন শিক্ষাদান করতে পারেননি। আকস্মিকভাবে অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। ফলে আমরা তাঁর আদর্শ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছি।
মাওলানা মুহিবুর রহমান (মিয়াসাব) স্যার সব সময় সাদা কাপড় ও পান্জাবী পরতেন। মাওলানা স্যার ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ধর্ম শিক্ষা পড়াতেন। অধিকাংশই দিবসের শেষ ক্লাসটিতে। তিনি ইসলামী শিক্ষায় আমাদের উৎসাহিত করতেন। ক্লাসের পড়া প্রতিদিন শিখে না আসলে আমাদের শাস্তি দিতেন। আমরা যাঁরা তার ছাত্র ছিলাম, তাদের এ নিয়ে কোন অভিযোগ ছিলো না। কারণ তিনি শেখাতেন মন-প্রাণ দিয়ে। আমার মনে হয়না কোনো দিন, কোনে ক্লাস বাদ দিয়েছেন তিনি। ঝড় বাদলের দিনেও।
ফরিদ স্যার ও রফিক স্যার বাংলা পড়াতেন। তাদের কাছ থেকে শোনেছিলাম মেজদিদি ও ছোট গল্পের মতো নাটকীয় ভংগিতে মজার মজার গল্প। রফিক স্যার ও ফরিদ স্যার আমাদের চলাফেরা ও কাপড় পরিধানের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতেন।
আসাদ স্যার ও হেলাল স্যার কোন দিন মারতেন না। বেশি ভয় দেখাতেন। অথচ একাডেমীর বাইরে ছিলেন সদা হাস্যোজ্জল, আলাপী মানুষ। হেলাল স্যার ছিলেন বিদ্রোহী কবি নজরুলের মতো। অনেকটা চঞ্চল জীবনের অধিকারী। আসাদ স্যার আমাদের অত্যন্ত স্নেহ করতেন।
ভানুরাম বৈদ্য স্যার ঐচ্ছিক বিষয় হিসাব রক্ষণ ও কারবার পদ্ধতি পড়াতেন। মরহুম আলমগীর স্যার বিজ্ঞান পড়াতেন। তিনি বিজ্ঞানের বাস্তব যুক্তি তুলে ধরে কঠোরভাবে বিজ্ঞান শেখাতেন।
আরেকজন স্যার ছিলেন আলাউদ্দিন। শ্রেণীকক্ষে ছাত্র ছাত্রীদের অহেতুক নড়াচড়া, কথা বার্তা পছন্দ করতেন না। মাঝে মাঝে ব্যাকরণ পড়াতেন। সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় বিশ্লেষণ করে বুঝানোর চেষ্টা করতেন।
এছাড়া খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে আমাদের যাঁরা কিছু দিন পড়া শোনা করিয়েছেন, তারা হলেন – সালেহ আহমদ স্যার, জয়নাল আবেদিন স্যার, মরহুম আব্দুল কুদ্দুস স্যার।
ক্লাস শেষ হলেই প্রধান শিক্ষকের নির্দেশ পেলে ঢং ঢং করে ছুটির ঘন্টা বাজাতেন সমিরণ ও মরহুম বাবুল। এ দুজনই আমাদের কাছে আপন ভাইদের মতো মনে হতো।
তখনকার দিনে হাতে গোনা কয়েকজন সুযোগ্য শিক্ষকের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এই একাডেমী হয়েছিল একটি আদর্শ বিদ্যাপীঠ। আমার বিশ্বাস, গাছবাড়ী মডার্ণ একাডেমীর শিক্ষার্থীরা আজ যেখানেই আছেন, একথাটি নির্দ্বিধায় স্বীকার করবেন যে ব্যাক্তিগত প্রতিষ্ঠা নিয়ে যার যেটুকু গৌরব ! এরচেয়ে বেশি গর্ববোধ করবেন তার জীবন গঠনে শক্ত ভিত নির্মাণ করে দিয়েছিল যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তার জন্য। দিন দিন এই একাডেমীর সুনাম ও সুখ্যাতি দেশ থেকে দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়ছে।
সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ গাছবাড়ী এলাকায় শিক্ষার গৌরব গাঁথা ঐতিহ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে গাছবাড়ী মডার্ণ একাডেমী। অত্যন্ত মনোরম পরিবেশে আধুনিক ডিজাইনের ভবনের এখনকার এ বিদ্যাপীঠ। একঝাঁক অভিজ্ঞ শিক্ষক এখন নিয়োজিত আছেন, শিক্ষার্থীদের আলোকবর্তিকার মতো প্রজ্জ্বলিত শিখা জালিয়ে ধন্য করতে। দেশ – বিদেশে মেধার বিকাশ ঘটিয়ে প্রতিষ্ঠিত ও স্বনির্ভর করতে। অব্যাহতভাবেই করে যাচ্ছেন।
