সৎ রাজনীতিবিদরা জীবিত অবস্থায় অবহেলিত কেন?

জাতীয় সংসদের ১৯তম অধিবেশনে সদ্যপ্রয়াত কয়েকজন রাজনীতিবিদের জীবন ও কর্ম নিয়ে প্রশংসায় সরব ছিল গোটা সংসদ। রোববার বিকালে জাতীয় সংসদে প্রয়াত মন্ত্রী ছায়েদুুল হক, এমপি গোলাম মোস্তাফা, মেয়র আনিসুল হক ও মেয়র মহিউদ্দিননের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রী-সংসদ সদস্যরা কথা বলেন। বিশেষ করে প্রয়াত মন্ত্রী ছায়েদুুল হক সর্ম্পকে কথা বলেন সবাই।

মৎস্য ও প্রাণী সম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হকের নেতৃত্বে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে, মৎস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে ৪র্থ স্থান অর্জন করেছে বলে প্রধানমন্ত্রী সংসদে জানান। জনপ্রিয় রাজনীতিবিদরা নির্বাচন করলে তারা সহজেই জয়ী হতে পারেন এবং অনেকসময় টাকা পয়সাও খরচ করতে হয় না বলে সংসদে জানান বক্তারা। ছায়েদুল হকের মৃত্যুর পরে তার হতদরিদ্র বাড়ি নিয়ে গণমাধ্যমে নানা প্রতিবেদন প্রকাশের পরে তাকে নিয়ে নানা আগ্রহ তৈরি হয়, যদিও ততদিনে তিনি সবকিছুর উর্ধ্বে।

সাম্প্রতিক আরেকটি বিষয় সামাজিক মাধ্যমে বেশ আলোচিত হয়েছে, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থেকে ১৯৯১ সালে নির্বাচিত এমপি মোহাম্মদ ইউসুফ প্রায় দীর্ঘ ১৬/১৭ বছর একেবারে অসহায় জীবনযাপন করতে করতে বর্তমানে মারাত্মক অসুস্থ। তার পরিবারের আর্থিক অবস্থাও চরম খারাপ। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তার চিকিৎসা হচ্ছে। হয়তো সামাজিক মাধ্যমে আলোচনা না হলে নীরবে ঝরে যেতো ওই নির্বাচিত সাবেক সাংসদ। বর্তমান সময়ে একজন এমপি-মন্ত্রী বা পাড়া-মহল্লার রাজনীতিবিদদের সঙ্গে মোহাম্মদ ইউসুফ বা ছায়েদুুল হকদের অবস্থা তুলনা করে হিসেব মেলানো কঠিন হয়ে পড়বে। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া মন্ত্রী-সাংসদদের আয়-ব্যয় ও জীবনযাপন এখন বেশ জাকজমক, তাছাড়া গণমনে তাদের আয়-সম্পদ নিয়ে নানা নেতিবাচক ধারণাও প্রতিষ্ঠিত।

সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচনে অংশ নেবার অন্যতম যোগ্যতা হিসেবে ‘পয়সাওয়ালা ব্যক্তি’ হওয়াটা প্রচলিত হয়ে পড়েছে। যুগ যুগ ধরে নিবেদিত প্রাণ রাজনীতিবিদরা বিভিন্ন দলের মধ্যে কোণঠাসা, আর নতুন প্রজন্মের মধ্যে রয়েছে রাজনীতিতে আসার বিষয়ে চরম অনীহা। কেনো এরকম হচ্ছে, তা ভেবে দেখা খুবই জরুরি।

দেশের স্বার্থে, প্রজন্মের স্বার্থে নিবেদিত প্রাণ রাজনীতিবিদদের অবদান ও জীবন সর্ম্পকে আরও আলোচনা হওয়া এবং জীবিত অবস্থায় তাদের প্রতি আরও বেশি মনোযোগ প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। ছায়েদুুল হক-মোহাম্মদ ইউসুফের মতো নিবেদিত প্রাণ ও সৎ রাজনীতিবিদদের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে প্রজন্মের নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাক।