হেফাজত নিয়ে বিরূপ মন্তব্য নয় : নেতাদের শেখ হাসিনা

কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রীক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা।

শুক্রবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী কমিটি, উপদেষ্টা পরিষদ এবং পার্লামেন্টারি পার্টির যৌথ সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

নেতারা জানান, শেখ হাসিনা বৈঠকে বলেছেন, কওমি আলেম ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগ সম্পর্কে যে ভুল ধারণা ছিল, সেটি অনেক কষ্টে দূর হয়েছে। তবে ভুল বুঝাবুঝির অবসান হলেও সম্পর্কে আবার ফাটল ধরাতে তৎপরতা থাকবে। আর তারা যেন সুযোগ নিতে না পারে, সে জন্যই নেতাদেরকে মন্তব্যের ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে।

বৈঠকে উপস্থিত নেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী, হেফাজতে ইসলাম কোনো রাজনৈতিক দল নয়, এটি একটি ধর্মীয় সংগঠন। হেফাজতে ইসলামকে ২০১৩ সালে ভুল বোঝানো হয়েছিল। এখন তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছে। হেফাজতে ইসলাম জামায়াত বিরোধী। জামায়াত ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করলে হেফাজতে ইসলাম তা করে না।

নেতারা জানান, হেফাজতে ইসলাম যেহেতু জামায়াতবিরোধী এবং কোনো রাজনৈতিক দল নয় সেহেতু তাদের বিষয়ে বিরূপ মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকবেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকায় হেফাজতে ইসলামীর কর্মীদের অবস্থানকে কেন্দ্র হুলস্থুল হয়। শাপলা চত্বরে অবস্থান নেয়া নেতা-কর্মীদেরকে উচ্ছেদ করতে রাতের অভিযানে হাজার হাজার মানুষকে হত্যার গুজব ছড়ায়। কিন্তু পরে কারও নাম দিতে পারেননি হেফাজত নেতারা। আর এখন গণহত্যার বিষয়টি আর তোলেন না সংগঠনের নেতারা।

ওই অভিযানের পর ২০১৩ সালের পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হেফাজতে ইসলামীর কর্মীরা আবেগী বক্তব্য দিয়ে আওয়ামী লীগের পরাজয়ে ভূমিকা রাখেন বলে ধারণা করা হয়। তবে পরে ধীরে ধীরে সরকারের সঙ্গে তাদের দূরত্ব ঘুঁচে।

এর মধ্যে চলতি বছর কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ সনদ দাওরায়ে হাদিসকে ইসলামিক স্টাডিজে মাস্টার্সের সমমান দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। হেফাজতের সর্বোচ্চ নেতা আল্লামা আহমেদ শাহ শফীই কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের প্রধান হয়েছেন। আর গণভবনেও তিনি আলেম ওলামাদেরকে নিয়ে গেছেন। আগামী ৫ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শোকরানা সমাবেশের নামে প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনাও দেবেন তারা।

হেফাজতের থাকা রাজনৈতিক সংগঠন ইসলামী ঐক্যজোট বিএনপি-জামায়াত জোটের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করেছে ২০১৬ সালের শুরুতে। এখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে তারা ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের দুই পক্ষে সমঝোতা হতে পারে বলেও আলোচনা রয়েছে।

আওয়ামী লীগ সম্পর্কে যেমন হেফাজত নেতারা আর বিরূপ মন্তব্য করছেন না, তেমনি হেফাজতের সমালোচনাও আর হচ্ছে না ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন বলেন, ‘কওমি মাদ্রাসাকে বর্তমান সরকার স্বীকৃতি দিয়েছে। মাদ্রাসা সংশ্লিষ্টরা বর্তমান সরকারের উন্নয়ন পেয়েছে। তারা এখন মূল জনগোষ্ঠীর হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।’

দলের বৈঠকে কওমি মাদ্রাসার সদনের স্বীকৃতির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কওমি মাদ্রাসার ছাত্রদের কোনো ঠিকানা ছিল না। আমরা তাদেরকে স্বীকৃতি দিয়েছি। তাদের কর্মসংস্থান যেনো হয়, সে ব্যবস্থা আমরা করেছি। আওয়ামী লীগ সম্পর্কে কওমি আলেমদের একটা ভুল ধারণা ছিল। আমরা তাদের সেই ভুল ধারণা ভেঙে দিতে পেরেছি। তারা এখন আওয়ামী লীগের সুনাম বলে। আমার বিশ্বাস আগামীতে কওমি মাদ্রাসার আলেমদের ভোট আমরা পাব।’

‘কিন্তু নির্বাচনের পূর্বে অনেকেই চেষ্টা করবে, তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্কের দূরত্ব তৈরির চেষ্টা করবে। ১৪ দলের কোনো নেতার কোনো বক্তব্যে যেনো এমন কিছু বলা না হয়, যাতে করে কওমি আলেমদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কে ফাটল ধরে। এজন্য সবাইকেই সতর্ক থাকতে হবে।’

নেতারা জানান, আগামী নির্বাচন কঠিন হবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা সবাইকে প্রস্তুতি নিয়ে বলেছেন। বলেছেন, নির্বাচনে দল থেকে যাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে, তার পক্ষে সবাইকে কাজ করতে হবে। যদি কেউ দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়, তাহলে পূর্বে ছাড় পেলেও এবার তাকে কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না। আওয়ামী লীগ থেকে আজীবনের জন্য তাকে বহিস্কার করা হবে।

সব নির্বাচনী আসনের দলীয় সংসদ সদস্য ও মনোনয়ন প্রার্থীর সকল জরিপ হাতে এসেছে বলে বৈঠকে জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি। জানান, তিনি ২০ টির মতো গোয়েন্দা ও দলীয় জরিপ প্রতিবেদন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছেন। এর আগে ৬০ থেকে ৭০ টির মতো প্রতিবেদন দেখছেন বলেও উল্লেখ করেন। যেসব মনোনয়ন প্রার্থী নিজেকে জাহির করতে দলীয় সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন, তাদের তথ্য তার কাছে আছে বলে জানান শেখ হাসিনা। জানিয়েছেন, এ ধরনের কাউকেই মনোনয়ন না দেয়ার বিষয়ে কঠোর মনোভাব দেখিয়েছেন তিনি।

সভার এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বাম গণতান্ত্রিক জোট, জাকের পার্টি ও ইসলামিক গণতান্ত্রিক জোট আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করতে চায় বলে তিনটি আবেদনের কথা তুলে ধরেন। তবে এ বিষয়ে দলীয় প্রধান সভায় কোনো সিদ্ধান্ত দেননি বলে জানান কেউ কেউ।

সভায় আগামী নির্বাচনে প্রথমে ৩০০ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। এরপর জোটের শরিকসহ অন্যান্যদের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত আসন বন্টন করার কথা জানান শেখ হাসিনা।

যৌথ সভায় জাতীয় নির্বাচন পরিচালনার জন্য ৩৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির প্রধান আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া নির্বাচন ইস্যুতে আরও ১৫টি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। নির্বাচনের জন্য গঠিত ৩৩ সদস্যের প্রধান কমিটি ওই উপ-কমিটিগুলোর কর্মকাণ্ড তদারকি করবে।ঢাকা টাইমসের সৌজন্যে।