হাইকোর্ট কেন রাখবেন, উঠিয়ে দেন : প্রধান বিচারপতি
নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত নতুন বিধিমালার যে খসড়া আইন মন্ত্রণালয় দিয়েছে, তা সুপ্রিম কোর্টের সুপারিশ অনুসারে হয়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।
রোববার এ বিষয়ে শুনানির সময় রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এখানে (খসড়ায়) বলা হলো, কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তিনি মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত হবেন। তাহলে হাইকোর্টের কিছু থাকল না; সব মন্ত্রণালয়ের। ১৮৬১ সালে কলকাতা হাইকোর্ট হয়েছে। তখন থেকে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকরা নিম্ন আদালত পরিদর্শন করেন। এ ব্যবস্থা চলে আসছে। হাইকোর্ট কেন রাখবেন? হাইকোর্ট উঠিয়ে দেন।’
আদালত আরো বলেন, ‘আমরা খুব খুশি হয়েছিলাম আইনমন্ত্রী এসেছেন, খসড়া দিয়ে গেছেন। তখন খুলে দেখিনি। প্রেসে বক্তব্য দিয়েছেন, হয়ে গেছে। কিন্তু কী রকম হলো? এটি তার সম্পূর্ণ উল্টো। এভাবে চলতে পারে না।’
সকালে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ বিষয়ে শুনানিকালে এসব কথা বলেন। একই সঙ্গে এ বিষয়ে আদেশের জন্য পরবর্তী এই দিন ধার্য করেন।
কয়েক মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে সময় নেওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রধান বিচারপতির কাছে এ-সংক্রান্ত খসড়া হস্তান্তর করেন। আজ তার ওপর শুনানি হয়।
শুনানিতে আপিল বিভাগ অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলেন, ‘(খসড়ায় বলা হয়েছে) সরকার নির্ধারিত তারিখে বিধিমালার গেজেট কার্যকর হবে। অথচ মাসদার হোসেন মামলার রায়ে আদালত বলেছেন, রায় অনুযায়ী গেজেট হবে। আমরা যেটা বলেছি, তার উল্টোটা খসড়া করে পাঠিয়েছেন। রায়ের ১৬ বছরে এটা হয়নি। আর সরকার নির্ধারিত তারিখে গেজেট হলে ১৬০০ বছরেও হবে না।’
খসড়ায় ‘উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ’ শব্দ নিয়েও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আপিল বিভাগ। আদালত বলেন, ‘উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বলতে কী বোঝায়, প্রত্যেক আইনে সংজ্ঞায়িত করা আছে। তা আমি আইনমন্ত্রীকে দেখিয়েছি। কর্তৃপক্ষ বলতে বিচার বিভাগের জন্য রাষ্ট্রপতিকে রাখলেন। তাহলে তো আইন মন্ত্রণালয়ই থাকছে। এ বিষয়ে সমাধানে না গেলে চলবে না।’
এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে বলেন, ‘আমি বিদেশ যাওয়ার সময় মন্ত্রণালয় জিও দেয়।’
জবাবে আদালত বলেন, ‘আপনি তাহলে অ্যাভয়েড করছেন।’
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘না।’
তখন আদালত বলেন, ‘উনি (আইনমন্ত্রী) এখান থেকে যাওয়ার পর কমপ্লিটটি ইউটার্ন দেখলাম।’
বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বাসার আহ্বান জানিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, রোববার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দুপুর ২টা থেকে আমি এবং আপিল বিভাগের বিচারপতিরা রাত ১২টা পর্যন্ত আপনাদের (সরকার) সময় দেবো। বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ বিধিমালা নিয়ে আর রশি টানাটানি নয়। আইনমন্ত্রীসহ সরকারের যেকোনো এক্সপার্ট আসবেন, বৈঠকে বসব।’
পরে আদালত আদেশের জন্য ৬ আগস্ট পরবর্তী দিন নির্ধারণ করেন।
সর্বশেষ গত ২৩ জুলাই নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ করতে সরকারকে আরো এক সপ্তাহ সময় দেন আপিল বিভাগ।
নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়ন না করায় আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবকে ১২ ডিসেম্বর তলবও করেন আপিল বিভাগ। গত বছরের ৭ নভেম্বর বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিধিমালা ২৪ নভেম্বরের মধ্যে গেজেট আকারে প্রণয়ন করতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ।
১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেন মামলায় ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেওয়া হয়। ওই রায়ের আলোকে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন