হেফাজত নেতা ফয়েজীর বিরুদ্ধে একাধিক নারীর সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, একজনের ধর্ষণ মামলা: পুলিশ

এবার হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান ফয়েজীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেছেন ভুক্তভোগী এক নারী।

শুক্রবারে (৭ মে) মধ্যরাতে হাটহাজারী থানায় এ মামলা দায়ের হয়। বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ওই নারীর সঙ্গে জাকারিয়া নোমান ফয়েজীর পরিচয় হয়। এরপর তিনি ওই নারীর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ান। একপর্যায়ে তাকে বিয়ের আশ্বাসে হাটহাজারীর ভাড়া বাসায় নিয়ে আসেন নোমান ফয়েজী। ওই বাসায় ফয়েজী তাকে একবছর রেখে ধর্ষণ করেছেন। এরপর চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন হোটেলেও তিনি ওই নারীকে একাধিকবার ধর্ষণ করেছেন। ফয়েজীর প্রতারণা বুঝতে পেরে ভুক্তভোগী নারী শুক্রবার রাতে হাটহাজারী থানায় মামলা দায়ের করেন।

এদিকে বৃহস্পতিবার (০৬ মে) দুপুরে হেফাজতে নেতা নোমান ফয়েজীর একাধিক নারীর সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের প্রমাণ পায় পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি একাধিক নারীর সঙ্গে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন। এজন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘মানুষ মাত্রই ভুল করে।’ এছাড়া জাকারিয়া নোমান দেশজুড়ে হেফাজতের তাণ্ডবের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড ছিলেন বলেও দাবি পুলিশের।

নগরের ২ নম্বর গেটে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক এসব তথ্য জানান।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক বলেন, ‘তিনি (জাকারিয়া নোমান) বিবাহিত। কিন্তু তার কাছ থেকে পাওয়া মোবাইল সেটের সূত্র ধরে আমরা জানতে পারি, তার একাধিক নারীর সঙ্গে বিবাহবর্হিভূত সম্পর্ক ছিল। এছাড়া জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিনি আমাদের কাছে স্বীকার করেছেন যে, একাধিক নারীর সঙ্গে তার বিবাহবর্হিভূত সম্পর্ক ছাড়াও বিবাহবর্হিভূত শারীরিক সম্পর্কও ছিল।

মোবাইলে ম্যাসেঞ্জারে একাধিক নারীর সঙ্গে ‘অনৈতিক’ কথোপথনের তথ্য আছে জানিয়ে পুলিশ সুপার আরও বলেন, বেশকিছু চ্যাটিং পেয়েছি, যাদের সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। আমাদের হাতে সেগুলো আছে। তদন্তের স্বার্থে আমরা সেগুলো এখন প্রকাশ করব না। ওই নারীদের সঙ্গে যে তার যোগাযোগ ছিল এবং অনৈতিক সম্পর্ক ছিল, সেগুলো এই চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে। তিনি নিজেও আমাদের কাছে স্বীকার করেছেন। পরবর্তীতে তদন্তের মাধ্যমে আরও তথ্য আমরা বের করব এবং মামলার তদন্তের সঙ্গে এগুলো সংযুক্ত করব।

দেশজুড়ে তাণ্ডবের মাস্টারমাইন্ড জাকারিয়া নোমান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামসহ দেশজুড়ে হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবের ঘটনার কমপক্ষে ১০ জন ‘মাস্টারমাইন্ড’ ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। এদের মধ্যে জাকারিয়া নোমান ফয়েজী একজন। দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির উদ্দেশে হেফাজত এই তাণ্ডব চালিয়েছে বলে দাবি পুলিশের।

এর আগে বুধবার (৫ মে) বিকেলে কক্সবাজারের চকরিয়া থেকে চট্টগ্রাম জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম তাকে গ্রেফতার করে। পরদিন বৃহস্পতিবার ফয়েজীকে তিন মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠায় পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।