শিক্ষকদের উপদেশ, পরামর্শ, দিক নির্দেশনা এবং নিজের মেধা ও চেষ্টার গুণে অতীতে একাডেমী প্রাংগণকে যারা সমৃদ্ধ করে গেছেন। একাডেমী প্রাংগণ যাদের পদচারণায় প্রাণবন্ত ছিলো। সেসব কৃতী শিক্ষার্থীদের প্রতি যথাযথ সন্মান জানিয়ে আমি এখানে আমার সহপাঠী ক’জনের নাম ও সে সময়ের কিছু স্মৃতি উল্লেখ করছি। বিশেষ করে মনে ক্লাসের অবসরে মতি, শরীফ, জব্বার, মখলিছ, আশফাক, ইয়াহইয়া, মামুন, ফরিদ, কুদ্দুস, রুহুল, তাজউদ্দিন, শামীম, বশির, আব্দুস শাকুর, জালাল, বাবুল মিয়া, নজরুল নান্নু, নাজিম, সারওয়ার সাদর, আবুল কালাম, আবেদ, মাহমুদ, মতিন, নাজিম, ফজলু, লুৎফুর, মান্নান, সাধন, টুনু, অমরেশ, কিরণ, সুভাস সহ অন্যান্য সমসাময়িক বন্ধুদের নিয়ে ক্লাস রুমে নানান গল্প। রেস্টুরেন্টে বসে মজা করে চানা, খিচুড়ি খাওয়া এবং চায়ের কাপে ঝড় তোলার সেই দিনগুলি।
অপরদিকে আমরা সহপাঠীদেরকে শোক সাগরে ভাসিয়ে বড় অকালে পরপারে চলে গেলো মেধাবী আলাউদ্দিন।
এসএসসি পরীক্ষার আগেই আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে অথবা বাড়তি আয়ের জন্য প্রবাসে পাড়ি দিয়েছেন অনেকেই। এদের মধ্যে মামুন রশিদ বাবুল, জব্বার, আশফাক, কয়সর, মান্নান, কুদ্দুস, মাসুক, ফারুক, মখলিছ, শামীম, মুছব্বির, তাজ উদ্দীন, তাজ, আব্দুর রহিম, আব্দুল মালিক, খয়ের উদ্দিন, শরীফ, ফজলু, জালাল, এমাদ প্রমুখ। আসলে এদের প্রতিভা দেশের কাজে লাগানো উচিত ছিলো।
ছাত্রীদের মধ্যে যারা আমাদের সাথে পড়াশোনা করেছেন, তাদের অনেকের বর্তমান অবস্থান জানা না গেলেও নাম মনে আছে ক’জনের। বিশেষ করে হাসিনা, ফেরদৌস, শাহিবা, রেনু, খাদিজা, কাওসারা, পিয়ারা, কলি, বিলকিস, মারুফা, লাইলী প্রমুখ। সে সময় আমাদের এলাকায় সামগ্রিকভাবে নারী শিক্ষার হার অনেক পিছিয়ে ছিলো। কুসংস্কার ও অভিভাবকদের অসচেতনতার কারণে। নারীদের আলাদা কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিলো না। এখন আর নেই সেই আগের অবস্থা। খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, বর্তমানে মডার্ণ একাডেমীর শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই ছাত্রী। এছাড়া এলাকায় নারী শিক্ষার উন্নতিতে আলাদাভাবে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
আমরা এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলাম ১৯৯৩ সালে। আমাদের পরীক্ষা কেন্দ্র ছিলো কানাইঘাট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে। যাহা গাছবাড়ী মডার্ণ একাডেমী থেকে প্রায় ১৮ কিলো মিটার দূরে। উক্ত কেন্দ্রের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যাবস্হাও ছিল না। তাই আমাদেরকে কেন্দ্রের আশপাশের আত্বীয় স্বজনদের বাসা বাড়ী, ভাড়া বাড়ী অথবা লজিং এ থেকে পরীক্ষা দিতে হয়। পরবর্তীতে আবার এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র করা হয় পার্শ্ববর্তী বিয়ানীবাজার উপজেলার ঢাকাউত্তর মোহাম্মদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে। এ কেন্দ্রের দুরত্ব ছিলো প্রায় ১০ কিলোমিটার। এই কেন্দ্রটির সাথেও সড়ক যোগাযোগ ছিলো না। সুরমা নদী নৌকায় পার হয়ে যেতে হতো। সেখানে পর্যাপ্ত আবাসন সুবিধা ছিলো না। তাই অনেক শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সুরমা নদী পেরিয়ে এসএসসি পরীক্ষা দিতে হতো।
