হরতাল-অবরোধে কী পেলো বিএনপি?
সরকার পতনের একদফা আদায়ে ‘কঠোর’ কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী সফলতা পাওয়া যায়নি বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা। তবে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া দলটি আশা ছাড়েনি। বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করে, ঢাকাকে জাগিয়ে তুলতে পারলে সাফল্য আসতে খুব বেশি সময় লাগবে না।
বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, ঢাকাকে মাথায় রেখে নতুন কর্মসূচি ভাবা হচ্ছে। এ জন্য গত রবিবার রাতে ঢাকা মহানগর নেতাদের সঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের একজন প্রতিনিধি বৈঠক করেন। গত ২৮ অক্টোবর পণ্ড হয়ে যায় বিএনপির মহাসমাবেশ। এর পর এক মাসের কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে মনে হয়েছে- বিএনপি এখন আরও বেশি চাপে পড়েছে। যদিও দলের পক্ষে ভিন্ন ব্যাখ্যাও রয়েছে।
বিএনপির কোনো কোনো নেতা মনে করেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা যেভাবে আক্রমণ চালায়, তাতে ‘গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার’ আন্দোলনে নেতাকর্মীদের পক্ষে পেরে ওঠা সম্ভব হয়নি।
বিএনপির ভাষ্য- ২৮ অক্টোবরের পর থেকে দলের মহাসচিবসহ গুরুত্বপূর্ণ ২০ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সারাদেশে গ্রেপ্তার হওয়া নেতাকর্মীর সংখ্যা ১৭ হাজারের বেশি। মামলা হয়েছে অন্তত ৪৩৫টি। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলায় নিহত হয়েছেন ১৬ নেতাকর্মী। আহত নেতাকর্মীর সংখ্যা চার হাজারের বেশি। তবে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মনে করেন, এমন ভয়াবহ অবস্থার মধ্যেও নেতাকর্মীরা সাহসী ভূমিকা রেখেছে।
বিএনপির সহপ্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম মনে করেন, নির্বিচারে গ্রেপ্তার করা হলেও গত এক মাস ধরে রাজপথে নেতাকর্মীরা সফলভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। ক্ষমতাসীনদের ধারণা ছিল- যেভাবে নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন চলছে, তাতে করে সাত দিনও রাজপথে টিকতে পারবে না বিএনপি। সেখানে এক মাস সফলভাবে আন্দোলন করছে।
আন্দোলন জোরালো করতে শুধু হরতাল-অবরোধ নয়, বিকল্প কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে চায় বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের ভয়াবহতা দেশ-বিদেশে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে আজ বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, মানববন্ধনে নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পরিবারের সদস্যরা অংশগ্রহণ করবেন। প্রধান অতিথি থাকবেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান।
একদফা আদায়ে ডাকা ৪৮ ঘণ্টা অবরোধের শেষ দিনে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেছেন বিএনপি এবং অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সকালে মালিবাগসহ চার স্থানে বিক্ষোভ মিছিল করে স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ। এতে নেতৃত্ব দেন সংগঠনের সভাপতি জহির উদ্দিন তুহিন ও সাধারণ সম্পাদক সাদ মোর্শেদ পাপ্পা শিকদার।
দুপুরে প্রেসক্লাব ও পল্টন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে গণতন্ত্র মঞ্চ। এতে উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, ভাসানী অনুসারী পরিষদের হাবিবুর রহমান রিজু ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের ফরিদুল হক।
দুপুরে প্রেসক্লাব, কাকরাইল ও বিজয়নগর এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট। বিজয়নগরে বিক্ষোভ মিছিল করে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। মিছিলে নেতৃত্ব দেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. নেয়ামূল বশির। একই এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন ১২-দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা। যুগপৎ আন্দোলনে না থাকলেও কর্মসূচিতে সমর্থন জানিয়ে বিজয়-৭১ চত্বরে কর্মসূচি পালন করে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)।
সকালে পল্লবী, মিরপুর, বাড্ডা, তেজগাঁও, উত্তরা, আদাবর, মতিঝিল, শনিরআখড়া, মুগদা, লালবাগ ও ডেমরায় বিক্ষোভ মিছিল করেন ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ জামায়াতের নেতাকর্মীরা। ডেমরায় মিছিলে পুলিশ টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে বলে অভিযোগ করেন দলটির নেতারা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। আদাবরে মিছিল থেকে দুই কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন