খাগড়াছড়িতে প্রাণহীন পর্যটন কেন্দ্রগুলো, কোটি কোটি টাকার ক্ষতি

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাতে ঈদের আগে-পরেও প্রাণহীন ছিল জেলার ৯টি উপজেলা পর্যটন কেন্দ্রগুলো। করোনায় চরম বিপর্যস্ত জেলার পর্যটন শিল্প। করোনার প্রাদুর্ভাবে গত দুই দশকে গড়ে ওঠা পাহাড়ের পর্যটন সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে। প্রতি বছর ঈদ পরবর্তী দুই সপ্তাহ পর্যটন কেন্দ্রগুলো পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত থাকলেও এবারের ঈদের আগে-পরেও প্রাণহীন বিরাজ করছে। এতে গত পাঁচ মাসে প্রায় ৫০কোটি টাকার পরিমানে ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে পর্যটন খাতে।
করোনার প্রাদুর্ভাবে গেল পাঁচ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে খাগড়াছড়ির সব পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র। এতে চরম অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল পেশাজীবীদের।

এক সময় পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত আলুটিলা রহস্যময় সুড়ঙ্গ, রিছাং ঝর্ণা, জেলা পরিষদ পার্কসহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে এখন সুনসান নীরবতা। পর্যটকশূন্য হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে এ খাতের আর্থিক ক্ষতি। কাজ হারিয়ে অনেকে বেকার সময় কাটাচ্ছে। লাখ লাখ বিনোয়োগের পরও আয় শূন্য হোটেল রিসোর্ট ও রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা। ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কিত হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট ব্যবসায়ীরা। এই অবস্থা চলতে থাকলে বিপাকে পড়বে পর্যটন খাত সংশ্লিষ্টরা।

খাগড়াছড়ির আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের একাধিক ব্যাবসায়ী জানান, করোনার পর থেকে এখানে কোনো পর্যটক নেই। দোকানে বেচাকেনা বন্ধ। স্টাফদের বসিয়ে বসিয়ে বেতন দিতে হচ্ছে। ফলে সংসার চালানো খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। গেল পাঁচ মাসে ৭-৮লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

খাগড়াছড়ির গাইরিং হোটেলের ব্যাবস্থাপক নয়ন ত্রিপুরা জানান, গত পাঁচ মাস ধরে এখানে কোনো পর্যটক আসেনি। এ কারণে প্রতিমাসে ৩-৪লাখ টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে। এভাবে চললে আমরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ব। খাগড়াছড়িতে ছোট-বড় মিলে প্রায় ৫০টি হোটেল-মোটেল রয়েছে। ফলে পর্যটন খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রয়ি ৫০কোটি টাকা। এমনটাই দাবি খাগড়াছড়ির হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীদের।

এদিকে খাগড়াছড়িতে পর্যটক না আসায় বেকার হয়ে পড়েছে শত শত পরিবহন শ্রমিক। মার্চের পর থেকে খাগড়াছড়ি-সাজেক সড়কে পর্যটকবাহী যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

মাহেন্দ্র পিকআপ চালক প্রদীপ ত্রিপুরা জানান, বিগত সময়ে ঈদ মৌসুমে খাগড়াছড়িতে প্রচুর পর্যটকের সমাগম হত। প্রতিদিন অন্তত: দেড় শতাতিক গাড়ি সাজেকে যাতায়াত করত। কিন্তু এবার পর্যটক না আসায় আমারা বিপাকে পড়েছি।
খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেলের ইউনিট ব্যবস্থাপক একেএম রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘করোনায় সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত হয়েছে পর্যটন সেক্টর। গত পাঁচ মাসে প্রায় ৫০কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে পর্যটন খাতে। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও পর্যটন খাতে মানুষের আস্থা ফেরাতে সময় লাগবে। ফলে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির মুখে পড়বে লাভজনক পর্যটন খাত।
দেশে মহামারি করোনা সংক্রমণের কারণে খাগড়াছড়ির সব পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ রয়েছে জানিয়ে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস জানান, পর্যটন কেন্দ্রগুলো খোলার বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।