বর্তমানে গাছবাড়ী মডার্ণ একাডেমীকে এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০১২ সাল থেকে কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। একাডেমীর পরিচালনা কমিটি, শিক্ষকবৃন্দ, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ এলাকাবাসী খুশী হয়েছেন। লাঘব হয়েছে অবর্ণনীয় কষ্ট, দুর্ভোগ।
১৯৩৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় গোটা গাছবাড়ী এলাকায় আধুনিক শিক্ষার একমাত্র এই প্রতিষ্ঠান। পরবর্তীতে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উন্নতি, অগ্রগতি হয় গাছবাড়ী সমাজ কল্যাণ যুব সমিতির মাধ্যমে। সেই সাথে এলাকার শিক্ষানুরাগী কয়েক জন গুণী মানুষের সাহায্য সহযোগিতায় সুখ্যাতি অর্জন করে গাছবাড়ী মডার্ণ এএকাডেমী। ঐতিহ্যবাহী গাছবাড়ী মডার্ণ একাডেমীকে এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র মনোনীত করায় সংশ্লিষ্টদের মাঝে আনন্দ উদ্ধীপনার পাশাপাশি মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া কিছুটা বন্ধ হয়েছে।
এছাড়া ২০১০ সাল থেকে গাছবাড়ী মডার্ণ একাডেমীতে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ব বিদ্যালয় (বাউবি) এর শাখা চালু হয়েছে। বাউবির সমন্বয়কারীর তত্বাবধানে এবং একদল সুযোগ্য শিক্ষকদের নিরন্তর প্রচেষ্টায় প্রতি বছর শিক্ষার্থীরা কৃতিত্বের সাথে ভালো ফলাফল অর্জন করছেন। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে প্রথম বারের মতো বর্ষ বরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ১৪১৮ বাংলা উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত উৎসবে আমি (দেলওয়ার হোসেন সেলিম) ছিলাম প্রধান অতিথি।
বিপুল উৎসাহ, উদ্দীপনা ও আনন্দঘন পরিবেশের মধ্য দিয়ে সকাল ১০টায় শুরু হয় বর্ণাঢ্য র‍্যালী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পান্তা ইলিশ খাওয়ার উৎসব ও আলোচনা সভা। দিনব্যাপি এই বর্ষবরণ উৎসব উপলক্ষে বিদ্যালয় সেদিন সেজেছিলো এক নতুন সাজে। নতুন আমেজে, নব উদ্দমে। স্থানীয় সাংস্কৃতিক ও বিনোদন প্রিয়দের অন্তরে ছিলো আনন্দের ঢেউ। বর্ষবরণ উপলক্ষে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। খেলাধুলার মনোমুগ্ধকর আয়োজন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা উপচে পড়া দর্শক শ্রোতাদের আনন্দ, চিত্ত বিনোদনের খোরাক জোগায়। নানান ঘাত- প্রতিঘাত, বাধা, প্রতিকূলতা পেরিয়ে গাছবড়ীতে এই প্রথমবার বর্ষবরণ উৎসব আয়োজন করা হয়। আর এতে প্রধান অতিথি হিসাবে আমাকে মনোনীত করা হয়েছিল স্বতঃস্ফূর্তভাবে।
গাছবাড়ী মডার্ণ একাডেমীর তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রাজনীতিবীদ ওলিউর রহমানের সভাপতিত্বে এবং গাছবাড়ী মডার্ণ একাডেমীর সহকারী শিক্ষক আবু হানিফের পরিচালনায় এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আলহাজ্ব বশির আহমদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আমিন, লন্ডন প্রবাসী এডভোকেট আব্দুছ ছাত্তার, গাছবাড়ী মডার্ণ একাডেমীর সিনিয়র সহকারী শিক্ষক এবাদুর রহমান, সিনিয়র সহকারী শিক্ষক আসাদুজ্জামান আসাদ, সহকারী প্রধান শিক্ষক ভানুরাম বৈধ্য (বাবু), শিক্ষক জাহাংগীর আলম, শিক্ষক আব্দুল মতিন, শিক্ষক আব্দুল মজিদ, গাছবাড়ী ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক আল আমীন, কবি হাসান চিশতী, সমাজসেবী আহমদ হোসেন, গাছবাড়ী বাজার ব্যাবসায়ী সমিতির সদস্য শ্রী শ্যামল চন্দ চন্দ্র, প্রবাসী এমাদ উদ্দিন প্রমুখ।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি)-এর গাছবাড়ী মডার্ণ একাডেমী শাখার প্রধান সমন্বয়কারী আব্দুল হক। শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন তাহসিনা আক্তার শাপলা, মিনহাজ উদ্দিন নয়ন, চয়ন, ইকবাল আহমদ রাজু, সুয়াইব, শাহীন আহমদ ফারজান।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্থানীয় ক্ষুদে নবীন, প্রবীণ অনেক শিল্পীরা গান গেয়ে দর্শকদের মুগ্ধ করে মাতিয়ে রাখেন। তারা হলেন সৌদি আরব প্রবাসী মানিক উদ্দিন, রিপন চন্দ বাবু, ইমদাদুর রহমান ইমদাদ ও আতিকুর রহমান সামাদ। বৈশাখ নিয়ে ছড়া ও কবিতা পাঠ করেন রাবিয়া আক্তার রুবী, তানিয়া আক্তার, আব্দুস সামাদ, ফেরদৌস বেগম, আতিকুর রাহমান, জামাল আহমদ, শাপল বেগম, আশিকুর রহমান প্রমুখ। গানে মুগ্ধ হয়ে প্রধান অতিথি হিসাবে আমি শিল্পীদেরকে বিশেষ পুরস্কৃত করি।
মুহুরমুহুর করতালীর মধ্য দিয়ে সেদিন প্রধান অতিথির বক্তব্যে সকলকে বাংলা নব বর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছিলাম মাইক হাতে নিয়ে। তুলে ধরেছিলাম পহেলা বৈশাখের ইতিহাস ও ভূমিকার কথা। ঐতিহ্যবাহী আমাদের এই প্রতিষ্টানে প্রথম বারের মতো বর্ষবরণ উৎসব উদযাপিত হওয়ায় দিনটি স্মৃতি হয়ে থাকবে। এর আগে গাছবাড়ীতে এভাবে কখনো পহেলা বৈশাখ অথবা বর্ষবরণ উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা সম্বব হয়নি।
গাছবাড়ী মডার্ণ একাডেমীর সকল সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধিতে শিক্ষার হার ও মান এখন আগের চেয়ে অনেক বেশী। এলাকার যোগাযোগ ব্যাবস্থার সার্বিক উন্নতি হয়েছে। অবকাঠামোর অগ্রগতি হয়েছে। অর্থনৈতিক চাকা আরও শক্তিশালী হয়েছে। আরোও এগিয়ে যাক গাছবাড়ী মডার্ণ একাডেমী সহ এলাকার শিক্ষা বিস্তারে গৃহিত সকল কার্যক্রম। কাংখিত উন্নতি, অগ্রগতি, সমৃদ্ধিতে পূর্ণাঙ্গতা অর্জন করুক প্রিয় জন্মভুমি।
বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস (কভিড ১৯)- এর কঠিন পরিস্থিতিতে আসুন আমরা সবাই যেদেশেই থাকি, “স্বাস্থ্য বিধি এবং সরকারি নির্দেশনা মেনে চলি।” এটাই কামনা করছি।

লেখক:
দেলওয়ার হোসেন সেলিম
প্রতিষ্ঠাতা সিনিয়র সহ সভাপতি, কানাইঘাট প্রেসক্লাব ;
সহ সভাপতি ফ্রান্স বাংলা প্রেসক্লাব।
সম্পাদক, আদর্শবার্তা।